Advertisement
E-Paper

গুজবে গণপিটুনি সদরেই

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন যেখানে গণপিটুনির ঘটনাটি ঘটেছে, সিউড়ি শহরের সেই স্টেশন মোড় জনবহুল এলাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪৫
উন্মত্ত: ছেলেধরা সন্দেহে মারধর। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

উন্মত্ত: ছেলেধরা সন্দেহে মারধর। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে সিউড়ি স্টেশনবাজার সংলগ্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন পাঁচ জন। দু’জন আবার এক শিশুকে লাড্ডু খাওয়াতেও গিয়েছিলেন। এ দিকে, এলাকায় শিশুচোর ঘুরছে বেশ কিছু দিন হল এমন গুজব ছড়িয়েছে। ‘বহিরাগত’দের রকম সকম দেখে স্থানীয়দের সেই সন্দেহ হতেই শুরু হয় বেদম মার। আরও বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারত, কিন্তু খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সিউড়ি থানার পুলিশ। বিস্তর টানাপড়েনের পরে গণপিটুনির শিকার পাঁচ জখমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

কাউকে ছেলেধরা বলে সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দিন, এই মর্মে টানা প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ। তাতে সফল হয়েছে জেলারই কাঁকরতলা থানা। দিন পনেরোর মধ্যে কিশোর ও যুবক মিলিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন মোট পাঁচ জনকে উদ্ধার করে কাউকে হোমে, কাউকে মানসিক হাসপাতাল, কাউকে বাড়ি পাঠিয়েছে কাঁকরতলা পুলিশ। সেখানে নিছক সন্দেহের বশে গণপিটুনি রোখা গেল না জেলা সদর সিউড়িতেই। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলছেন, ‘‘প্রহৃতেরা কে, কোথা থেকে এসেছেন সে সব বলছি না। প্রাথমিক ভাবে যেটুকু জানা গিয়েছে, ওঁরা কেউ ছেলেধরা নন, নির্দোষ। গুজবের জন্যই হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। আমাদের আবেদন, এ ভাবে গুজব ছড়িয়ে বা গুজবে কান দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’’ এলাকাবাসীর একাংশ অবশ্য পুলিশের দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি, নির্দোষ হলে কেন গাড়ি থামিয়ে শিশুকে লাড্ডু খাওয়াবে ওরা?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন যেখানে গণপিটুনির ঘটনাটি ঘটেছে, সিউড়ি শহরের সেই স্টেশন মোড় জনবহুল এলাকা। বেশ কিছু দোকানপাট রয়েছে। কাছেই রয়েছে একটি স্কুল। সিউড়ি-বোলপুর রাস্তার সঙ্গে মিশেছে স্টেশন, সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ ও ফকিরপাড়া যাওয়ার রাস্তা। ওই এলাকার সঙ্গে জুড়ে শহরের ১৯, ১৭, ৩ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। ছেলেধরা এসেছে, এই খবর পাওয়ার পরে উত্তেজিত জনতার ভিড় একত্রিত এবং চড়াও হতে সময় লাগেনি।

আক্রান্তদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়ি ঘিরে জনতা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্টেশন মোড়ে দীর্ঘ সময় চার চাকা থামিয়ে ওঁদের ঘোরাফেরাই সন্দেহজনক ছিল। কী প্রয়োজন, কে তাঁরা— সে সব জিজ্ঞাসা করলেও ঠিক উত্তর মেলেনি। এমনও বলা হয়েছিল, ওঁরা নাকি সিআইডির লোক। সেটা যে আসল নয়, পরে তা জানাও যায়। দলে থাকা এক মহিলা এলাকার এক শিশুকে লাড্ডু খাওয়াচ্ছে, এটা দেখার পরেই ছেলেধরা সন্দেহ আরও দৃঢ় হয় জনতার। কেন লাড্ডু খাওয়ানো হল, তারও জবাব না মিললে শুরু হয় মার। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রত্যেককে রাস্তায় ফেলে বাঁশ, লাঠি হাতের সামনে যে যা পেয়েছেন তাই দিয়ে পেটাতে থাকেন। তাতে যোগ দেন এলাকার কিছু মহিলাও। ভাঙচুর করা হয় গাড়িটিও।

এ ভাবে মারলে মৃত্যুও হতে পারে, উত্তেজিত ভিড়কে এমন পরামর্শ দিয়েছিলেন কেউ। এর পরেই পাঁচ জনকে তুলে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় একটি স্কুলের মধ্যে আটকে রাখা হয়। সেই সময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। ছিলেন সিউড়ি থানার আইসি দেবাশিস পান্ডা। কিন্তু, আটক পাঁচ জনকে পুলিশের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না উত্তেজিত ভিড়। তখন পুলিশের সঙ্গে বচসা বেধে যায়। শেষ পর্যন্ত দুটোর পরে জখম পাঁচ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এর আগেও ওই এলাকা থেকে বাচ্চা গায়েব হয়েছে। সেই জন্যই সাধারণ মানুষের এত ক্ষোভ। তবে গণপিটুনির ঘটনা শহরে এই প্রথম নয়। এর আগে বহু বার চোর সন্দেহে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। গণপিটুনির শিকার আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। তার পরেও আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে গণপিটুনির প্রবণতা কমেছে না। সেখানে ব্যতিক্রম কাঁকরতলা।

Violence Beating Rumour
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy