Advertisement
E-Paper

আপনারা লিখুন, আজ সব বলব

তখনও তিনি ধাতস্থ হতে পারেনি। কথা বলতে বলতে গলাটাও ধরে আসছে। কোনও রকমে সামলে তিনি বলছেন, ‘‘আপনারা লিখবেন তো? লিখুন, আজ সবটা বলব। ওরা তো মেরে ফেলতেই এসেছিল।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০২:১২
অধ্যক্ষার ঘরে অমরজিৎ কুণ্ডু। — নিজস্ব চিত্র

অধ্যক্ষার ঘরে অমরজিৎ কুণ্ডু। — নিজস্ব চিত্র

তখনও তিনি ধাতস্থ হতে পারেনি। কথা বলতে বলতে গলাটাও ধরে আসছে। কোনও রকমে সামলে তিনি বলছেন, ‘‘আপনারা লিখবেন তো? লিখুন, আজ সবটা বলব। ওরা তো মেরে ফেলতেই এসেছিল। এরপর আর কীসের ভয়!”

সোমবার দুপুরে টিচার্স রুমে কথা বলতে বলতে আচমকাই উঠে দাঁড়ান শান্তিপুর কলেজের অঙ্কের শিক্ষক অমরজিৎ কুণ্ডু। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তিনি একা নন, ঘটনার প্রায় তিন ঘন্টা পরেও আতঙ্ক কাটেনি কলেজের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।

সেই সময় টিচার্স রুমে যে শিক্ষকেরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক, সুশান্ত সরকার একজন। ঘটনার কথা স্বীকার করে নিলেও নিজের মুখে কিছুই বলতে চাইছিলেন না। তিনি শুধু বলেন, “ওরা কী যেন একটা অমরজিৎবাবুর মাথায় ধরে। আমি পিছনে থাকায় ঠিক বুঝতে পারিনি।”

সুশান্তবাবু প্রকাশ্যে কিছু বলতে কি ভয় পাচ্ছেন? তাঁর সহকর্মীরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘সেটাই তো স্বাভাবিক। দিন কয়েক আগে রাস্তায় ফেলে এক শিক্ষককে মারল। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আজ আবার কলেজে ঢুকে এক শিক্ষকের মাথায় পিস্তল ধরল। অধ্যক্ষকে হুমকি দিয়ে গেল। দেখবেন, এ বারেও কিছু হবে না। তাহলে কার ভরসার ওদের বিরুদ্ধে মুখ খুলব?’’

শিক্ষকদের এই মনোভাব যে অস্বাভাবিক নয়, তা মানছেন কলেজের অধ্যক্ষ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আমি ওই যুবকদের পরিষ্কার বলেছিলাম, গুলি করতে হলে আগে আমাকে গুলি করবি। তবে কোনও অবস্থাতেই আমি ওদের কাছে কাছে মাথা নত করব না।’’

সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ শান্তিপুর কলেজের টিচার্স রুমে ঢুকে পড়ে একদল যুবক। তারা শিক্ষকদের ঘিরে গালিগালাজ শুরু করে। ওই যুবকদের একজন অঙ্কের শিক্ষক অমরজিতের মাথায় পিস্তল ধরে। সেই সঙ্গে হুমকি, ‘‘কলেজের পরিচালন সমিতির গঠন নিয়ে মাথা ঘামাবি না। ভোটের দিনও যেন তোকে কলেজে না দেখি।’’ ততক্ষণে রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেন টিচার্স রুমের অন্য শিক্ষকেরা। তার পর ওই যুবকেরা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। শিক্ষকেরা তখন দল বেঁধে বিষয়টি জানাতে যান অধ্যক্ষার ঘরে। সেখানেও ওই যুবকেরা ঢুকে অধ্যক্ষাকে শাসায় বলে অভিযোগ। এ দিনের ওই ঘটনার পরে অধ্যক্ষা ওই যুবকদের বিরুদ্ধে শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। যদিও সোমবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ওই যুবকদের শনাক্ত করা হবে। তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ শান্তিপুর কলেজে অশান্তি এই প্রথম নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই কলেজে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়ে আছে। এর আগেও একাধিক বার ছাত্র ভর্তিকে কেন্দ্র করে কলেজে চরম অশান্তি হয়েছে। কলেজের ভিতরে চলেছে গুলি ও বোমা।

Professor threat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy