রাতের অন্ধকারে বিজেপির কার্যালয়ে পুলিশের ‘অভিযান’ ঘিরে শোরগোল বাঁকুড়ায়। পুলিশকে ‘চোর-ডাকাত’ বলে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার সকাল থেকে এ নিয়ে শোরগোল বাঁকুড়া জেলায়।
বিজেপির অভিযোগ, শনিবার গভীর রাতে তাদের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে পুলিশ। কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। রাত ২টো নাগাদ স্থানীয় সূত্রে ওই খবর পেয়ে দলের কর্মীরা কার্যালয়ে ছুটে যান। সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে অনধিকার প্রবেশ এবং ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। ওই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার বাঁকুড়া সদর থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে পদ্মশিবির। পুলিশকে ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলে কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘রাতের বেলা চোর-ডাকাতের মতো বিজেপির কার্যালয়ে ঢুকেছিল পুলিশ!’’ যদিও ভাঙচুরের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে বাঁকুড়ার খাতড়ায় রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডির স্বামী তুহিন মান্ডির উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজে আইন মেনেই ওই কার্যালয়ে পৌঁছেছিল পুলিশ।
শুক্রবার রাতে জ্যোৎস্নার স্বামীর উপর হামলার অভিযোগে প্রথমে বিজেপির পাঁচ কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। মন্ত্রীর দাবি, তাঁর স্বামীর পিঠে লাঠির বাড়ি মারা হয়। হাতে-পায়েও আঘাত রয়েছে। অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বিনা প্ররোচনায় হামলা করেছে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের খোঁজে বিজেপির কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিজেপি সূত্রে খবর, শনিবার রাতে দলীয় কাজকর্ম সেরে বাঁকুড়া শহরের নতুনগঞ্জে দলীয় কার্যালয়ের মূল গেটে তালা লাগিয়ে নেতা ও কর্মীরা বাড়ি চলে যান। রাত ২টো নাগাদ কয়েক জন কর্মী খবর পান, কার্যালয়ে পুলিশ ঢুকেছে। এবং জিনিসপত্র ভাঙচুর হচ্ছে। তড়িঘড়ি তাঁরা পার্টি অফিসে ছোটেন। রাতেই কার্যালয়ে হাজির হন বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির স্থানীয় কাউন্সিলর অনন্যা রায় চক্রবর্তীরা। বেশ কিছু ক্ষণ ধরে বাগ্বিতণ্ডা চলার পর পুলিশ ওই দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে রবিবার দুপুরে বাঁকুড়া সদর থানা ঘেরাওয়ের ডাক দেন বিজেপি জেলা নেতৃত্ব। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রাজ্যের পুলিশ কার্যত দলদাসে পরিণত হয়েছে। খাতড়ার কোনও একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের বিশাল বাহিনী কাউকে কিছু না জানিয়ে গভীর রাতে আমাদের দলীয় কার্যালয়ের তালা ভেঙে ঢোকে। কার্যালয়ের ভেতরের একটি দরজা শাবল দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করে। আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। বিভিন্ন নথিপত্র এলোমেলো করে দিয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করল, তৃণমূলের কথায় বিজেপিকর্মীদের ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই এই কাজ করেছে পুলিশ। আমরা এ জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।’’
আরও পড়ুন:
সমাজমাধ্যমে দীর্ঘ পোস্টে শুভেন্দু লেখেন, ‘‘তৃণমূলের কুখ্যাত, অসভ্য নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের এই সাহস কোথায় থাকে? এই একই পুলিশবাহিনী তৃণমূলের গুন্ডাদের এবং তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মুখোমুখি হতে ভয় পায়। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে অনুব্রত বোলপুরের ইনস্পেক্টর-ইন-চার্জকে অশ্লীল গালাগালি এবং হুমকি দিচ্ছেন। তখন মেরুদণ্ডহীন পুলিশ কী করেছে? কিছুই না।’’
অন্য দিকে, বিজেপির কার্যালয়ে ‘অনধিকার প্রবেশ’ এবং ভাঙচুরের অভিযোগ নিয়ে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘খাতড়ায় তুহিন মান্ডির উপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় বেশ কয়েক জন অভিযুক্ত বাঁকুড়ার বিজেপি কার্যালয়ে আত্মগোপন করে আছেন, এমন খবর আমাদের কাছে ছিল। আমরা তাঁদের গ্রেফতার করতে সেখানে যাই। দলীয় কার্যালয়ের দরজায় তালা দেওয়া ছিল। তালা ভেঙে পুলিশ ভিতরে ঢোকে। কিন্তু কোনও আসবাব ভাঙচুর করা হয়নি। ওই সময়কার ভিডিয়োগ্রাফি রয়েছে। তবে ওই সময় বেশ কিছু লোক সেখানে জমায়েত হন এবং পুলিশের কাজে বাধা দেন। আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করেছি।’’