Advertisement
E-Paper

ভর্তি-জটে ঘেরাওয়ের ঘূর্ণিপাকে প্রেসিডেন্সি

আলোচনার আশ্বাসে ঘেরাও তুলে নেওয়া হয়েছিল গত সপ্তাহে। মঙ্গলবার নির্ধারিত সভায় আলোচনার পরেও বেঁকে বসে ফের বিক্ষোভ-অবস্থানের রাস্তায় ফিরে গেলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি হবে, নাকি বিকল্প উপায়ের চিন্তা গুরুত্ব পাবে— বিতর্ক-বিসংবাদ এই নিয়েই। ভর্তি-পরীক্ষার পক্ষপাতী পড়ুয়ারা গত সপ্তাহে উপাচার্যকে রাতভর ঘেরাও করে রাখার পরে আলোচনার দাবি তোলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৬

আলোচনার আশ্বাসে ঘেরাও তুলে নেওয়া হয়েছিল গত সপ্তাহে। মঙ্গলবার নির্ধারিত সভায় আলোচনার পরেও বেঁকে বসে ফের বিক্ষোভ-অবস্থানের রাস্তায় ফিরে গেলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা।

প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি হবে, নাকি বিকল্প উপায়ের চিন্তা গুরুত্ব পাবে— বিতর্ক-বিসংবাদ এই নিয়েই। ভর্তি-পরীক্ষার পক্ষপাতী পড়ুয়ারা গত সপ্তাহে উপাচার্যকে রাতভর ঘেরাও করে রাখার পরে আলোচনার দাবি তোলেন। সেই দাবি মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এ দিন সভা ডেকেছিলেন। সেই সভার পরে ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, সব বিভাগেই বাধ্যতামূলক ভাবে প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে না কেন, কর্তৃপক্ষ তার কোনও গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে পারেননি। এই অভিযোগে এ দিন ফের বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা।

কিছু পরে রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারের ঘরের বাইরে অবস্থানে বসেন এক দল ছাত্রছাত্রী। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া তত ক্ষণে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। বেরিয়ে যান বিজ্ঞান শাখার ডিন সোমক রায়চৌধুরীও। কিন্তু কলা শাখার ডিন শান্তা দত্তের গাড়ি ক্যাম্পাস থেকে বেরোতে গেলে আবার মূল ফটকের সামনে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। শান্তাদেবী, রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতিবাবু এবং কয়েক জন শিক্ষাকর্মী আটকে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে।

নতুন করে ধর্না-ঘেরাওয়ের মুখে না-পড়লেও উপাচার্য যে পড়ুয়াদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ, তাঁর এ দিনের বক্তব্যেই সেটা পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘‘ওরা যে-ভাবে বিষয়টি জানতে চেয়েছিল, তেমনই আলোচনা করা হল। এখন শুনছি, আন্দোলনকারীরা বলছে, বুধবারেই ভর্তি কমিটির বৈঠক ডেকে সব বিভাগীয় প্রধানকে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রবেশিকার নির্দেশ ধরাতে হবে। মানেটা কী!’’ আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, ওই আলোচনাসভায় তাঁদের সব সন্দেহের নিরসন হয়নি। তাই দ্রুত ভর্তি কমিটির বৈঠক ডাকার দাবি জানানো হচ্ছে। পড়ুয়াদের এই বক্তব্য ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে উপাচার্যের। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এ বার কি আমরা কখন ঘুমোতে যাব, কখন ঘুম থেকে উঠব— সে-সবও ওরা বলে দেবে?’’

প্রশ্ন উঠছে, সামনেই সেমেস্টার পরীক্ষা। তার আগে এই আন্দোলনের কারণ কী? নভেম্বরের মতো এ বারেও অনেক ছাত্রছাত্রীর ন্যূনতম হাজিরা না-থাকায় তাঁদের পরীক্ষায় বসা অনিশ্চিত বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। সেই জন্যই ভর্তি-প্রক্রিয়া নিয়ে আন্দোলন কি না, সেটাও ভাবাচ্ছে শিক্ষক-কর্তাদের একাংশকে।

আন্দোলনকারীরা অবশ্য এই যুক্তি মানতে রাজি নন। সুতনুকা ভট্টাচার্য নামে আন্দোলনকারী এক ছাত্রী এ দিন রীতিমতো হুমকির সুরে বলেন, ‘‘উপস্থিতির হার আর প্রবেশিকা পরীক্ষার দাবি— দু’‌টো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। আমরা লিখিত ভাবে তা জানিয়েও দিয়েছি কর্তৃপক্ষকে। এই আন্দোলনের সঙ্গে উপস্থিতির হারের বিষয়টি জড়ানো হলে আমরা লিখিত ভাবে তার প্রতিবাদ জানাব।’’

বাধ্যতামূলক ভাবে প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনাসভা ডাকার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাতভর উপাচার্য-সহ কর্তাদের ঘেরাও করেন মূলত এ দিনের আন্দোলনকারীরাই। তাঁদের সেই দাবি মেনেই উপাচার্য এ দিন সভা ডাকেন। সব বিভাগে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রবেশিকা হবে কি না, তা না-হলে অন্য কোন উপায়ে ভর্তি হতে পারে, সীমিত পরিকাঠামোয় হাজার হাজার প্রার্থীর প্রবেশিকা নেওয়া কেন অসম্ভব, বাইরের কোন কোন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে ইত্যাদি বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা করেন কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তর দেন। অনেক শিক্ষকও ছিলেন সভায়।

অনুরাধাদেবী জানান, প্রবেশিকা হবে কি না, সেই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিভাগগুলি। কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ভাবে তাঁদের সাহায্য করবেন। কোনও বিভাগ ভর্তির পরীক্ষা না-নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের তার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। ‘‘পরিকাঠামোর বিষয়টি বাদ দিলেও শুধু শিক্ষাগত কারণেই কোনও বিভাগ প্রবেশিকা ছাড়া ছাত্র ভর্তি করতে পারবে। পরিকাঠামোর সমস্যা কেন্দ্রীয় ভাবে মেটানোর চেষ্টা চলছে। তবে বেশ খানিকটা সময় হাতে থাকায় ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে এখনও কোনও রকম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি,’’ বললেন উপাচার্য।

সভায় উপস্থিত শিক্ষকদের কেউ প্রবেশিকার পক্ষে সওয়াল করেছেন। কেউ কেউ যুক্তি দেখান, শুধু পরীক্ষার মাধ্যমেই বুদ্ধিমান পড়ুয়া পাওয়া যায়, বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় প্রেসিডেন্সিতে সেটা প্রমাণিত হয়নি। সমাজতত্ত্বের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘প্রবেশিকা দিয়ে আসা ছাত্রছাত্রীরা যে অত্যন্ত মেধাবী, তেমন প্রমাণ কিন্তু বিগত কয়েক বছরের ছাত্র ভর্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে না।’’ পরে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ওই শিক্ষক জানান, গত বছর দেখা গিয়েছে, যে-সব ছাত্রছাত্রী দ্বাদশের পরীক্ষায় ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন, প্রবেশিকায় কম পাওয়া সত্ত্বেও প্রথম মেধা-তালিকায় তাঁদের ঠাঁই হয়েছে। আবার ভর্তি-পরীক্ষায় বেশি পেয়েও দ্বাদশে কম পাওয়ায় অনেকে চলে গিয়েছেন দ্বিতীয় মেধা-তালিকায়।

সব দিক নিয়ে ঘণ্টা দুয়েকের আলোচনার পরেও ছাত্রছাত্রীরা বেঁকে বসেন। তাঁদের বক্তব্য, সব বিভাগেই প্রবেশিকা নিয়ে ভর্তি হবে না কেন, তার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা মেলেনি। উপাচার্যের ঘরের বাইরে অবস্থান শুরু হয়। এ দিনই একটি বক্তৃতার জন্য প্রেসিডেন্সিতে আসেন সেখানকার প্রাক্তনী তথা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালান। তাঁর সামনেই চলে অবস্থান।

বেশি রাতে রেজিস্ট্রার ও শিক্ষকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় ঠিক হয়, প্রবেশিকা থাকবে না উঠে যাবে, সেমেস্টার পরীক্ষার পরে, ২৮ মে ভর্তি কমিটির বৈঠকে তা স্থির হবে। ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ ঘেরাও উঠে যায়।

Presidency University Admission Admission test Anuradha Lohia Student agitation Examination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy