Advertisement
E-Paper

নজরানা দিয়ে চাকরি, কবুল টেট-মিছিলেই

কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে কর গুনে হিসেব মেলাচ্ছিলেন মানকরের দুই যুবক। জীবনখাতার নয়, বেকার থেকে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক হওয়ার হিসেব!প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট)-য় চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিস্তর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ০৩:০৫
মুখ: কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

মুখ: কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে কর গুনে হিসেব মেলাচ্ছিলেন মানকরের দুই যুবক। জীবনখাতার নয়, বেকার থেকে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক হওয়ার হিসেব!

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট)-য় চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিস্তর। তবে তা নিয়ে আর আক্ষেপ করতে রাজি নন অনেকে। মিছিলে হাঁটা ঝাড়গ্রামের স্কুলশিক্ষক বললেন, ‘‘বিনি পয়সায় এখন লোকের গালাগালও মেলে না। এ তো সরকারি চাকরি!’’ ডিএলএড পাশ করা ছোট ভাইয়ের জন্য ‘খুশি-মনেই’ আড়াই লক্ষ খরচ করেছেন তিনি।

শুক্রবার প্রাথমিক টেটের সাফল্য নিয়ে মিছিল করেন তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। মিছিল, স্লোগান হয়েছে। আর মাঝেমধ্যে একটু লম্বা শ্বাস নিয়ে নব্য শিক্ষকদের অনেকেই কষেছেন পাশের খরচ। কার বেশি গেল, কার কম— তা নিয়ে চলেছে ফিসফিস, গুজগুজ। আঙুলের ইশারায় বিনিময় হয়েছে লেনদেন বৃত্তান্ত।

রাগ হয় না বীরভূমের যুবকের। বরং প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়ে জেলাতুতো দাদার প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। বলছিলেন, ‘‘এক লপ্তে পুরো টাকা নেয়নি। অর্ধেক আগে দিয়েছি। বাকিটা এক বছরে ইএমআই।’’ উত্তর ২৪ পরগনার নতুন শিক্ষক কিন্তু ‘ফেলো কড়ি, করো চাকরি’ তত্ত্ব মানতে নারাজ। বললেন, ‘‘জানেন, আমাদের জেলায় সিট কম, টাকা দেওয়ার লোক বেশি। শুনুন, একেবারে সাদা খাতা দিলে সরস্বতীও পাশ করাতে পারবে না।’’ তা আপনি কত...? শুনেইমুখ ঘুরিয়ে হাঁটা দিলেন তিনি।

চাকরি পাওয়ার খরচ নিয়ে আর মন খারাপ করতে রাজি নন মিছিলে যোগ দেওয়া অনেকেই। কারা টাকা নিয়েছেন, খুলে বলবেন না তা-ও। তাঁদের মতে, সব জেলাতেই স্কুলে নিয়োগ-সহ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘রাজা’, ‘সম্রাট’, ‘জাঁহাপনারা’ কব্জা করে রেখেছেন। তাঁদের মন না-জোগালে সুবিধে হবে না। টাকা দিলেই হবে না, আনুগত্যও জরুরি। ‘‘ভরপেট না-ও খাই, রাজ-করে আপত্তি করে লাভ কী’’ বলছেন হাওড়ার এক যুবক। জমি বেচে সরকারি চাকরি জুটেছে তাঁর। বর্ধমানের দুই যুবক মুখে বলেননি। কিন্তু ক্ষণিকের আলাপে অপরিচিত বন্ধুকে আঙুলের ইশারায় ‘তিন’ দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন খেরোর খাতার অঙ্ক!

এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা এ-সব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। এ দিনই কলেজ স্ট্রিটে পুলিশ ভ্যানের সামনে দল বেঁধে মাথায় ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ‘দিদিমণি’ তাঁর বন্ধুদের বললেন, ‘‘শোন, ও-সব ভেবে লাভ নেই। আমরা এখন আর চাকরিপ্রার্থী নই। এখন আমরা চাকরি করি।’’

‘ও-সব’ মানে?

উত্তর না-দিয়ে ‘নতুন দিদিমণি’ পা মিলিয়ে দিলেন মিছিলে।

TET Primary Teachers Bribes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy