Advertisement
E-Paper

নতুন লাইন পাচ্ছে আদ্রা ডিভিশন

নতুন রেললাইন। দু’টি ডাবল লাইন। পাঁচটি স্টেশনে নতুন লুপ লাইন। সঙ্গে যাত্রী পরিষেবার উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প। রেল বাজেটে দীর্ঘ দিন পরে ভাল প্রাপ্তি হয়েছে আদ্রা ডিভিশনের। তবে কিছু ব্যাপারে অবহেলার অভিযোগও রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:০৫
জয়চণ্ডী পাহাড়ের কাছে এখান দিয়েই যাবে চান্ডিল-বার্নপুর অতিরিক্ত রেললাইন। নিজস্ব চিত্র

জয়চণ্ডী পাহাড়ের কাছে এখান দিয়েই যাবে চান্ডিল-বার্নপুর অতিরিক্ত রেললাইন। নিজস্ব চিত্র

নতুন রেললাইন। দু’টি ডাবল লাইন। পাঁচটি স্টেশনে নতুন লুপ লাইন। সঙ্গে যাত্রী পরিষেবার উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প। রেল বাজেটে দীর্ঘ দিন পরে ভাল প্রাপ্তি হয়েছে আদ্রা ডিভিশনের। তবে কিছু ব্যাপারে অবহেলার অভিযোগও রয়েছে।

আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ডিভিশনে নতুন রেললাইন, ডাবল লাইন ও লুপ লাইন তৈরিতে বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ২৩৭৫ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলি রূপায়িত হলে দক্ষিণপূর্ব রেলের এই ডিভিশনে ট্রেন চলাচল ও যাত্রী পরিষেবার মানের অনেকটাই উন্নতি হবে বলে আশা। অন্য দিকে, বিরোধী দল ও রেলকর্মী সংগঠনের একাংশের মতে, রেলকে কেন্দ্র করে আর্থ-সামাজিক বিকাশের চেষ্টা আগেও অনেকবার হয়েছে। এ বারে সেই দিকটি সম্পূর্ণ ভাবে অবহেলিত। দুই রেলকর্মী সংগঠনের নেতা সুব্রত দে এবং গৌতম মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট কোনও ঘোষণাই হয়নি বাজেটে।

গত কয়েক বছর ধরেই পণ্য পরিবহণে দক্ষিণ পূর্ব জোনে উল্লেখযোগ্য স্থান পাচ্ছে আদ্রা ডিভিশন। রেল সূত্রের খবর, সেই জন্যই ঝাড়খণ্ডের চান্ডিল থেকে পুরুলিয়া, আনড়া, জয়চণ্ডীপাহাড় হয়ে বার্নপুর পর্যন্ত নতুন অতিরিক্ত রেললাইন তৈরির প্রস্তাব জোন থেকে রেল বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টিকে যে রেল বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, খোদ দক্ষিণ পূর্ব রেলের জিএম কয়েকবার এই শাখা পরিদর্শনের আসাতেই তা এক প্রকার বোঝা যাচ্ছিল। বুধবার ডিআরএম (আদ্রা) শারদকুমার শ্রীবাস্তব জানান, চান্ডিল থেকে বার্নপুর পর্যন্ত ১২৫ কিলোমিটার নতুন অতিরিক্ত লাইন পাতার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। বাজেট ধরা হয়েছে ১৬৪৬.৮১ কোটি টাকা।

ঝাড়খণ্ডের কয়লাখনি ও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে এ রাজ্যের আসানসোল শিল্পাঞ্চলে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম চান্ডিল-বার্নপুর শাখা। রেলসূত্রের খবর, এমনিতেই এই শাখায় আগের তুলনায় ট্রেন চলাচল কয়েক গুন বেড়েছে। এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেনের চাপে চান্ডিল থেকে বার্নপুর যেতে মালগাড়ির অনেকটাই সময় বেশি লাগছে। এই শাখায় আরেকটি নতুন লাইন হলে পণ্য পরিবহণে সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্য দিকে, ধানবাদ-চন্দ্রপুরা শাখার একাংশে মাটির নীচে আগুন জ্বলায় ওই শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করেছে রেলবোর্ড। বিকল্প হিসাবে আদ্রা ডিভিশনের তালগড়িয়া থেকে বোকারো পর্যন্ত একটি শাখায় ট্রেন চালানো শুরু হয়েছে। ওই শাখার উন্নয়নে ডাবল লাইন তৈরি করা হচ্ছে। রেল বাজেটে এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩৬০.৩৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে পুরলিয়া-কোটশিলা শাখাকে ডাবল লাইন করার দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ ডিআরএম জানান, ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই শাখাকে ডাবল লাইন করার জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা।

নতুন লাইন

নতুন ডবল লাইন

নতুন অতিরিক্ত লুপ লাইন

ক্রসিং স্টেশন

বৈদ্যুতিকরণ

ফুট ওভারব্রিজ

নতুন স্টেশন

লিফট এবং চলমান সিঁড়ি

আদ্রার রেলকর্তৃপক্ষর দাবি, যাত্রী পরিষেবার মান উন্নয়নেও আদ্রার ভাগ্যে শিঁকে ছিড়েছে এ বারের বাজেটে।

ডিভিশনের পাঁচটি স্টেশন গৌরীনাথধাম, মুরাডি, রামকানালি, বেলিয়াতোড় ও রাইনগরকে ক্রসিং স্টেশন করা ও অতিরিক্ত লুপলাইন তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়া-মশাগ্রাম শাখার ইলেকট্রিফিকেশনের জন্যও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। পুরুলিয়া, গিরিডি এবং বিষ্ণপুরে স্বল্প উচ্চতার সাবওয়ে, পুরুলিয়াতে কোটশিলা-পুন্দাগ স্টেশনের মাঝে পুরোদস্তুর সাবওয়ে তৈরির অনুমোদন মিলেছে। ডিভিশনের চাষ ও ইস্পাতনগর স্টেশন দু’টির উন্নয়ন এবং ন’টি স্টেশনে ফুট ওভারব্রিজ তৈরি হবে।

রেলসূত্রের খবর, এ বারের রেল বাজেটে মূলত যাত্রী পরিষেবার উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ডিআরএম বলেন, ‘‘বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, আদ্রায় আমরা লিফট ও চলমান সিঁড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিভিশনে দু’টি নতুন স্টেশন তৈরির কথা ভাবা হয়েছে।”

আদ্রা ডিভিশনের জন্য একাধিক প্রকল্প ঘোষিত হলেও রাজ্যর শাসকদল তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, জেলাবাসীর প্রকৃত দাবি ও উন্নয়নের প্রতিফলন রেল বাজেটে নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আদ্রা ডিভিশনে দু’টি বড় প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন— রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আদ্রায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও আনাড়ায় রেলের উদ্যোগে কামরার মধ্যবর্তী পুর্নবাসন কারখানা। রেল বাজেটে এ বারেও ওই দু’টি প্রকল্পের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি।

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘রেলমন্ত্রক অতীতে প্রত্যন্ত এলাকার আর্থসামাজিক বিকাশের কাজে বিশেষ নজর দিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এ ধরনের একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা গত কয়েক বছর ধরেই রেল বাজেটে থাকছে না।’’

তবে অতীতে রেলের মাধ্যমে দান খয়রাতি করে রেলকে রুগ্ন করে দেওয়া হয়েছিল বলে পাল্টা দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘রেলবাজেটে মানুষকে বঞ্চনা না করে বাস্তবমুখী উন্নয়নের দিশা দেখানো হয়েছে।রেলের মূল কাজ যাত্রী পরিষাবা। তারই উন্নতির চেষ্টা হয়েছে বাজেটে।’’

Rail Train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy