Advertisement
E-Paper

মোদীর কেন্দ্রে ফের সরানো হবে ব্যবসায়ীদের! বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা সম্প্রসারণ করতে কোপ পড়তে চলেছে দোকানে

কংগ্রেস নেতা অজয় রায়ের প্রশ্ন, বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার অন্য অনেক রাস্তা রয়েছে, সেগুলি সম্প্রসারণ না করে কেন এই ডালমান্ডিকেই সম্প্রসারণ করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:২৭
Government announce plans to widen road near kasha Vishwanath, displacement fears

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ভক্তসমাগম। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা ভেবে মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা ডালমান্ডি সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে বহু পুরনো এক বাজারের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে মন্দিরগামী সেই ডালমান্ডি সড়ক। তা সম্প্রসারণের ঘোষণা হতেই মাথায় হাত বিক্রেতাদের। ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু সেই সঙ্গে জানিয়েছে, এত দিন ধরে ওই এলাকার দোকানগুলি থেকে যে অনাদায়ী কর রয়েছে, তা ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হবে। আর তা নিয়েই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বিক্রেতাদের একাংশের মধ্যে।

উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে বারাণসীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প হতে চলেছে এই ডালমান্ডি সড়কের সম্প্রসারণ। ৬৫০ মিটার দীর্ঘ এই সড়কের দু’পাশে রয়েছে প্রায় ৫০০টি দোকান। স্থানীয়দের দাবি, ২০০ বছর ধরে এই বাজারে মণিহারি থেকে গেরস্তালির জিনিস, গয়না-সহ বিভিন্ন জিনিস বেচাকেনা চলছে। বারাণসী শহরে এই রাস্তা অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। এখন এর প্রস্থ প্রায় ৩ থেকে ৪ মিটার। তা চার গুণ বেশি চওড়া করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। সম্প্রসারণের পরে রাস্তার দৈর্ঘ্য হবে ১৭.৪ মিটার। এই প্রকল্পে সরকারের খরচ হবে ২১৫.৮৮ কোটি টাকা।

পাঁচ মাস আগে প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে বারাণসী পুরসভা। এ বার তারা কাজের দায়িত্বে থাকা পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (ডিডব্লিউডি)-কে নির্দেশ দিয়েছে, যে সব দোকান উচ্ছেদ হচ্ছে, তাদের মালিকদের যখন ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হবে, তার থেকে অনাদায়ী কর থাকলে, সেই টাকা বাদ দিতে হবে।

এই ডালমান্ডি সড়কে প্রায় ১৮৭টি বাড়ি রয়েছে। বেশির ভাগেই থাকেন মুসলিমেরা। সেই বাড়িগুলির নীচে রয়েছে দোকান। ১৮৭টির মধ্যে ১৭০টি বাড়ির জল, নিকাশি-সহ কর বাকি রয়েছে। পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বার বার কর চেয়েও মেলেনি। বারাণসী পুরসভার কমিশনার অক্ষত বর্মা জানিয়েছেন, এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জেলাশাসককে পাঠানো হয়েছে। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, দোকানিদের যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা থেকে অনাদায়ী করের টাকা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এই বিষয়টি জানার পরেই ডালমান্ডির দোকানের মালিকদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, তাঁদের অনেকেই এখন ক্ষতিপূরণ নিতে রাজি হচ্ছেন না। মালিকদের চেয়েও অসন্তোষ বেশি ভাড়াটেদের মধ্যে। কারণ, ভাড়াটেদের কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। ওই রাস্তার দু’পাশে বেশির ভাগ দোকানই ভাড়া দেওয়া। বছরের পর বছর ভাড়া নিয়েই সে সব দোকান চালান বিক্রেতারা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইজারা নিয়ে চলেছেন সে সব দোকান।

৫৫ বছরের শাহবুদ্দিন আহমেদের দোকান রয়েছে ডালমান্ডিতে। তিনি ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণের থেকে অনাদায়ী করের টাকা বাদ দিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তিনি সংবাদমাধ্যম থেকেই জানতে পেরেছেন।

ডালমান্ডি সড়কের দু’পাশে কোন কোন বাড়ি ভাঙা হবে, তা চিহ্নিত করেছে পিডব্লিউডি। অভিযোগ, সেই বাড়ির মালিকদের এখনও কোনও নোটিস পাঠানো হয়নি। কত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা নিয়েও কোনও স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। আর এতেই মাথায় হাত পড়েছে দোকানের মালিকদের একাংশের। সৈয়দ শানসা আবিদি ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে জানিয়েছেন, এই দোকানই তাঁর রোজগারের একমাত্র উপায়। দোকান না থাকলে কী করবেন, জানেন না। ৬২ বছরের রাজেশ গান্ধী জানিয়েছেন, এ রকম দিন দেখতে হবে, স্বপ্নেও ভাবেননি।

সরকারি আধিকারিকদের একটি সূত্র বলছে, গত জুলাইয়ে এই প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কারণ, এখন প্রতিদিন কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে প্রায় ১ থেকে ১.১৫ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়। সপ্তাহান্তে তা ২.৫ লক্ষ হয়। উৎসবের দিনগুলিতে সাত লক্ষের বেশি পুণ্যার্থী যান মন্দিরে। সেই কথা ভেবেই এই প্রকল্প। অন্য দিকে, দোকানিদের দাবি, তাঁদের রোজগারের বিকল্প পথ বলে দিক সরকার।

প্রকল্প নিয়ে অন্য একটি বিষয়ও রয়েছে। এই ডালমান্ডির রাস্তায় ছ’টি মসজিদ এবং একটি মন্দির রয়েছে। এই নিয়ে মুফতি-এ-শহর মৌলানা আবদুল বাতিন নোমানি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী মোদী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে খোলা চিঠি দিয়েছেন। স্থানীয় এবং মসজিদের রক্ষকেরা পিটিশন করলেও এলাহাবাদ হাই কোর্ট এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। রাজ্য সরকার আশ্বাস দিয়েছে, বদলির আগে কোনও নির্মাণ ভাঙা হবে না।

পিডব্লিউডি-র ইঞ্জিনিয়ার কেকে সিংহ জানিয়েছেন, প্রকল্পের জমি কেনা হবে। সম্মতিমূলক চুক্তির পরেই বাড়ি ভাঙা হবে। চুক্তির জন্য আইন মেনে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে। পুরসভার একটি সূত্র বলছে, ধর্মীয় ইমারত-সহ অনেক বাড়ি রাস্তা থেকে দূরে রয়েছে। সেগুলি সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ভাঙা পড়ার সম্ভাবনা কম। তবু উদ্বেগ কমছে না স্থানীয়দের।

কংগ্রেস নেতা অজয় রায়ের প্রশ্ন, বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার অন্য অনেক রাস্তা রয়েছে, সেগুলি সম্প্রসারণ না করে কেন এই ডালমান্ডিকেই সম্প্রসারণ করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে? তিনি আরও জানান, এই রাস্তার ধারে যে দোকান রয়েছে, তাতে সস্তায় জিনিসপত্র মেলে। তা ছাড়া বহু বছর ধরে এখানে হিন্দু এবং মুসলিমের সহাবস্থান রয়েছে। ‘ডালমান্ডি বাঁচাও প্রচার’ শুরু করেছে বিরোধী সমাজবাদী পার্টি। তারা জানিয়েছে, সম্প্রসারণ প্রকল্পের বিরোধিতা তারা করছে না। তবে দোকান ভাঙার আগে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বিক্রেতাদের।

Kashi Vishwanath Temple Uttar Pradesh Government varanasi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy