Advertisement
E-Paper

কাজ খুইয়ে ভরসা দু’টাকার চাল, মুলো

বাড়ির বাইরে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন অনিল দাস। উঠোনে সংস্কারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত অনিলবাবুর স্ত্রী শিবানীদেবী। অথচ কয়েক মাস আগেও শীতের দিনে রোদের ওম নেওয়ার কথা ভাবতে পারেননি তাঁরা। পাঁচশো ও হাজারের টাকার নোট বাতিলের ধাক্কায় আক্ষরিক অর্থেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ঝালদা ২ ব্লকের ডুড়গু গ্রামের ওই দম্পতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৫
কোটশিলার দম্পতি।—নিজস্ব চিত্র।

কোটশিলার দম্পতি।—নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির বাইরে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন অনিল দাস। উঠোনে সংস্কারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত অনিলবাবুর স্ত্রী শিবানীদেবী। অথচ কয়েক মাস আগেও শীতের দিনে রোদের ওম নেওয়ার কথা ভাবতে পারেননি তাঁরা। পাঁচশো ও হাজারের টাকার নোট বাতিলের ধাক্কায় আক্ষরিক অর্থেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ঝালদা ২ ব্লকের ডুড়গু গ্রামের ওই দম্পতি।

শিবানীদেবী বিড়ি বাঁধার কাজ করেন। আর অনিলবাবু বাসের খালাসির কাজ করেন। কাজ না থাকলে তিনি সহধর্মিনীর সঙ্গে বিড়ি বাঁধেন। বড় নোট বাতিল হওয়ার পরে একদিন শিবানীদেবী জানতে পারেন, বিড়ি কারখানা আপাতত বন্ধ। এ দিকে বাস চলাচলও কমে যাওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কর্তা-গিন্নি আপাতত কাজ হারিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

অনিলবাবু বলছিলেন, ‘‘বাস বেশ কিছুদিন ধরে গ্যারাজে। কবে ফের চলবে জানি না। স্ত্রীরও কাজ নেই। ঠান্ডায় রোদ পোহানো ছাড়া আর কী কাজ?’’ পঞ্চাশ পার করা অনিলবাবু জানান, ছোট থেকেই সংসারে অভাব দেখে আসছেন। জমিজমাও নেই। সঞ্চয়ও কিছু নেই। দু’জনে মিলে খেটে সামান্য রোজগার হলেও এক ছেলেকে নিয়ে মোটের উপর মন্দ দিন কাটছিল না। ভেবেছিলেন, এ ভাবেই জীবনটা চলে যাবে। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো দু’জনেরই কাজ একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে, এমন দুর্দিনের কথা কোনওদিন তাঁরা ভাবেননি।

যে দিন প্রথমে নোট বাতিলের ঘোষণা শুনেছিলেন, অনিলবাবু ভেবেছিলেন, যাঁরা কালো নোট জমিয়ে রেখেছেন, সমস্যায় তাঁরাই পড়বেন। তাঁদের মতো দিন আনা-দিন খাওয়া লোকেদের আর কী ক্ষতি হবে? ভুল ভাঙে ক’দিন পরে। শিবানীদেবী জানান, নোট বাতিলের জন্য ব্যবসা মার খাচ্ছে। তাই মালিক আপাতত বিড়ি কারখানা বন্ধ করে দিলেন। যাত্রী কমে যাওয়ায় বাস চালানোও লাভের হচ্ছে না দেখে অনিলবাবুদের বাসও বন্ধ হয়ে গেল। সে দিন তাঁরা টের পেলেন, নোট বাতিলের ঝাপটা অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষদের জীবনও ওলোটপালোট করে দিয়েছে।

শিবানীদেবী বলেন, ‘‘দু’টো পাঁচশো টাকার নোট জমিয়ে রেখেছিলাম। সেটাই ভাঙিয়ে কয়েকদিন চালানো হল। ভরসা বলতে দু’টাকা কেজির চাল। আর সব্জির মধ্যে মুলো এখন সস্তায় মিলছে। মুলো শাকের সঙ্গে ভাত খাচ্ছি।’’ অনিলবাবুর আক্ষেপ, ‘‘রোজগার নেই বলে দোকানেও ধার দিচ্ছে না। জানি না কতদিন টানা যাবে।’’

ওই এলাকার বাসিন্দা তথা বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের নেতা পরেশ মাহাতো বলেন, ‘‘জেলার প্রায় সব বিড়ি কারখানাই বন্ধ। বিড়ি শ্রমিকেরা খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। অনিল-শিবানীর মতো অনেকেই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।’’

Couple Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy