পাহাড়ে হাসির ভবিষ্যৎ জানা নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মুখে আপাতত হাসি। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বনাম বিমল গুরুঙ্গের আইনি যুদ্ধের আজও নিষ্পত্তি হয়নি। ফের বৃহস্পতিবার শুনানি। যার অর্থ, দু’তরফেরই বাঘা বাঘা আইনজীবীদের ফের লক্ষ্মীলাভ।
তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ থেকে সুরাহা চেয়ে, পাহাড়ে গোর্খা-সমর্থকদের মৃত্যুতে সিবিআই-এনআইএ তদন্ত চেয়ে বিমল গুরুঙ্গ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। রাজ্য তাতে আপত্তি তুলেছে। এই মামলায় দু’পক্ষেই লড়ছেন দেশের বাঘা আইনজীবীরা। গুরুঙ্গের পক্ষে এক দিন সওয়াল করেছেন হরিশ সালভে। দেশের অন্যতম নামজাদা আইনজীবী হিসেবে যিনি পরিচিত, যাঁকে আন্তর্জাতিক আদালতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠায় ভারত সরকার। গুরুঙ্গের দিকে আরও আছেন পি এস পাটওয়ালিয়া। তিনিও প্রথম সারির আইনজীবী।
উল্টো দিকে, রাজ্যের পক্ষে রয়েছেন অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি। দেশের আইনজীবী মহল এক ডাকে চেনে তাঁকে। পাশাপাশি, অমিতাভ মালিকের মায়ের পক্ষে সওয়াল করছেন আর এক প্রথিতযশা আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা। এই ওজনদার আইনজীবীদের নিয়ে এর মধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে। গুরুঙ্গের পক্ষে যাঁরা লড়ছেন, তাঁদের নিয়োগ করার খরচ যে যথেষ্টই, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সম্প্রতি জিটিএ-র কেয়ারটেকার প্রধান বিনয় তামাঙ্গ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এত কোটি কোটি টাকা গুরুঙ্গ পাচ্ছেন কোথা থেকে?’’ আবার গোর্খাল্যান্ড সংযুক্ত সংঘর্ষ সমিতির কার্যনির্বাহী সভাপতি সগন মোক্তান বলেন, ‘‘কত টাকা এই আইনি লড়াইয়ে খরচ হচ্ছে, তার হিসেব নেই। শুনছি, দু’পক্ষই কোটি কোটি টাকা খরচ করছে!’’
সাংবিধানিক বেঞ্চে এ দিন পৌনে এক ঘণ্টার শুনানি দেখে স্পষ্ট হয়ে যায়, এই আইনজীবীরা কেউ এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। মোর্চার হাঙ্গামার ছবি জমা দিয়ে অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি এ দিন বলেন, গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে ৫৩টি এফআইআর, ২৪টি মামলা ঝুলছে। গুরুঙ্গের আইনজীবী পাটওয়ালিয়ার পাল্টা দাবি, সব অভিযোগ মিথ্যে। যে সমস্ত অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলা হচ্ছে, তার মধ্যে বাচ্চাদের স্কুলে খেলার তির-ধনুক, আতসবাজিও রয়েছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর থেকেই গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে প্রচুর মিথ্যে মামলা হয়েছে।
মনুসিঙ্ঘভি এর পরে অমিতাভ মালিকের খুনের উদাহরণ টেনে বলেন, এটাও কি মিথ্যে! তাঁর বক্তব্য, গুরুঙ্গ কোনও নোটিস, সমনে সাড়া দিয়ে জেরার মুখোমুখি হননি। তদন্তে সাহায্যও করেননি। পাটওয়ালিয়ার জবাব— ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে খুনের মামলা বাদে ২০১১-র আগের সব মামলা তুলে নেওয়ার শর্ত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। আর এখন ইউএপিএ-তে মামলা করে তাঁকে পলাতক বলা হচ্ছে। মনুসিঙ্ঘভি বলেন, এখানে তো গুরুঙ্গ নিজের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের বিচারের জন্য তদন্তকারী সংস্থা ঠিক করার আবেদন জানাচ্ছে।
এ দিনের শুনানির বৃত্তান্ত জানার পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সগন মোক্তান বলেন, ‘‘এই লড়াইয়ে পাহাড়ের জনতার কী লাভ হচ্ছে বলুন তো?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy