ছবি: শাটারস্টক।
সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে বন্দিরা জেলে রয়েছেন। সেখানে তাঁরা আইন মেনে কাজ করছেন। সেই কাজের জন্য সরকার নির্ধারিত মজুরির ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ অভিযোগ উঠছে, সেই ন্যায্য মজুরি জেলবন্দিরা পাচ্ছেন না। মানবাধিকার কর্মীদের তোলা অভিযোগটা রাজ্যের কারা দফতর অনেকাংশে মেনেও নিচ্ছে।
জেলের ভিতরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছে একাধিক সংগঠন। কাজ করার পরেও দীর্ঘ দিন দৈনিক মঞ্জুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা। এক বা দু’মাস নয়, টানা ১৪ মাস ধরে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দিদের একাংশ টাকা পাচ্ছেন না। রাজ্যের অন্যান্য জেলেও একই হাল। কোথাও তিন মাস বাকি রয়েছে পারিশ্রমিক, কোথাও আবার পাঁচ মাস। মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূরের অভিযোগ, ‘‘প্রায় সারা বছরই উৎসবে মেতে রয়েছে রাজ্য সরকার। চলছে খয়রাতি। অথচ জেলের মধ্যে হাড়ভাঙা খাটুনির পর বন্দিরা দৈনিক মজুরিই পাচ্ছেন না। রাজ্যের উদাসীন মনভাবের জন্যে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ এ নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানাবেন তাঁরা।
জলপাইগুড়ির পাশাপাশি দমদম, মেদিনীপুর, আলিপুর এবং প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। এ বছরের শুরু থেকেই জেলে এমন করুণ অবস্থা তৈরি হয়েছে। কারা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়: “বন্দিদের মজুরির বরাদ্দ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু বিভিন্ন সংশোধনাগারে সেই টাকা পৌঁছচ্ছে না।” কেন পৌঁছচ্ছে না, সে বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি বলেন, “আগে বন্দিরা কম মজুরি পেতেন। ওঁদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। সে কারণেই টাকা দিতে বিলম্ব হচ্ছে। এই সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে।”
আরও পড়ুন: দু’দিন ধরে দিল্লিতে অপেক্ষায় সোমেন-গৌরব, শিমলায় ছুটি কাটাচ্ছেন রাহুল গাঁধী
কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্দিদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে প্রায় সব জেলেই বন্দিদের হাতের কাজ শেখার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জেলের মধ্যে কাজ করতে হয়। সে জন্যে দৈনিক মজুরিও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর আলতাফ আহমেদ বলেন, ‘‘গত বছরেই বন্দিদের পারিশ্রমিক অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাতে সাময়িক ভাবে স্বস্তিও পেয়েছিলেন বন্দিরা। কিন্তু, এখন সবটাই বিশ বাঁও জলে।’’
আরও পড়ুন: খুন ও ষড়যন্ত্রের পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই, সোহরাবুদ্দিন হত্যা মামলায় বেকসুর খালাস ২২ অভিযুক্ত
কারা দফতরের দাবি, পরিশ্রম এবং কর্মদক্ষতার হিসাবে বন্দিদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়। অদক্ষ, কম দক্ষ এবং দক্ষ। বর্তমানে তাঁদের যথাক্রমে ৮০, ৯০ এবং ১০০ টাকা পেয়ে থাকেন বন্দিরা। আগে একই কাজের জন্যে দেওয়া হত দৈনিক মাত্র ৩০, ৪০ এবং ৫০ টাকা। মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, বন্দিরা তাঁদের উপার্জনের টাকা বাড়িতেও পাঠান। কিন্তু, মজুরি না মেলায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁদের পরিবারও। আলতাফ বলেন, “জেলের মধ্যে বন্দিদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ নিয়ে আমার কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু, কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি কারা কর্তারা। আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে যাব।”
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy