চোর ঢুকেছিল ঘরে। বাড়ির বড়রা না থাকলেও কনিষ্ঠতম সদস্য, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া তখন শৌচাগারে। জিনিসপত্র নাড়াচাড়ার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে আসতেই ঘরের মধ্যে চোরের মুখোমুখি! উলের হনুমান টুপিতে মুখ ঢাকা চোরকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে চিৎকার করতে থাকে অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় নামে ওই কিশোর। চোরের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। চোরও ঘরে থাকা কাটারি নিয়ে ভয় দেখাতে শুরু করে আর তার পরেই বাথরুম পরিষ্কার করার অ্যাসিড আর নুন ছিটিয়ে অভিজিৎকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। টিভি থেকে অন্য সরঞ্জাম মস্ত ঝোলায় ভরলেও বেগতিক বুঝে একটি ব্যাগে থাকা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় চোর। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে, শান্তিনিকেতনের বিনয়পল্লিতে।
শান্তিনিকেতন ও সংলগ্ন এলাকায় ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনা গত বছর একাধিক বার ঘটেছে। রবিবার বিনয়পল্লির এই ঘটনা অনেককে মনে পড়িয়ে দিচ্ছে গত বছর ৬ অক্টোবর শান্তিনিকেতনের দিগন্তপল্লিতে ভরদুপুরে ছুরি দেখিয়ে বৃদ্ধা হৈমন্তী দত্তগুপ্তের সোনার গয়না, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা। তার পর পরই শান্তিনিকেতনের গুরুপল্লিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মামাতো বোন কাজরী রায়চৌধুরীর বাড়িতে জানলা ভেঙে চুরি হয়। প্রতি ক্ষেত্রেই পুলিশের নজরদারির দাবি জানান স্থানীয়েরা।
বোলপুর-শান্তিনিকেতনে চুরি-ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগে রেখেছিল জেলা পুলিশকেও। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকেরা দুষ্কৃতীদের ‘সহজ নিশানা’ হওয়ায় তা পুলিশের চিন্তা বাড়ায়। এই অবস্থায় বয়স্কদের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে শুরু করে জেলা পুলিশ। প্রায় ২৪ ঘণ্টা টহলদারির সঙ্গে কয়েকটি বাড়িতে রাঙামাটি হেল্পলাইনের নম্বর লেখা পোস্টার সাঁটানো শুরু হয়েছে নভেম্বর থেকে। জেলা পুলিশের উদ্যোগে ‘রাঙামাটি হেল্পলাইন’ বিষয়টি তদারকির কাজ করছে। মাঝে কিছুদিন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু, বিনয়পল্লির ঘটনা আবার দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিজিতের বাবা ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বিশ্বভারতীর কর্মী। রবিবার কর্মস্থল থেকে ফিরে তিনি বাজারে গিয়েছিলেন। আর তাঁর স্ত্রী সারদাদেবী ছিলেন বাপের বাড়িতে। যেখানে ধনঞ্জয়বাবুর বাড়ি, সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে শান্তিনিকেতন মহিলা থানা। শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের আগে পুলিশি নজরদারিও বেড়েছে বলে দাবি থানার আধিকারিকদের। তারপরেও গৃহস্থ বাড়িতে চোরের হানা এবং আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান বীরভূম জেলা পুলিশের এক কর্তা।