Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

সুব্রতর ঘরে ধর্নায় বসবেন শোভনদেব

ট্রেড ইউনিয়ন করেছেন দীর্ঘদিন। মন্ত্রী হয়েও বুঝি আন্দোলন-বিক্ষোভের অভ্যেস যাচ্ছে না তাঁর! শরীর-মনে এখনও সেই আন্দোলনের উন্মাদনা! অনুগামীদের দাবি নিয়ে এ বার তিনি এক সতীর্থ মন্ত্রীর ঘরে গিয়ে ধর্নায় বসতে চান। টানা সাত দিন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৮
Share: Save:

ট্রেড ইউনিয়ন করেছেন দীর্ঘদিন। মন্ত্রী হয়েও বুঝি আন্দোলন-বিক্ষোভের অভ্যেস যাচ্ছে না তাঁর! শরীর-মনে এখনও সেই আন্দোলনের উন্মাদনা! অনুগামীদের দাবি নিয়ে এ বার তিনি এক সতীর্থ মন্ত্রীর ঘরে গিয়ে ধর্নায় বসতে চান। টানা সাত দিন।

Advertisement

যাঁর ঘরে গিয়ে ধর্না দিতে চান মন্ত্রীমশাই, তিনিও এক সময়ে ছিলেন শ্রমিক আন্দোলনের জঙ্গি নেতা। সতীর্থের ধর্না দেওয়ার কথা শুনে প্রবীণ ওই মন্ত্রীর হাহাকার, ‘‘কেন বাবা, আমার মতো গরিবকে নিয়ে টানাটানি?’’

প্রথম জন, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। দ্বিতীয় জন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

দু’জনেই এক সময়ে ছিলেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র পদাধিকারী। এখন তাঁরা শ্রমিক সংগঠনটির কোনও পদে নেই। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েতে কর আদায়কারীদের মাইনে বাড়ানোর আন্দোলনের পুরোভাগে রয়েছেন শোভনদেববাবু। অতীতে সুব্রতবাবু কলকাতা পুরসভার মেয়র থাকার সময়ে তিনি ছিলেন সেখানকার কর্মী সংগঠনের নেতা। সে সময় দু’জনের ‘সম্পর্ক’ কতটা ‘মধুর’ ছিল তা সংগঠনের অনেকেই জানেন। ফলে, সুব্রতবাবুর ঘরে গিয়ে শোভনদেবদের ধর্নার হুমকিতে শাসক দলের ভিতরে-বাইরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

Advertisement

শনিবার শোভনদেববাবুর নেতৃত্বাধীন ‘পশ্চিমবঙ্গ গ্রাম পঞ্চায়েত কর আদায়কারী সমিতি’র দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলন হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে। সেখানে দাবি ওঠে, পঞ্চায়েতে কর আদায়কারীদের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম বেতন দিতে হবে। আইএনটিটিইউসির সর্বভারতীয় সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কর আদায়কারীরা মাসে ৬০০ টাকা সাম্মানিক পান। ৬ হাজার টাকা কর আদায় করতে পারলে ৬% কমিশন জোটে তার সঙ্গে। সব মিলিয়ে হাজার টাকাও রোজগার হয় না মাসে। এক ধাপ এগিয়ে শোভনদেব বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই বলেছিলেন, সরকারের কাজ যাঁরা করেন তাঁদের ন্যূনতম বেতন মাসিক ১০ হাজারের নীচে হওয়া উচিত নয়।’’ সংগঠনের এক শীর্ষ নেতা সন্তোষ মজুমদার জানান, রাজ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর আদায়কারী আছেন। এঁদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার তাঁদের সংগঠনের সদস্য। তাঁদের দাবি, কর আদায়কারীদের দৈনিক ২৭৮ টাকা মজুরি দিতে হবে।

সম্মেলনটির উদ্বোধক ছিলেন শোভনদেববাবু। প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হলেও সুব্রতবাবু যাননি। জানিয়েছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি’ একটি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারেননি। শোভনদেববাবু এ দিন সভায় যান ‘মমতা-ঘনিষ্ঠ’ শ্রমিক নেতা তথা বিধায়ক তমোনাশ ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘সুব্রত মুখার্জি আমাদের বন্ধু ঠিকই। তিনি শ্রমিক আন্দোলনের নেতাও বটে। কিন্তু দাবি আদায়ের জন্য তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করতেই হবে।’’ এর পরেই ধাপে ধাপে সুর চড়তে থাকে তাঁর। প্রথমে হুমকি দেন, প্রদীপবাবু, তমোনাশবাবুদের নিয়ে দরকারে সাত দিন ধরে সুব্রতবাবুর ঘরে অবস্থান করবেন। দরকার হলে তাঁর সংগঠনের নেতারা সুব্রতবাবুর ঘরের সামনে অনশনেও বসতে পারেন। শোভনদেববাবুর পরের ঘোষণা, ‘‘আমি জানি, একা সুব্রতবাবু কিছু করতে পারবেন না। সুব্রতবাবু কর আদায়কারীদের ‘সাম্মানিক’ বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদন করলেও, তা কার্যকর করবে অর্থ দফতর। প্রয়োজনে আমরা সুব্রতবাবুকে নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে যাব।’’

সব শুনে সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘আরে আমি তো চেষ্টা করছি। ওঁরা তো খুব সামান্যই টাকা পান। কিন্তু আমার ক্ষমতা তো কম! ওঁরা তো সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রীর কাছেই যেতে পারেন!’’ তাতেও সংগঠনের এক নাছোড় নেতার মন্তব্য, ‘‘আগে তো দাদার কাছে যাই, তার পর দিদি তো আছেনই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.