Advertisement
২১ মার্চ ২০২৩

মধ্যমগ্রামে প্রোমোটার খুন, সেলুনে ঢুকে ৮টা গুলি

সেলুনে সে সময় পাহারায় ছিলেন গৌতমের ভাই কার্তিক। তিনি বলেন ‘‘হেলমেট পরা দুষ্কৃতীরা প্রথমে আমাকেই দাদা ভেবেছিল। কুরু সেই সময় দাদাকে চিনিয়ে দেয়।’’

গৌতম দে সরকার।—নিজস্ব চিত্র।

গৌতম দে সরকার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:১০
Share: Save:

সকাল তখন পৌনে ১১টা। শিশুরা স্কুল ছুটির পরে মা-বাবার হাত ধরে বাড়ি ফিরছে। রাস্তার ধারে বাজারে মহিলা-বয়স্কদের ভিড়। তার মধ্যেই এক জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় সেলুন থেকে টেনে বের করে রাস্তায় ফেলে পরপর গুলি চালাতে শুরু করল জনা ১২-র একটি দল। সঙ্গে যথেচ্ছ বোমাবাজি। মিনিট ১৫ ধরে তাণ্ডব চালিয়ে দলটা যখন উধাও হল, রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। যত্রতত্র বুলেটের খোল আর গুলিতে ঝাঁঝরা একটি দেহ পড়ে রয়েছে। চিৎকার করে কাঁদছে বাচ্চারা। আতঙ্কে কাঁপছে এলাকা।

Advertisement

শুক্রবার সকালে মধ্যমগ্রাম চৌমাথা ও স্টেশনের মাঝখানে বঙ্কিমপল্লি এলাকায় এ ভাবেই খুন করা হয় গৌতম দে সরকার ওরফে ঢাকাই গৌতমকে (৫২)। প্রোমোটিং, সিন্ডিকেট ব্যবসায় যুক্ত গৌতমের নামে একাধিক খুন, তোলাবাজির অভিযোগ ছিল। মাদক পাচারের ঘটনায় ১৯ মাস জেল খেটে গত বছর ১ সেপ্টেম্বর ছাড়া পায় সে। আগেও দু’বার তার উপর হামলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গৌতমের মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুষ্কৃতীরা তার মুখের মধ্যে রিভলভার ঢুকিয়ে পরপর গুলি করে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন।’’ গৌতমের বিরুদ্ধ-গোষ্ঠী পদ (প্রদীপ দেব)-র ভাগ্নে টুপাই ওরফে টুবাই, শাহাবুদ্দিন, কুরু বসু-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছেন গৌতমের ভাই কার্তিক দে সরকার। কুরুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: কলকাতায় ফিরেই আদালতে যাচ্ছি: ভারতী

Advertisement

গৌতমের প্রতিবেশীরা মধ্যমগ্রাম থানা ঘেরাও করেন। অবরোধ করা হয় মধ্যমগ্রাম চৌমাথাও।

অভিযোগ, এ দিন গৌতমকে চিনিয়ে দেয় কুরু। ওই এলাকায় একটি জমি কেনার নাম করে গত কয়েক দিন ধরে গৌতমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল সে। গৌতমের স্ত্রী রুমা বলেন, ‘‘আজ সকালেও কুরু আমাদের বাড়ি আসে। ওকে বলি, দাড়ি কাটতে সেলুনে গিয়েছে।’’ পুলিশের দাবি, এর পরেই ১২-১৪ জনকে নিয়ে সেলুনে হানা দেয় কুরু।

সেলুনে সে সময় পাহারায় ছিলেন গৌতমের ভাই কার্তিক। তিনি বলেন ‘‘হেলমেট পরা দুষ্কৃতীরা প্রথমে আমাকেই দাদা ভেবেছিল। কুরু সেই সময় দাদাকে চিনিয়ে দেয়।’’ কার্তিক বাধা দেবার চেষ্টা করলে তাঁকে ঠেলে সরিয়ে দুষ্কৃতীরা গৌতমের উপর হামলা চালায়। গৌতমের দাড়ি কাটছিলেন সেলুনের কর্মী মিঠুন দাস। তিনি বলেন, ‘‘ওরা ভিতরে ঢুকেই শাটার নামিয়ে দেয়। চেয়ার থেকে ওঠার চেষ্টা করতেই ওরা গৌতমদাকে পরপর গুলি করে। আমি তখন হাতজোড় করে ঠকঠক করে কাঁপছি।’’ সেলুনের ভিতরে অন্তত ৮ রাউন্ড গুলি চলেছে বলে জেনেছে পুলিশ।

গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই টানতে টানতে রাস্তায় আনা হয় গৌতমকে। পুলিশ জানিয়েছে, সব মিলিয়ে অন্তত ১৫ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। গৌতমের শরীরে ৮-৯টি গুলি লেগেছে। খুনের পরে মোটরবাইকে চড়ে দু’টি দলে ভাগ হয়ে এলাকা ছাড়ে দুষ্কৃতীরা। গৌতমকে নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.