Advertisement
E-Paper

অস্ত্র ছাড়া এ বার মহরমের মিছিল

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখতে মহরম কমিটি, জনপ্রতিনিধি, ইমাম থেকে প্রশাসন সকলের মিলিত প্রচেষ্টা এক অনন্য নজির গড়ল। বলছেন, সামজের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। সফল প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে, দুর্গাপুজো উদ্যোক্তা থেকে শহরবাসী সকলেই। সিউড়ির বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সিউড়ি শহর এমন এক নজির গড়ল যা গোটা রাজ্যের কাছেই দৃষ্টান্ত, অনুপ্রেরণা হতে পারে।’’

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫২
মহরম: অস্ত্র ছাড়াই সিউড়ির ১৬টি মহরম কমিটি মহরমের মাতমে সামিল হল রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

মহরম: অস্ত্র ছাড়াই সিউড়ির ১৬টি মহরম কমিটি মহরমের মাতমে সামিল হল রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

এ বার আর মহরমে অস্ত্র মিছিল নয়। এটা শুধু কথায় সীমাবদ্ধ না রেখে কাজেও করে দেখাল সিউড়ির সবকটি মহরম কমিটি।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখতে মহরম কমিটি, জনপ্রতিনিধি, ইমাম থেকে প্রশাসন সকলের মিলিত প্রচেষ্টা এক অনন্য নজির গড়ল। বলছেন, সামজের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। সফল প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে, দুর্গাপুজো উদ্যোক্তা থেকে শহরবাসী সকলেই। সিউড়ির বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সিউড়ি শহর এমন এক নজির গড়ল যা গোটা রাজ্যের কাছেই দৃষ্টান্ত, অনুপ্রেরণা হতে পারে।’’

রবিবার সকাল থেকে সেটাই প্রত্যক্ষ করলেন শহরবাসী। তাজিয়া নিশান, ডিজে, ঢোল, তাসাপার্টি সবই ছিল। ছিল না কেবল অস্ত্র। মূলত মাতম পালনের মাধ্যমেই পালিত হল মহরম। এমন শান্তিপূর্ণ ভাবে দিনটি পালিত হওয়ায় খুশি মহরম কমিটি, জনপ্রতিনিধি থেকে ইমাম সকলেই। শুধুমাত্র শোক বা মাতম পালনেই মহরম সীমাবদ্ধ রেখে গোটা শহর ঘুরলেন কমিটি সদস্যরা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল দুর্গাপুজো কমিটিগুলিও মহরমের মাতমে সামিল সদস্যদের জন্য ছোলা বাতাসা ও তৃষ্ণার জল এগিয়ে দিয়ে।

গত বছর মহরমের দিন অস্ত্র মিছিল না করে চমক দিয়েছিল সিউড়ির কাটাবুনী যুবকল্যাণ মহরম কমিটি। কোনও তাজিয়া, নিশান, বাজনা লাঠি বা তরোয়াল খেলা ছাড়াই মিছিল করেছিল ওই মহরম কমটি। কমিটির দাবি ছিল, মহরম কোনও উৎসব নয়, তাই শোভাযাত্রা শুধুমাত্র শোক বা মাতম পালনেই মহরম সীমাবদ্ধ রেখে গোটা শহর ঘুরেছি। সেটাই এ বার বৃহত্তর ক্যানভাসে করতে রাজি হয়ে যান শহরের ১৬টি মহরম কমিটি।

যেহেতু দুর্গপুজো ও মহরম— দুটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয়, তাই এ বছর দুর্গাপুজো ও মহরমের আগে সমন্বয় কমিটি গড়ে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ বজায় রাখতে একটা উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। এ বার পরিস্থিতি আরও আলাদা ছিল। একই দিনে মহরমের মিছিল ও বিসর্জন নিয়ে টানাপড়েনের মাঝেই শহরের ১৬টি মহরম কমিটির কাছে গত বারে কাটাবুনীর আদলে অস্ত্রছাড়া মিছিল করার আহ্বান জানানো হয়। সিউড়ির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর কাজী ফরজুদ্দিন, তৃণমূলের জেলা সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি, একটি মহরম কমিটির সম্পাদক তথা তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের নেতা রাজীবুল ইসলাম ২৫টি মসজিদের ইমাম ও শহরের বিদ্বজ্জনেরা। সেখানেই এ ব্যাপারে সহমত পোষন করেন ১৫টি কমিটি। বাকি কমিটিও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যায়।

কাজী ফরজুদ্দিন বলেন, ‘‘মহরম আদতে শোক পালনের। সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয় এমন কিছু না করে সুষ্ঠভাবে সবটা করা যায় সেই আবদেন ওঁদের কাছে রাখা হয়েছিল। সবাই কথা রেখেছেন।’’

সিউড়ি পুলিশ লাইন মসজিদের ইমাম মুফতি নজরুল ইসলাম আগেই জানিয়েছিলেন, ‘‘শোকপালেনের জন্যই দিনটি পালিত হয়। অস্ত্র মিছিল শোকপালনের পদ্ধতি নয়।’’ অস্ত্র ছাড়া মিছিল করাকে এ দিন সাধুবাদ জানান ইমাম। একই সুরে সোনাতোড় পাড়া মজসজিদের ইমাম নুর আলম ও কাটাবুনি মসজিদের ইমাম নুর মহম্মদদেরও। মহরমকমিটির যারা পদপ্রদর্শক সেই কাটাবুনি মহরম কমিটির সম্পাদক হীরা খান বলছেন, ‘‘দেশের স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে, সম্প্রীতি রক্ষার জন্য এটা কর্তব্যও।’’

এমন শুভ উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছে দুটি দুর্গাপুজো কমিটি। তার মধ্যে একটি যাত্রিক। ঠিক যে দুর্গা মণ্ডপের সামনে থেকে শুরু হয় মহরমের মিছিল। অন্যটি ত্রাণসমিতি পরিচালিত সোনাতোড় পাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। যাত্রিকের সদস্য বিবেকানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘প্রথমে আমরা মানুষ, ধর্ম পরে। ওঁরা যেভাবে শোভাযাত্রা করছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’’ একই বক্তব্য সিউড়ির অপর ক্লাবের সদস্য তথাগত দাসেরও। তিনি বলছেন, ‘‘পরস্পর পরস্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকব এটাই তো চাই।’’

Festival Muharram Suri সিউড়ি মহরম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy