Advertisement
E-Paper

নিয়োগ বিক্ষোভে ফুটছে বাংলা, পার্থও কঠোর

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা আর বঞ্চনার অভিযোগে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ, অবরোধ, মামলা-মকদ্দমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে অনশনও। ক্ষোভ বাড়ছে শিক্ষামন্ত্রী কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমনের হুঁশিয়ারি দেওয়ায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৬
বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের আবেদন-নিবেদন। বারাসতের একটি স্কুলে।নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের আবেদন-নিবেদন। বারাসতের একটি স্কুলে।নিজস্ব চিত্র।

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা আর বঞ্চনার অভিযোগে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ, অবরোধ, মামলা-মকদ্দমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে অনশনও। ক্ষোভ বাড়ছে শিক্ষামন্ত্রী কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমনের হুঁশিয়ারি দেওয়ায়।

সব শিক্ষক নিয়োগ শেষ বলে ঘোষণা করে দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়ায় যে স্বচ্ছতার অভাব থেকে গিয়েছে, সেটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। আর তা নিয়েই ক্ষোভ বাড়ছে চাকরি না-পাওয়া প্রার্থীদের। শুক্রবার বিক্ষোভ হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং বারাসতে। বারাসত থেকে প্রার্থীরা সল্টলেকে পর্ষদের অফিসে এসেও বিক্ষোভ দেখান। কারও কারও অভিযোগ, ইচ্ছে করে সংরক্ষিত (পার্শ্বশিক্ষক ও অন্যান্য) তালিকায় ফেলে পর্ষদ তাঁদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করেছে। তাঁরা চাকরি না-পেলে যে-শূন্যতার সৃষ্টি হবে, সেখানে নিজেদের লোক ঢোকানোর চক্রান্ত চলছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরে এ দিন বিক্ষোভ দেখান প্রশিক্ষিত প্রার্থীরা। তাঁরা পথ অবরোধ করেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সামনে। তাঁদের অন্ধকারে রেখে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রার্থীরা এই বিভ্রান্তির দায় চাপাচ্ছেন পর্ষদের উপরেই। কারণ, অক্টোবরে ইন্টারভিউয়ের সময়ে সকলেরই নথি খতিয়ে দেখার কথা ছিল। কোনও অসামঞ্জস্য থেকে থাকলে তখনই তা চেখে পড়ার কথা। কিন্তু তার বদলে প্যানেলে তাঁদের নাম ঢুকিয়ে বাতিল করার পিছনে অন্য রহস্য দেখছেন প্রার্থীরা।

আরও পড়ুন: সিট নিয়ে বচসা, নিত্যযাত্রীদের প্রহারে জখম যুবক

বিক্ষোভ হয় আলিপুরের হেস্টিংস হাউসেও। বৃহস্পতিবার বারাসতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। গত তিন দিনের মতো শুক্রবারেও দিনভর ঘেরাও চলে বর্ধমানের প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে। বিকেলে দফতরে ঢুকতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন সংসদের চেয়ারম্যান অচিন্ত্য চক্রবর্তী। বর্ধমানে বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁদের কাউন্সেলিং হয়ে গিয়েছে। এ বার নিয়োগপত্র দেওয়া হোক। কিন্তু সেই দাবি মানতে রাজি নয় জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। দুপুরে কলকাতা থেকে এসে অচিন্ত্যবাবু জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের নিয়ে আলোচনা করেন। সংসদ সূত্রের খবর, ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত প্রার্থীদের নথিপত্র পরীক্ষা করা হবে। সে-দিনই পড়ুয়াদের সঙ্গে বসে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা বোঝার ও বোঝানোর চেষ্টা করবে সংসদ। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের আশ্বাস, ‘‘সমস্যা জানিয়ে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ প্রার্থীরা আশ্বস্ত হয়েছেন, এমন প্রমাণ অবশ্য মেলেনি। রাতে বর্ধমানে অনশন শুরু করেন কিছু বিক্ষোভকারী। আন্দোলন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের এক মহিলা প্রার্থী।

সূচনা থেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জট পাকানো হয়েছে বলে প্রার্থীদের অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ বলছেন, অক্টোবরে ইন্টারভিউয়ের সময় ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন) শিট ধরে ধরে পরীক্ষা করলে যে-সব বিষয় পরিষ্কার করে নেওয়া যেত, পর্ষদ তখন সেটা করেনি। এখন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে

সেই সব বিষয় সামনে আসছে। ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি। কোথাও কোথাও ক্ষোভ ছড়াচ্ছে প্রশিক্ষিতদের মধ্যেও। ওই সব বিক্ষোভকারীর অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের বদলে প্রশিক্ষণহীন পরীক্ষার্থীদেরই চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

এক শ্রেণির টেট-পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, তাঁরা আবেদনপত্রে এবং পরীক্ষার সময়ে ওএমআর শিটে নিজেদের ‘সাধারণ’ প্রার্থী বলে উল্লেখ করলেও এখন পর্ষদ তাঁদের কাছে পার্শ্বশিক্ষক, শিক্ষাবন্ধু এবং শিক্ষামিত্র হিসেবে কাজ করার নথি চাইছে। তবে পর্ষদের দাবি, ওই সব পরীক্ষার্থী ওএমআর শিটে ‘ভুল’ করে নিজেদের ‘অন্যান্য এবং পার্শ্বশিক্ষক’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তাই নিয়োগ পর্বে তাঁদের কাছে নতুন নথি চাওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, অক্টোবরে ইন্টারভিউয়ের সময়েই ওই নথি চাওয়া উচিত ছিল পর্ষদের। তা হলে নিয়োগ পর্বে বিভ্রান্তি হতো না।

কোনও কোনও এলাকায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পার্শ্বশিক্ষকেরাও। কেন?

পার্শ্বশিক্ষক সমন্বয় সমিতির অভিযোগ, এমন বেশ কিছু পরীক্ষার্থী নিয়োগপত্র পেয়েছেন, যাঁরা নিজেদের ওএমআর শিটে পার্শ্বশিক্ষক বলে দাবি করলেও আদতে পার্শ্বশিক্ষকই নন তাঁরা। ওই সব নিয়োগ বাতিলের দাবি তুলেছে সমন্বয় সমিতি।

প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে জেলায় জেলায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেটাকে আমল দিতে নারাজ। কড়া হাতে বিক্ষোভের মোকাবিলা করা হবে বলে এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘যে-সব পার্শ্বশিক্ষকের নথি আছে, তাঁদের সকলেই নিয়োগপত্র পেয়েছেন। যাঁদের নথি নেই, তাঁরা পাননি। এ ভাবে গোলমাল চলতে থাকলে পরের বছর নিয়োগের সময় পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য সংরক্ষণ থাকবে কি না, ভেবে দেখবে সরকার।’’ যে-সব পার্শ্বশিক্ষক কাজে না-গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের বেতন কাটা হতে পারে বলেও এ দিন হুমকি দেন শিক্ষামন্ত্রী।

নিয়োগ ঘিরে মামলাও অব্যাহত। পার্শ্বশিক্ষকদের হয়ে যে-আইনজীবী হাইকোর্টে লড়ছেন, সেই এক্রামুল বারি জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জেলার ৭১ জন টেট-উত্তীর্ণ প্রার্থী মামলা করে জানিয়েছেন, তাঁরা পার্শ্বশিক্ষক। রাজ্য জানিয়েছিল, শিক্ষক নিয়োগে পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য জেলা-ভিত্তিক শূন্য আসনের ১০ শতাংশ সংরক্ষিত থাকবে। বাস্তবে তা হয়নি। তিনি আরও জানান, উত্তর ২৪ পরগনার এক মহিলা প্রার্থী পৃথক একটি মামলা ঠুকে দিয়েছেন। মামলার আবেদনে তাঁর বক্তব্য, তাঁকে খড়দহের একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষিকা-পদে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগপত্র পেয়ে তিনি জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে গেলে বলা হয়, ২০১৬ সালের সার্কুলার অনুযায়ী তাঁকে চাকরিতে নিয়োগ করা যাবে না। কী কারণে তাঁর নিয়োগপত্র কার্যকর হবে না, মামলার আবেদনে সেই প্রশ্ন তুলেছেন ওই মহিলা।

হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ জানান, শিক্ষক নিয়োগে প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনানের আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজ্যের তখনকার অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত। রাজ্য সরকার সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বলে অভিযোগ তুলে কয়েকশো প্রার্থী মামলা দায়ের করেছেন। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে সেই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।

Protests Primary recruitment West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy