রাজা বসন্ত রায় রোডের বাড়ির এক তলায় তাঁর প্রিয় স্টাডিতে এক চিলতে জায়গা করে রাখা হয়েছে বডি ফ্রিজার। তার মধ্যে শায়িত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সাংসদ মহম্মদ সেলিম, পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে বিমান বসুকে ঘরে ঢুকতে দেখেই ফুঁসে উঠলেন প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়। বাবার মরদেহের পাশ থেকেই বিমানবাবুর উদ্দেশে বলতে থাকলেন, কেন এসেছেন? বাবাকে তাড়িয়েছেন। সারা জীবন শুষে খেয়েছেন! কে আসতে বলেছে এখানে? ঘরভর্তি লোকের মাঝে এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত বিমানবাবুকে সেখান থেকে বার করে নিয়ে গেলেন তাঁর দলীয় সতীর্থেরা।
লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার এবং ১০ বারের প্রাক্তন সাংসদের প্রয়াণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনা বিতর্কের রেশ রেখে গেল শেষ যাত্রায়। বাবার পুরনো দলের বর্ষীয়ান পলিটব্যুরো সদস্যকে ছেলে যখন চলে যেতে বলছেন, সে দিনই আবার ভিন্ন দলের মানুষ হয়েও মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহারে মুগ্ধতা জানালেন সোমনাথ-কন্যা অনুশালী বসু। বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্য মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে সোমবার দুপুরে গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানানোর পরে অনুশীলার উপলব্ধি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানেন, কাকে কী ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। উনি সব সময়েই বাবার খোঁজ নিতেন। ওঁর মনে বাবার জন্য আলাদা স্থান ছিল সব সময়েই।’’ আর মমতাও সেই ১৯৮৪ সালের লোকসভা ভোটে যাদবপুরে সোমনাথবাবুকে হারানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, ‘‘লোকসভায় উনি আমাকে অনেক তিরস্কার করেছেন। সেটা রাজনীতির ব্যাপার। কিন্তু আজ দেখে কারও কী মনে হয়েছে, আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক পাঁচিল রয়েছে? এটাই সৌজন্য।’’
সোমনাথবাবুর বাড়ির মধ্যে ‘তিক্ততা’র পর্ব অবশ্য এক দফাতেই শেষ হয়নি। প্রথম বার প্রতাপবাবুর মন্তব্যের জেরে বেরিয়ে এলেও পরে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে সঙ্গে নিয়ে ফের আসেন বিমানবাবু। তখনও একই ব্যবহার করেন প্রতাপবাবু। বিমানবাবু অবশ্য সোমনাথবাবুর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে উপরে উঠে যান। কিছু ক্ষণ পরে তিনি নামতেই প্রতাপবাবু সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বলে বসেন, ‘‘ইয়েচুরি স্বাগত। কিন্তু উনি নন। লুকিয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকেছেন। কিন্তু তৃণমূলের থেকে লুকোতে পারবেন না!’’ সকলেই আবার হতচকিত!