শেষরাতে আচমকাই জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে গেল কলেজপড়ুয়ায় ঠাসা বাসটি। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে থাকা শিক্ষক কিছু বোঝার আগেই দেখলেন, বাসচালকের দিকে জলের বোতল এগিয়ে দিচ্ছেন টহলদার এক পুলিশকর্মী। অনুরোধের সুরে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘চোখেমুখে ভাল করে জল দিয়ে ঘুম তাড়িয়ে দিন।’
এটা এখনও ঘটেনি। তবে ঘটতে চলেছে শীঘ্রই। দুর্ঘটনা কমাতে আগামী রবিবার থেকে এমনই অভিনব পন্থা নিতে চলেছে রাজ্য পুলিশ। এই মর্মে ব্যবস্থা নিতে সব জেলার পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দিয়েছেন খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।
রাজ্য পুলিশের কর্তারা জানাচ্ছেন, শীত এলেই সপ্তাহান্তে রাতে কলকাতা থেকে জেলায় পিকনিকে যাওয়ার বা কলেজপড়ুয়াদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে যাওয়ার ধুম পড়ে যায়। কিন্তু রাতভর গাড়ি চালানোর ধকল নিতে পারেন না বহু চালক। ভোরের দিকে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে। তাতে আশঙ্কা থাকে দুর্ঘটনার। কুয়াশার জন্যও অনেক সময়ে দৃশ্যমানতা কমে যায়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে তাতেও। সেই জন্য জেলা পুলিশকে সতর্ক হতে নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি। প্রত্যেক জেলা পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারকে তিনি বলেছেন, স্কুল ও কলেজের কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে এটা জানিয়ে দিতে হবে।
ডিজি-র নির্দেশে বলা হয়েছে, পুলিশকে ‘নাকা’ (সড়কে ব্যারিকেড করে যানবাহন তল্লাশি) তৈরি করে গাড়ি এবং যাত্রীদের সতর্ক করতে হবে। রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের সদর দফতর থেকে স্টিকার, ৫০টি করে সোলার ব্লিংকার এবং গার্ডরেল নিয়ে গিয়ে তৈরি করতে হবে নাকা। প্রতিটি নাকায় এক জন অফিসার থাকবেন। তাঁদের নাম, ফোন নম্বর রাখতে হবে।
রবিবার থেকেই নাকার কাজ শুরু করতে বলেছেন ডিজি। নাকার পুলিশকর্মীদের কী করতে হবে, তা-ও জানানো হয়েছে নির্দেশিকায়। ভোরের দিকে গাড়িচালকদের ঘুম পেয়ে যায়। নাকার পুলিশকর্মীরা তাই গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন। জল দেবেন গাড়ির চালককে। হুগলি জেলা পুলিশ ইতিমধ্যেই এ ভাবে কাজ করে সাফল্য পেয়েছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, গত রবিবার ভোর ৫টায় পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে একটি বাসের সংঘর্ষ হয় বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। একটি কলেজের শিক্ষক-পড়ুয়াদের নিয়ে বাসটি পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি থেকে আসছিল। শিক্ষামূলক ভ্রমণে যাচ্ছিলেন তাঁরা। ভোরে সেই বাসের দুর্ঘটনার খবর জানার পরেই জেলায় জেলায় এমন নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন ডিজি।
রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, বিপুল প্রচার এবং সতর্কতা অবলম্বনের ফলে গত বছরের চেয়ে এ বার রাজ্যে দুর্ঘটনা কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এ কথা ঘোষণা করেছেন। এর প্রশংসা করেছে সুপ্রিম কোর্টও। ‘‘দুর্ঘটনা আরও কমিয়ে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেই জন্যই আগেভাগে সতর্ক হওয়ার নীতি নেওয়া হয়েছে,’’ বলেন ওই কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy