Advertisement
E-Paper

এজেন্টদের গালি শুনে চুপসে গেলেন প্রমথ

চারপাশ থেকে উড়ে আসছিল বাছাই করা গালিগালাজ। যাঁরা মুখখারাপ করেন না, গলার শিরা ফুলে উঠছিল তাঁদেরও “চোর! জোচ্চোর! চিটিংবাজ! আমাদের সব টাকা মেরে দিয়েছে। ওর কড়া শাস্তি চাই।” সাদা হাফশার্ট পরা অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তা তখন কোনও মতে প্রিজন ভ্যানে উঠতে পারলে বাঁচেন! পুলিশই তখন যেন ত্রাতা মধুসূদন! কলকাতা থেকে ধৃত এমপিএস-কর্ণধার প্রমথনাথ মান্না এবং অন্যতম ডিরেক্টর প্রদীপ চন্দ্রকে পুলিশ শনিবার বাঁকুড়ায় আনতেই ফেটে পড়ে জনরোষ।

দেবব্রত দাস ও অভিজিৎ সিংহ

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০১

চারপাশ থেকে উড়ে আসছিল বাছাই করা গালিগালাজ।

যাঁরা মুখখারাপ করেন না, গলার শিরা ফুলে উঠছিল তাঁদেরও “চোর! জোচ্চোর! চিটিংবাজ! আমাদের সব টাকা মেরে দিয়েছে। ওর কড়া শাস্তি চাই।”

সাদা হাফশার্ট পরা অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তা তখন কোনও মতে প্রিজন ভ্যানে উঠতে পারলে বাঁচেন! পুলিশই তখন যেন ত্রাতা মধুসূদন!

কলকাতা থেকে ধৃত এমপিএস-কর্ণধার প্রমথনাথ মান্না এবং অন্যতম ডিরেক্টর প্রদীপ চন্দ্রকে পুলিশ শনিবার বাঁকুড়ায় আনতেই ফেটে পড়ে জনরোষ। দু’জনের বিরুদ্ধেই বাঁকুড়া সদর থানায় গত এপ্রিল মাসে দুই এজেন্ট প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। প্রথমে বাঁকুড়া সদর থানায়, পরে বাঁকুড়া আদালতেও এজেন্ট ও আমানতকারীরা দফায়-দফায় বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ হিমশিম খায়। সংযত থাকতে, আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলতে বারবার আর্জি জানানো হয়।

এমপিএস কর্তাদের আনা হচ্ছে খবর পেয়ে সকালেই থানায় জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন সংস্থার জনা কুড়ি এজেন্ট ও আমানতকারী। যত বেলা গড়িয়েছে, ভিড় তত বেড়েছে। দুই ধৃতকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের গাড়িতে তোলার সময়ে জনতা গাড়ি ঘিরে ধরে। উড়ে আসতে থাকে তুমুল গালিগালাজ। পুলিশকর্মীরা দু’জনকে ঘিরে রেখে তড়িঘড়ি গাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে দেন।

বিক্ষোভের আশঙ্কা থাকায় আদালত চত্বরেও প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। কিন্তু বিক্ষোভ ঠেকানো যায়নি। দুপুর ১২টা নাগাদ প্রমথবাবু গাড়ি থেকে নামতেই প্রায় ২৫-৩০ জন এজেন্ট ও আমানতকারী তাঁর দিকে তেড়ে যান। বেগতিক দেখে পুলিশকর্মীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন, “সরে যান! আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখুন! আমাদের কাজ করতে দিন।” পুলিশি ঘেরাটোপে মাথা নিচু করে এজলাসে ঢুকে যান দুই কর্তা। এক পুলিশকর্মী বলেই ফেলেন, “কলকাতা থেকে আসার পরেও হাল্কা মেজাজেই ছিলেন প্রমথবাবু। কিন্তু এখন দেখছি চুপসে গিয়েছেন!”

এমপিএস-এর প্রথম সারির এক এজেন্ট, বাঁকুড়ার জয়পুরের সলদা গ্রামের শ্যামসুন্দর অধিকারী দাবি করেন, গত চার বছরে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা প্রায় ৪০ কোটি টাকা তুলে দিয়েছেন। কিন্তু মেয়াদ শেষের পরেও আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারছিলেন না। শ্যামসুন্দরবাবুর দাবি, “বাঁকুড়া শহরের নতুনচটিতে সংস্থার শাখা অফিসের কর্মীরা জানিয়েছিলেন, বাজার থেকে আরও টাকা তুলতে হবে। সেই টাকা জমা পড়লে তবেই আগের টাকা ফেরত দেওয়া যাবে।” গত ১৭ এপ্রিল শ্যামসুন্দরবাবুই বাঁকুড়া থানায় প্রমথবাবু-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তার আগে, গত ১ এপ্রিলও সঞ্জয় মণ্ডল নামে কোতুলপুরের এক এজেন্ট প্রমথবাবু ও প্রদীপবাবু-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন।

দুর্গাপুর থেকে আদালতে এসেছিলেন ডিএসপি-র কর্মী কাঞ্চন মহন্ত। তিনি জানান, এমপিএস-এ মোট চার লক্ষ টাকা লগ্নি করেছিলেন। কিন্তু ‘মান্থলি ইনকাম স্কিম’-এ কয়েক বছর কিছু টাকা অনিয়মিত ভাবে পেলেও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আর টাকা পাচ্ছেন না। তাঁর ক্ষোভ, “দুর্গাপুরে এমপিএস কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছিল। সবাই প্রায় সর্বস্ব খুইয়েছে। সিবিআই তদন্ত চাই!” কোতুলপুরের বাসিন্দা এজেন্ট মধুসূদন মণ্ডল বলেন, “আমানতকারীরা টাকা চেয়ে আমাদের প্রায় ছিঁড়ে খাচ্ছে। আমাদের জীবনটাই তছনছ করে দিল ওই প্রমথনাথ মান্না।”

দুপুর ২টোর মধ্যেই দুই কর্তার তিন দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু জনতার রোষ জুড়োয়নি। বিকেল ৪টে নাগাদ যখন তাঁদের কোর্ট লকআপ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ভিড়ের মধ্যে চিৎকার ওঠে ‘সিবিআই চাই!’

সিবিআই যে আসরে নেমেই গিয়েছে, তা অবশ্য তখনও জানতে বাকি।

mps pramathanath manna debabrata das abhijit singha slang agent money state ne online state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy