Advertisement
E-Paper

বাধা ছাত্রের, অ্যাসিড ছিটিয়ে পালাল চোর

চোর ঢুকেছিল ঘরে। বাড়ির বড়রা না থাকলেও কনিষ্ঠতম সদস্য, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া তখন শৌচাগারে। জিনিসপত্র নাড়াচাড়ার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে আসতেই ঘরের মধ্যে চোরের মুখোমুখি!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০৪:৫৬
অকুতোভয়: এই কাটারিই ছিল চোরের হাতে, বলছে অভিজিৎ। নিজস্ব চিত্র

অকুতোভয়: এই কাটারিই ছিল চোরের হাতে, বলছে অভিজিৎ। নিজস্ব চিত্র

চোর ঢুকেছিল ঘরে। বাড়ির বড়রা না থাকলেও কনিষ্ঠতম সদস্য, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া তখন শৌচাগারে। জিনিসপত্র নাড়াচাড়ার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে আসতেই ঘরের মধ্যে চোরের মুখোমুখি! উলের হনুমান টুপিতে মুখ ঢাকা চোরকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে চিৎকার করতে থাকে অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় নামে ওই কিশোর। চোরের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। চোরও ঘরে থাকা কাটারি নিয়ে ভয় দেখাতে শুরু করে আর তার পরেই বাথরুম পরিষ্কার করার অ্যাসিড আর নুন ছিটিয়ে অভিজিৎকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। টিভি থেকে অন্য সরঞ্জাম মস্ত ঝোলায় ভরলেও বেগতিক বুঝে একটি ব্যাগে থাকা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় চোর। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে, শান্তিনিকেতনের বিনয়পল্লিতে।

শান্তিনিকেতন ও সংলগ্ন এলাকায় ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনা গত বছর একাধিক বার ঘটেছে। রবিবার বিনয়পল্লির এই ঘটনা অনেককে মনে পড়িয়ে দিচ্ছে গত বছর ৬ অক্টোবর শান্তিনিকেতনের দিগন্তপল্লিতে ভরদুপুরে ছুরি দেখিয়ে বৃদ্ধা হৈমন্তী দত্তগুপ্তের সোনার গয়না, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা। তার পর পরই শান্তিনিকেতনের গুরুপল্লিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মামাতো বোন কাজরী রায়চৌধুরীর বাড়িতে জানলা ভেঙে চুরি হয়। প্রতি ক্ষেত্রেই পুলিশের নজরদারির দাবি জানান স্থানীয়েরা।

বোলপুর-শান্তিনিকেতনে চুরি-ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগে রেখেছিল জেলা পুলিশকেও। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকেরা দুষ্কৃতীদের ‘সহজ নিশানা’ হওয়ায় তা পুলিশের চিন্তা বাড়ায়। এই অবস্থায় বয়স্কদের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে শুরু করে জেলা পুলিশ। প্রায় ২৪ ঘণ্টা টহলদারির সঙ্গে কয়েকটি বাড়িতে রাঙামাটি হেল্পলাইনের নম্বর লেখা পোস্টার সাঁটানো শুরু হয়েছে নভেম্বর থেকে। জেলা পুলিশের উদ্যোগে ‘রাঙামাটি হেল্পলাইন’ বিষয়টি তদারকির কাজ করছে। মাঝে কিছুদিন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু, বিনয়পল্লির ঘটনা আবার দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিজিতের বাবা ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বিশ্বভারতীর কর্মী। রবিবার কর্মস্থল থেকে ফিরে তিনি বাজারে গিয়েছিলেন। আর তাঁর স্ত্রী সারদাদেবী ছিলেন বাপের বাড়িতে। যেখানে ধনঞ্জয়বাবুর বাড়ি, সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে শান্তিনিকেতন মহিলা থানা। শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের আগে পুলিশি নজরদারিও বেড়েছে বলে দাবি থানার আধিকারিকদের। তারপরেও গৃহস্থ বাড়িতে চোরের হানা এবং আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান বীরভূম জেলা পুলিশের এক কর্তা।

অভিজিতের কথায়, ‘‘সন্ধ্যাবেলা বাবা, মা ছিলেন না। আমি বাথরুমে ঢুকেছিলাম। ঘরের মধ্যে জিনিপত্র নাড়াচাড়ার আওয়াজ আসছিল। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখি, কালো জামা, প্যান্ট আর হনুমান টুপি পরা একটি লোক ঘরের সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে ফেলেছে। আমাকে দেখেই একটি কাটারি নিয়ে আক্রমণ করেছিল। আমি হাতে একটা লাঠি নিয়ে নিই। লাঠির কয়েকটা বাড়ি ওর গায়ে বসাতে পেরেছি।’’ সে জানায়, পালানোর সময় বাথরুম পরিষ্কার করার অ্যাসিড আর রান্নাঘর থেকে নুন নিয়ে গায়ে ছিটিয়ে দেয় যাতে ধাওয়া করতে না পারে। চোর পালানোর সঙ্গে সঙ্গেই অভিজিৎ তার বাবাকে ফোন করে জানায়। ধনঞ্জয়বাবু বাড়ি ফিরে ছেলেকে নিয়ে থানায় যান। ধনঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘কী ভাগ্যি অ্যাসিড ছেলের চোখে ঢোকেনি। জামার উপরেই পড়েছিল, না হলে বড় ক্ষতি হতে পারত। তবে চোখে নুন ঢুকে যাওয়ায় চোখে অনেক রাত পর্যন্ত জ্বলুনি ছিল। বারবার ঠান্ডা জল আর ওষুধ দেওয়ার পরে এখন ছেলে অনেকটা সুস্থ।’’

এই কিশোরের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন পরিবারের লোকজন থেকে পড়শিরা। ধনঞ্জয়বাবু জানান, অভিজিৎ রুখে দাঁড়িয়েছিল বলে বাড়ির জিনিসপত্র চোর নিতে পারেনি। খবর পেয়ে সোমবার রাতেই শান্তিনিকেতন থানার ওসি বিপ্লব দত্ত ওই বাড়িতে তদন্তে গিয়ে অভিজিতের মুখ থেকে সব শোনেন। দুষ্কৃতী এখনও ধরা পড়েনি।

Crime Acid Attack Kid Thief
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy