এক সপ্তাহে— ৩। দু’মাসে— ৯।
খেলায় হারজিতের কোনও স্কোর নয়, এই হিসাব চুরির। রামপুরহাটের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে পরপর কয়েকটি বাড়িতে চুরির জেরে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অভিযোগ, তালাবন্ধ করে এক দিনের জন্যও বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার জো নেই ওই এলাকার বাসিন্দাদের। কোন ফাঁকে চোর এসে সব কিছু সাফ করে দিচ্ছে, তার সন্ধান মিলছে না।
বৃহস্পতিবার রাতেও একই রকম ভাবে ছোটন শেখ নামে স্থানীয় এক পাথর ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় চোরের দল। দুষ্কৃতীরা তালা ভেঙে আলমারিতে থাকা নগদ টাকা ও গয়না চুরি করে চম্পট দিয়েছে বলে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী। এ বারও ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও কোনও দিশা পাচ্ছে না রামপুরহাট থানার পুলিশ। গোটা ঘটনায় পুলিশ কর্তাদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার দূর অস্ত, এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাটুকুও তারা দিতে পারছে না বলে অভিযোগ করছেন বাসিন্দারা।
এ দিকে, এ ভাবে চুরির ঘটনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওই ওয়ার্ডের (বিশেষ করে সুকান্ত পল্লি) মানুষ। এলাকার এক বধূ বলছেন, ‘‘পাড়ায় এখন দিনের বেলাতেও ঘরে একা থাকা দায় হয়ে উঠেছে। এলাকার প্রায় সমস্ত পুরুষ মানুষই দিনের বেলায় নানা কাজে বাইরে থাকেন। সেই সুযোগে এলাকা ঘুরে পরিদর্শন করে চোরের দল। রাতের দিকে যে ঘরগুলি তালাবন্ধ থাকে, সেখানেই হানা দিচ্ছে চোরের দল।’’ ওয়ার্ডের চার বারের সিপিএম কাউন্সিলর সঞ্জীব মল্লিকও শুক্রবার অভিযোগ করেন, সুকান্ত পল্লিতে এ নিয়ে গত এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি বাড়িতে গৃহকর্তার অবর্তমানে চুরির ঘটনা ঘটল। গত দু’মাসে ওয়ার্ডের মোট ন’টি বাড়িতে একই রকম চুরির ঘটনা ঘটেছে। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘পুলিশ হয়তো দু’এক জনকে ধরে জেলে পাঠাচ্ছে। কিন্তু কোনও ঘটনাতেই চুরি যাওয়া মাল উদ্ধার করতে পারেনি। চুরি আটকে এলাকার মানুষকে নিরাপত্তাও দিতে পারেনি।’’
এ ব্যাপারে এলাকায় যে ক্ষোভ জমছে, তা টের পেয়েছেন জেলা পুলিশের কর্তারাও। তবে, গোটা ঘটনায় রামপুরহাটের নতুন এসডিপিও কমল বৈরাগ্যের বক্তব্য, তিনি এই শহরে নতুন এসেছেন। আইসি-র কাছে এ নিয়ে খোঁজ নেবেন। তবে, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ পুলিশকে এখন ভরসা করতে হচ্ছে আরজি পার্টির উপরে। কমলবাবুর বক্তব্য, ‘‘এলাকায় যখন চুরি হচ্ছে, তখন এলাকার বাসিন্দারা কেন আরজি পার্টি গড়ছেন না? এলাকাবাসী আরজি পার্টি তৈরি করুক। সেই সঙ্গে পুলিশও তাদের টহলদারি বাড়াবে। এর পরেও পরিস্থিতির বদল হচ্ছে কি না দেখা যাবে।’’
যা শুনে সঞ্জীববাবু জানিয়েছেন, শহরের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ভরসা পুলিশই। পুলিশ এলাকায় বৈঠক করে আরজি পার্টি গড়ে দিলে ওয়ার্ডের মানুষ তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে অবশ্যই সহযোগিতা করবেন।