Advertisement
E-Paper

একটি মাতৃযানের ভরসায় পাহাড়ের স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ের গ্রামগুলির মধ্যে দূরত্ব, যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো নানা কথা মাথায় রেখে বাম আমলে অযোধ্যা পাহাড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ করা হয়।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৮
অ্যাম্বুল্যান্স পড়ে রয়েছে পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য ভবনে। নিজস্ব চিত্র

অ্যাম্বুল্যান্স পড়ে রয়েছে পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য ভবনে। নিজস্ব চিত্র

চালক অবসর নিয়েছেন। কাজ নেই অ্যাম্বুল্যান্সেরও। মাস ছয়েক হয়ে গেল, সেটি পড়ে রয়েছে জেলা স্বাস্থ্য ভবনে। সবেধন নীলমণি একটি মাতৃযানের ভরসায় দিন কাটছে অযোধ্যা পাহাড়ের পঞ্চাশ-ষাটটি গ্রামের।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ের গ্রামগুলির মধ্যে দূরত্ব, যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো নানা কথা মাথায় রেখে বাম আমলে অযোধ্যা পাহাড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ করা হয়। বছর দু’য়েক আগে ১০২ নম্বরে ফোন করে পাওয়া যাবে বলে আরও একটি অ্যাম্বুল্যান্স চালু হয়। পাহাড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক জয়ন্ত মান্ডি জানান, চালু হওয়ার মাস ছয়েক পর থেকেই সেটির আর দেখা মেলেনি। এ দিকে, মাস ছয়েক হল সাবেক অ্যাম্বুল্যান্সের চালক অবসর নিয়েছেন। তার পরেই মুশকিল।

কেমন মুশকিল?

গোটা ষাটেক গ্রাম। আর একটিই মাতৃযান। আপদে-বিপদে পাহাড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা তেলিয়াভাসা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কোনও রোগীকে বাইরে নিয়ে যেতে হলে এখন সেটিই ভরসা। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মাতৃযান যদি কোনও রোগীকে নিয়ে পুরুলিয়া সদরে রওনা হয়, ফিরতে ফিরতে অন্তত সাড়ে তিন বা চার ঘণ্টা। ততক্ষণে অন্য কোনও রোগীকে নিয়ে যাওয়ার দরকার পড়লেই শুরু হচ্ছে সমস্যা। তেলিয়াভাসার শিবলাল মুর্মুর কথায়, ‘‘রোগীর কপাল ভাল থাকলে তবেই মাতৃযান মেলে।’’

সম্প্রতি পাহাড়ের ধানচাটানি গ্রামে গিয়ে জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানতে চেয়েছিলেন, ফোন করলে মাতৃযান আসে? বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আসে বটে। তবে সকালে ফোন করলে গাড়ি গ্রামে পৌঁছতে অনেক সময়েই বিকেল গড়িয়ে যায়। ওই গ্রামের বাসিন্দা রাজীব মান্ডি বলেন, ‘‘অতক্ষণ কি রোগীকে রাখা যায়? বাধ্য হয়ে গাড়ি ভাড়া করতে হয়। প্রায় আড়াই হাজার টাকা পড়ে।’’

বাঘমুণ্ডি ব্লকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৯৮ শতাংশ। কিন্তু ব্লকেরই অযোধ্যা পাহাড় এলাকায় সেই হার ৮০ শতাংশের নীচে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে। পাহাড়ে কম প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের কারণ হিসেবে অ্যাম্বুল্যান্স না থাকার কথাও উঠে আসছে পর্যালোচনায়।

ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দেখা গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে একেবারে শেষ মুহূর্তে অনেকে মাতৃযানের জন্য ফোন করেন। তখন হয়তো সেই গাড়ি কাউকে সদরে নিয়ে গিয়েছে। গাড়ি পৌঁছনোর আগেই প্রসব হয়ে যায়। কখনও মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে।’’

এ দিকে, বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো পাহাড়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েছিলেন। সংস্থা সূত্রে খবর, স্থানীয় সমস্যার জন্য আপাতত পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। নেপালবাবু বলেন, ‘‘অ্যাম্বুলেন্স যে বন্ধ, তা জানা ছিল না। খোঁজ নিচ্ছি।’’

জেলাশাসক জানিয়েছেন, সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যাপারে তিনি স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি বলেন, ‘‘দেখছি, সমস্যার সমা ধানে কী করা যায়।’’

জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) হিমাদ্রি হালদার বলেন, ‘‘সমস্যার ব্যাপারটা দফতরের নজরে রয়েছে। দ্রুত, সম্ভব হলে চলতি সপ্তাহেই ১০২ নম্বরে ফোন করে ডাকার জন্য পাহাড়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করা হবে।’’

Ambulance Purulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy