ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের ঘটনাকে ব্যবহার করে বিভাজনের চেষ্টাকে প্রতিহত করতে নানা কৌশলে পথে নামছে কংগ্রেস ও বামেরা। অন্য দিকে, জাতীয়তাবাদের আবেগকে উস্কে দিয়ে বিজেপির সক্রিয়তাও অব্যাহত।
ধর্ম, জাত-পাতের নামে বিভাজন ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতায় বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে গান্ধীঘাট পর্যন্ত ‘সংবিধান বাঁচাও পদযাত্রা’য় শামিল হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (শহর) সভাপতি তাপস মজুমদার প্রমুখ। এরই পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অফিসার সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী কুঁওয়ার বিজয় শাহের বিরুদ্ধে এ রাজ্যের থানায় থানায় অভিযোগ দায়েরের কর্মসূচি নিয়েছে কংগ্রেস। কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় এ দিনই ওই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক সুমন রায়চৌধুরী। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার দাবিতে এবং যুদ্ধ-জিগির বন্ধ ও সম্প্রীতির ডাক দিয়ে এ দিন কলকাতায় ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মিছিল করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও শিল্পভিত্তিক ফেডারেশন।
উধমপুরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইতে নিহত জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের বাড়িতে গিয়ে সেনাকে কুর্নিশের পাশাপাশি সংহতির বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ এবং এআইসিসি-র সংখ্যালঘু শাখার চেয়ারম্যান ইমরান প্রতাপগড়ী। নদিয়ার তেহট্টে এ দিন ঝন্টুর বাড়িতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, সন্তোষ পাঠক, শামিম আখতার ও জেলা নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ইমরান। বিভিন্ন রাজ্যের উদাহরণ দিয়ে ইমরানের বক্তব্য, “বিহার-সহ অন্য রাজ্যগুলি শহিদ পরিবারগুলিকে ৫০ লক্ষ টাকা করে সাহায্য করেছে। বাংলার সরকারকে অনুরোধ করব, অন্য রাজ্য সরকারগুলির মতো একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে ঝন্টুর পরিবারকে সাহায্য করা হোক।” প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ঝন্টুর স্ত্রী শাহনাজ পারভিনকে হোমগার্ডে নিয়োগ করার কথা জানিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে ইমরানের বক্তব্য, “শহিদের স্ত্রীকে হোমগার্ডের বদলে অন্য কোনও চাকরি দেওয়া হোক, যাতে তিনি ছেলেমেয়েদের নিয়ে সম্মানের সঙ্গে জীবন কাটাতে পারেন।” কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ঝন্টুর স্ত্রী ছেলেকে সৈনিক স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করার জন্য ইমরানকে অনুরোধ করেছেন। ইমরানের আশ্বাস, তিনি সব রকম ভাবে চেষ্টা করবেন। ইমরানেরা এআইসিসি-র তরফে পরিবারটিকে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া-সহ সব রকম ভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
এরই পাশাপাশি ‘মিশন সিঁদুর’ নামে কর্মসূচি নিয়ে পথে নামছে বিজেপির মহিলা মোর্চা। পহেলগামে জঙ্গি-হানার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়েছিল ভারতীয় সামরিক বাহিনী। এই আবহে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ‘মিশন সিঁদুর’ কর্মসূচিতে জেলা থেকে মণ্ডল স্তর পর্যন্ত বিবাহিত মহিলাদের সঙ্গে সিঁদুর খেলা, মিষ্টিমুখ করানো এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘প্রত্যয়ের কথা’ প্রচার করবে মহিলা মোর্চা। যেখানে সংগঠন শক্তিশালী নয়, সেখানে দলীয় পতাকা ছেড়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে সামাজিক সংস্থার সঙ্গে মিশে কর্মসূচি হবে। মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র বলেছেন, “দল শুক্রবার থেকে রাজ্যের সর্বত্র তেরঙ্গা যাত্রা করবে। আমরা সোমবার থেকে রাস্তায় নামব। কর্মীরা সিঁদুর নিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে সেনাবাহিনীর সাফল্য উদ্যাপন করবেন। মহিলাদের সিঁদুর কেড়ে নেওয়ার প্রত্যাঘাত এবং সিঁদুর রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের কথা মহিলাদের কাছে তুলে ধরব।” তবে বিজেপির একটি সূত্রের মতে, ওই কর্মসূচির মাধ্যমে সাংগঠনিক টানাপড়েনকে আপাতত আড়াল রাখার চেষ্টা করছে মহিলা মোর্চা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)