Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

স্কুল সেরার পাশে প্রাক্তনী

টানা চল্লিশ বছর পড়ানোর পরে ২২ বছর আগে অবসর নিয়েছেন। তারপরেও স্কুলের সঙ্গে যোগটা ছিঁড়ে যায়নি। স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনে তাঁর আসা চাই-ই। নিজের হাতে ‘সোনার মেডেল’ তুলে দিতে হবে যে!

সুপ্রতিককে মেডেল পরাচ্ছেন নৃপেন্দ্রনাথবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

সুপ্রতিককে মেডেল পরাচ্ছেন নৃপেন্দ্রনাথবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়ূরেশ্বর (বীরচন্দ্রপুর) শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১১
Share: Save:

টানা চল্লিশ বছর পড়ানোর পরে ২২ বছর আগে অবসর নিয়েছেন। তারপরেও স্কুলের সঙ্গে যোগটা ছিঁড়ে যায়নি। স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনে তাঁর আসা চাই-ই। নিজের হাতে ‘সোনার মেডেল’ তুলে দিতে হবে যে!

নিজের খরচে ওই মেডেল তুলে দেন ৮৪ বছরের নবতিপর নৃপেন্দ্রনাথ দাস। এ বারও তেমনটা হয়েছে। মাড়গ্রাম থানার বশোয়ার বাড়ি থেকে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে এক সময়ের কর্মস্থল বীরচন্দ্রপুর নিত্যানন্দ হাইস্কুলে ছুটে এসেছিলেন তিনি। এ বার মাধ্যমিকে প্রথম হওয়া ছাত্রকে স্ব-হস্তে মেডেল পরিয়ে দিয়ে, প্রাণভরে বড় হওয়ার আশির্বাদ করে তবে বাড়ি ফিরেছেন।

নৃপেন্দ্রনাথবাবু জানালেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় আগ্রহ ফেরাতেই ২০০৪ সাল থেকে নিয়মিত পুরস্কার দিয়ে আসছেন তিনি। শুক্রবার স্কুলের ৬৯ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে সেই পুরস্কার পেয়েছে স্কুলের তরফে মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক সুপ্রতীক ঘোষ। নৃপেন্দ্রনাথবাবু মেডেল নিজের হাতে পরিয়ে দিচ্ছেন, মাথা নীচু করে সেই পুরস্কার নিচ্ছে সুপ্রতীক— এমন দৃশ্যের জন্ম হতেই হাততালিতে ভরে যায় স্কুল চত্বর। সে সময়ে উপস্থিত ছিলেন মল্লারপুর পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অরুণ মণ্ডল, প্রাক্তন শিক্ষক সন্তোষ গড়াইরা। হাত-তালি থামতেই কাঁপতে কাঁপতে মাইক্রোফোন হাতে নেন এই নবতিপর। শোনালেন অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘লেখাপড়া’, নজরুল ইসলামের ‘খুকু ও কাঠবিড়ালি’ এবং পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘সোনার মেডেল’।

স্কুলেই বাংলা-সহ সমস্ত বিষয় পড়াতেন নৃপেন্দ্রনাথবাবু। দেশের স্বাধীনতার ১০ বছর পরে, ১৯৫৭ সালে চাকরি। ৯৪ সালে অবসর নেন তিনি। অবসরের দশ বছরের মাথায় স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নিজেকে সামিল করেন এই শিক্ষক। সেই শুরু, তারপর থেকে কখনও একা, কখনও পরিবারের কাউকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসে আসেন তিনি। এ দিন যেমন মেজো মেয়ের সঙ্গে এসেছিলেন। হাতে-হাত ধরে টলমল পায়ে মঞ্চে ওঠেন তিনি। বলছেন, ‘‘স্কুলের সঙ্গে এত দিনের চেনা-জানা। কত স্মৃতি। এখন সুযোগ যখন আছে, এটুকু করব না?’’

প্রাক্তন শিক্ষকের এই পুরস্কারকে সামান্য করে দেখতে রাজি নন বীরচন্দ্রপুর নিত্যানন্দ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোককুমার ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর মতো মানুষজনের কাছে স্কুল অনেক ঋণী। এই রকমের ভালবাসাই তো আজ স্কুলকে মহিরূহে পরিণত করতে সাহায্য করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Felicitation School Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE