আন্দোলনে ভাঙনের খুচরো ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। এ বার আন্দোলন স্থানান্তরের ‘চক্রান্তের’ অভিযোগ করলেন আন্দোলনরত চাকরিহারাদের একাংশ। কারা চক্রান্ত করছেন, সে ব্যাপারে সরাসরি কিছু না বললেও ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের’ সদস্যেরা আন্দোলনরত অন্য একটি সংগঠনের দিকেই কার্যত আঙুল তুলেছেন। সল্টলেকে বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন ও তার পরবর্তী গোলমাল নিয়ে কয়েক জনকে তলব করেছিল বিধাননগর পুলিশ। সেই নোটিসের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন দুই আন্দোলনকারী। সেই মামলায় হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, বিকাশ ভবনের সামনে থেকে সরে সেন্ট্রাল পার্কের ভিতরে অবস্থান করা যেতে পারে।
হাই কোর্ট অবশ্য বৃহস্পতিবারও আন্দোলন সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়নি। এ দিনও শুনানি হয়। রাজ্য আন্দোলন সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছে। সেই আবেদনপত্র জমা দিতে বলেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। শুক্রবার তিনি নির্দেশ দিতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-র সদস্য সঙ্গীতা সাহা বলেন, “আমাদের আশঙ্কা, বিকাশ ভবনের সামনে থেকে সরে অন্য কোথাও বসতে বলা হতে পারে। আমরা তো শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছি। তা হলে কেন উঠব?”
এর পরে মামলা করা দুই আন্দোলনকারী সুদীপ কোনার এবং ইন্দ্রজিৎ মণ্ডলের প্রসঙ্গ উঠেছে। সঙ্গীতা বলেন, “ওই দু’জন ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের’ আন্দোলনকারী নন। অন্য মঞ্চে আছেন। ওঁরা পুলিশি তলবের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করতে গেলেন কেন, জানি না। পুলিশ আমাদেরও কয়েক জনকে ডাকে। আমরা তো মামলা করিনি। আশঙ্কা করছি, বিকাশ ভবনের সামনে থেকে যাতে উঠে যাই, তার চক্রান্তের শিকার হচ্ছি।” বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন করছে ‘যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীবৃন্দ’ নামে একটি সংগঠনও। সুদীপ এবং ইন্দ্রজিৎ সেই সংগঠনে আছেন বলেই খবর। এ দিন ওই সংগঠনের তরফে সুমন বিশ্বাস বলেন, “এটা ওঁদের অসত্য ভাষণ। সুদীপ এবং ইন্দ্রজিতের হাই কোর্টে মামলা করার যথেষ্ট কারণ আছে। আমরা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই চলব।”
পুলিশি তলব ও অতি সক্রিয়তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সুমন এবং ইন্দ্রজিৎ। এ দিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান, পুলিশি অতি সক্রিয়তার মামলার রায় তিনি আজ, শুক্রবার দেবেন। তার আগে মামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না। বুধবার মামলাকারীদের পুলিশের সামনে হাজিরা দিতেও বলেন তিনি। এ দিন মামলাকারীদের আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্র জানান, ওই দু’জন থানায় হাজিরা দিয়েছেন, তদন্তে সহযোগিতা করবেন। রক্ষাকবচের আর্জি জানান তিনি। রাজ্যের কৌঁসুলি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, প্রধান মামলাকারী শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নন। তবুও বিকাশ ভবনের সামনে হাঙ্গামায় যুক্ত। আন্দোলন এবং বিশৃঙ্খলার জেরে ওই তল্লাটের ৫৫টি দফতরের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ২২ জন পুলিশকর্মী আহত, ১৯ জন সাধারণ নাগরিক অসুস্থ হয়েছেন।
এ দিন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির চাকরিহারা শিক্ষিকা মৌমিতা হালদার বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনে যোগ দেন। ২০২২-এ ব্রেন স্ট্রোকের পরে শরীরের বাঁ দিকের সাড় হারান তিনি। পায়ের অবস্থার উন্নতি হলেও বাঁ হাত এখনও অচল। মৌমিতা বলেন, “স্বামীর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে এসেছি। যা হচ্ছে, তাতে বাড়িতে বসে থাকতে পারলাম না।” তাঁর দাবি, বিকাশ ভবনের সামনে থাকা সব আন্দোলনকারী যোগ্য। কেন পরীক্ষা দিতে হবে ফের? তিনি বলেন, “এখন সব ভাল মনে রাখতে পারি না। এসএসসি পাশ করার সময় পুরো সুস্থ ছিলাম। ফের পরীক্ষা হলে আমার প্রতি অবিচার করা হবে। যোগ্যতা প্রমাণে কত বার পরীক্ষা দেব?”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)