Advertisement
E-Paper

পট রাজ দরবারে গেলেই শুরু হয় মৃন্ময়ীর পুজো! বিষ্ণুপুরে হাজার বছর পট আঁকছে ফৌজদার পরিবার

কথিত রয়েছে, মল্ল রাজারা সেনাবাহিনী পরিচালনার জন্য একসময় রাজস্থান থেকে দক্ষ সেনাপতি ফৌজদারদের বিষ্ণুপুরে নিয়ে আসেন। ৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দে ‘দৈব নির্দেশে’ ১৯তম মল্ল রাজা জগৎমল্ল বিষ্ণুপুরে মৃন্ময়ীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:০২
বিষ্ণুপুরে পটচিত্র আঁকছেন ফৌজদার পরিবারের সদস্য।

বিষ্ণুপুরে পটচিত্র আঁকছেন ফৌজদার পরিবারের সদস্য। — নিজস্ব চিত্র।

শত শত বছর ধরে চলে আসছে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশের কূলদেবী মৃন্ময়ীর পুজো। আর সেই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মল্ল সেনাপতি ফৌজদার পরিবারের নাম। কারণ, গত এক হাজার বছর ধরে গঙ্গামাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমার পাশাপাশি এই পরিবারের হাতে আঁকা বিশেষ ধরনের তিনটি পটেই রাজ দরবারে পূজিতা হন দেবী মৃন্ময়ী।

কথিত রয়েছে, মল্ল রাজারা সেনাবাহিনী পরিচালনার জন্য একসময় রাজস্থান থেকে দক্ষ সেনাপতি ফৌজদারদের বিষ্ণুপুরে নিয়ে আসেন। ৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দে ‘দৈব নির্দেশে’ ১৯তম মল্ল রাজা জগৎমল্ল বিষ্ণুপুরে মৃন্ময়ীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ‘দৈব নির্দেশে’ই গঙ্গামাটির প্রতিমার পাশাপাশি মৃন্ময়ীর তিনটি পটে শুরু হয় পুজো। এ সময় মৃন্ময়ীর পট তৈরির ভার পড়ে সেনাপতি ফৌজদারের উপর। ফৌজদার নিজের হাতে আঁকা মৃন্ময়ীর পট রাজ দরবারে পেশ করেন। রাজা সেই পট দেখে মুগ্ধ হয়ে ফৌজদারের কাঁধে তুলে দেন পট আঁকার ভার। সেই সময় থেকেই মৃন্ময়ীর পট এঁকে চলেছে ফৌজদার পরিবার।

হাজার বছরের রীতি মেনে প্রতি বছর পুজো শুরুর ১৫ দিন আগে থেকে শুরু হয়ে যায় মল্লরাজ কূলদেবী মৃন্ময়ীর পুজো। যথাক্রমে জিতাষ্টমীর পরের দিন, মান চতুর্থী এবং দুর্গা ষষ্ঠী এই তিন দিন স্থানীয় একটি পুকুরে বিশেষ পুজো করে মন্দিরে নিয়ে আসা হয় বড় ঠাকরুণ, মেজো ঠাকরুণ এবং ছোট ঠাকরুণকে। এই তিন ঠাকরুণ আসলে তিনটি পট। পুজো শেষে প্রতিমা নিরঞ্জন করা না হলেও পটগুলি নিরঞ্জন করার রীতি রয়েছে মল্ল রাজ পরিবারে। ফলে প্রতি বছরই নিয়ম করে এই তিনটি পট হাতে আঁকতে হয় ফৌজদার পরিবারকে।

এই পট আঁকার উপকরণও একেবারে ভিন্ন। হাজার বছরের পুরানো রীতি মেনে এখনও মূলত বিভিন্ন গাছের পাতা, ফুল, ফল, পাথর এবং মাটি থেকে রঙ বার করে ব্যবহার করা হয়। ছাগলের লেজের লোম দিয়ে তৈরি হয় তুলি। সেই তুলি দিয়ে আঁকা হয় পট। ফৌজদার পরিবারের সদস্য তথা পটশিল্পী সন্দীপ ফৌজদার বলেন, ‘‘একেকটি পট নিখুঁত ভাবে আঁকতে বিস্তর সময় লাগে। তাই পুজোর অন্তত তিন-চার মাস আগে থেকেই পট তৈরির কাজ শুরু করি। এই পটে কোনও রাসায়নিক রঙ ব্যবহার করা হয় না। সীম পাতার নির্যাস থেকে সবুজ, কাঁচা হলুদ থেকে হলুদ, বিশেষ ধরনের মাটি এবং পাথর থেকে খয়েরি ও বাদামি রঙ তৈরি করে এই পটগুলি আঁকা হয়। বংশ পরম্পরা আমাদের পরিবার এই পটগুলি এঁকে আসছে।’’

সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে মল্ল রাজত্ব। কার্যত ধুলোয় মিশে গিয়েছে মল্লগড়ের বিশাল প্রাসাদ। কিন্তু অতীতের ঐতিহ্য, পরম্পরা, আভিজাত্য এবং সাবেকিয়ানার প্রতীক হয়ে মল্ল রাজদরবারে আজও নিয়ম মেনে প্রতিমা আর ফৌজদার পরিবারের হাতে আঁকা পটে পূজিতা হচ্ছেন মল্ল রাজবংশের কূলদেবী মৃন্ময়ী।

Malla Royal Family
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy