অম্বেডকর প্রশ্নে এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ইস্তফার দাবিতে প্রতিবাদ-ধিক্কার অব্যাহত রাজ্য জুড়েই। তবে পুরো বিষয়টিকে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ‘মিথ্যা প্রচার’ বলে দাবি করে পাল্টা প্রতিবাদের বার্তা দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শাহের বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে নাগরিকপঞ্জি বিরোধী যুক্ত মঞ্চ, পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চ-সহ ৯টি সামাজিক সংগঠনের আহ্বানে রেড রোডে অম্বেডকর মূর্তির সামনে মঙ্গলবার ছিল ‘ধিক্কার সমাবেশ’। সমাবেশে যোগ দিয়েছিল সিপিএম, কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, আইএসএফ-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। প্রদেশ কংগ্রেসে সভাপতি বদলের পরে সিপিএম এবং আইএসএফের সঙ্গে এই প্রথম তাদের এক মঞ্চে দেখা গেল। রেড রোডের কর্মসূচি শেষ হয়েছে ‘মনুস্মৃতি’ পুড়িয়ে।
রেড রোডের সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য রামচন্দ্র ডোম, আইএসএফের কার্যকরী সভাপতি শামসুর মল্লিক প্রমুখ। ছিলেন দুই প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে, বাসুদেব বর্মণ, প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মাও। শাহ সংসদে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের আক্রমণ করতে গিয়ে অম্বেডকরের নামে ‘ফ্যাশন’ শব্দটির প্রয়োগ করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই সমাবেশের অন্যতম আয়োজক প্রসেনজিৎ বসুর বক্তব্য, “অম্বেডকর কোনও ফ্যাশন নন। অম্বেডকর আমাদের প্যাশন, আবেগ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই আবেগে আঘাত করেছেন।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করও বলেছেন, “অম্বেডকরকে অপমান করে বিজেপি বুঝিয়ে দিয়েছে তারা সংবিধান মানে না। আদানি-কাণ্ড থেকে নজর ঘোরাতে তারা প্রথমে অম্বেডকরকে অপমান করেছে এবং তার পরে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেকে নিগ্রহ করেছে। কিন্তু কংগ্রেসের মুখ বন্ধ করা যাবে না।”
ডিসি (উত্তর) দফতরের সামনে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
এআইসিসি-র ডাকে এ দিন সর্বত্র ‘অম্বেডকর সম্মান যাত্রা’র কর্মসূচি নিয়েছিল কংগ্রেস। মহকুমা আধিকারিক, জেলাশাসক এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর উদ্দেশে দাবিপত্র দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্য জুড়েই এ দিন পথে নেমেছিল তারা। উত্তর কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে সেই কর্মসূচি ছিল মানিকতলায় ডিসি (উত্তর) দফতরের সামনে। পুলিশ অবশ্য ব্যারিকেড করে মিছিল আটকে দেয়। পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের। পুলিশ প্রতিনিধিদলকে আটকানোর চেষ্টা করলে সুমন রায়চৌধুরী, তাপস সিংহ, বিশ্বনাথ ধরেরা রাস্তায় বসে পড়েন। চলতে থাকে স্লোগান, বক্তৃতা। উত্তর কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি রানা রায়চৌধুরীর দাবি, ‘‘যে সরকার সংবিধানের প্রণেতাকে অপমান করে, তাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’
অম্বেডকর-প্রশ্নে যাবতীয় বিতর্ককে ‘মিথ্যা’ বলে পাল্টা সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, “দলিত পরিবারের কন্যা-সন্তানেরা অত্যাচারিত হচ্ছেন, খুন হচ্ছেন। এই নাটক সাধারণ মানুষ গ্রহণ করবেন না। বিজেপিও লাগাতার প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মিথ্যা প্রচার বন্ধ করবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)