আমাদের ঘরে তোমাদের কী কাজ— কার্যত এমনই প্রশ্ন তুলে ‘টিম প্রশান্ত কিশোরের’ বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর জন অভিযোগ সেলের সরকারি কর্তারা। ঘটনাচক্রে, এর পরেই বদলি হয়েছেন ওই সেলের দুই শীর্ষ পদাধিকারী। যদিও নবান্নের দাবি, এই বদলির সঙ্গে অন্য কোনও ঘটনার যোগ নেই।
ঘটনার সূত্রপাত ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। তিন দিন আগে সরকারি জন অভিযোগ সেলে গিয়েছিল ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের দল। উদ্দেশ্য, তাঁদের কাছে যে সব অভিযোগ বা সমস্যা জমা পড়েছে, জন অভিযোগ সেলের মাধ্যমে সেগুলি নিরসনের ব্যবস্থা করা। বেঁকে বসেন সরকারি অফিসারেরা। শেষ পর্যন্ত সরকারি দফতর থেকে চলে যেতে হয় পিকে’র দলের সদস্যদের।
কাকতালীয় ভাবে তার পরেই বদলি করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অধীন জন অভিযোগ সেলের প্রধান আমলা ওঙ্কার সিংহ মিনা এবং ডব্লিউবিসিএস অফিসার অভিজিৎ লাটুয়াকে। যদিও নবান্নের দাবি, দু’টি ঘটনার মধ্যে কোনও যোগ নেই।
সে দিন কী হয়েছিল, তা জানতে সরকারি জন অভিযোগ সেলের কর্তা মিনাকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের জবাব দেননি। তবে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের ‘ব্লু টিক’ জানান দিচ্ছে, আনন্দবাজারের প্রশ্ন তিনি দেখেছেন। জন অভিযোগ সেলের প্রধান কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরীকে ফোনে পাওয়া যায়নি। মেসেজের জবাব দেননি তিনিও। বার বার চেষ্টা করেও প্রশান্ত কিশোরের অফিস থেকে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যদি তাঁদের তরফে কিছু জানানো হয়, তা যথা নিয়মে প্রকাশ করা হবে।
নবান্ন সূত্রের খবর, বিবাদী বাগের খাদি ভবনে তৈরি হওয়া জন অভিযোগ সেলে গত বুধবার যান পিকে’র দলের সাত-আট জন সদস্য। সরকারি অফিসারদের তাঁরা জানান, ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির সঙ্গে সরকারি জন অভিযোগ সেলের সমন্বয়সাধন করতেই তাঁরা এসেছেন। তাঁদের একটি দল সেখানে বসে কাজ করতে চান।
এ কথা শুনে কার্যত আকাশ থেকে পড়েন সরকারি কর্তারা। প্রশ্ন ওঠে, যেখানে আইএএস, ডব্লিউবিসিএস অফিসারেরা কাজ করছেন, সেখানে
বেসরকারি রাজনৈতিক পরামর্শদাতার সদস্যরা একই সঙ্গে কী করে কাজ করবেন? এই প্রশ্ন ওঠে। নবান্নে পুরো ঘটনা জানান কর্তারা।
সরকারি জন অভিযোগ সেলের এক কর্তা জানান, নেতা-মন্ত্রী, পঞ্চায়েত-পুরকর্তা, সরকারি আমলাদের দুর্নীতির অভিযোগের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে যেখানে ‘তদন্ত’ করা হচ্ছে, সেখানে ‘বেসরকারি’ সংস্থার থাকা উচিত বলে তাঁরা মনে করেন না। পিকে’র দলের সদস্যদের মিনা বোঝান, সরকারের জন অভিযোগ সেলের সঙ্গে অন্য কোনও সংস্থার কাজকর্ম একই সঙ্গে চলতে পারে না। তা চলতে হলে সরকারি নিয়ম মেনে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সরকারের নির্দিষ্ট ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ থাকা জরুরি। তা না থাকায় সরকারি ভবনে বেসরকারি প্রতিনিধিদের থাকা যে ‘বাঞ্ছনীয়’ নয়, সেই বার্তাও দেওয়া হয়। বিকেলে খাদি ভবন ছেড়ে চলে যায় প্রশান্ত কিশোরের বাহিনী। শনিবার পর্যন্ত তাঁরা আসেননি। তবে খাদি ভবনের ‘রেজিস্টার’ থেকে পিকে’র দলের ‘এন্ট্রি-এগজ়িট’-এর ‘প্রমাণ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলেও ওয়াকিবহাল সূত্রের অভিযোগ। এর পিছনে প্রশাসনের শীর্ষ মহলের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলেও ওই সূত্রের দাবি।
নবান্নের খবর, গত বৃহস্পতিবার তৃণমূলের এক যুব নেতা জন অভিযোগ সেলের এক কর্তাকে ডেকে পাঠান। ওই যুব নেতা চেয়েছিলেন, ‘দিদিকে বলো’র যাবতীয় অভিযোগ সরকারি জন অভিযোগ সেল থেকেই নিষ্পত্তি করা হোক। পরে পিকে’র দল তা সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীদের জানিয়ে দেবে। কারণ, বেসরকারি সংস্থার পক্ষে অভিযোগের নিষ্পত্তি সহজ কাজ নয়। তা ব্যয়সাপেক্ষও বটে। কিন্তু ওই সরকারি কর্তা
জানিয়ে দেন, সরকারের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার কাজ একাকার
না করে দেওয়াই ভাল। তাতে সরকারের ভাবমূর্তি অটুট থাকবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বদলি হয়ে যান মিনা এবং লাটুয়া।
গত ৩১ জুলাই ওই পদে মিনাকে বসানো হয়েছিল। তার আগে দু’তিন সপ্তাহের জন্য সেখানে আনা হয়েছিল আইএএস অফিসার বরুণ রায়কে। তিনি একটি নামী উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগ করে জন অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। বেসরকারি সংস্থার হাতে সরকারি ‘স্পর্শকাতর’ অভিযোগ চলে যেতে পারে বলে ওই প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছিল। সরতে হয়েছিল বরুণ রায়কেও। এ বার অবশ্য প্রশান্তের দলই তাদের কাছে আসা অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছিল সরকারি দফতরে।