Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
bankura

Bankura: ২২ বছর পর মনে পড়ল গ্রামের নাম! চিকিৎসকের সৌজন্যে ওড়িশা থেকে বাংলায় ফিরলেন প্রৌঢ়

স্ত্রী বলেন, ‘‘স্বামী বেঁচে রয়েছেন এ বিশ্বাস ছিল। আজ ২২ বছর পর স্বামীকে ফিরে পেলাম এর থেকে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে?’’

স্বামীকে ২২ বছর পর ফিরে পেলেন কল্পনা।

স্বামীকে ২২ বছর পর ফিরে পেলেন কল্পনা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২২ ২২:০৫
Share: Save:

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ২২ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বাঁকুড়া থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্য ওড়িশায়। সে রাজ্যের ভূমা গ্রামের এক গ্রামীণ চিকিৎসকের কল্যাণে মিলেছিল মাথার উপর ছাদ। পেয়েছিলেন দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের নিশ্চয়তা। কিন্তু নাম ঠিকানা ভুলে যাওয়ায় আর বাড়ি ফেরা হয়নি। দীর্ঘ ২২ বছর পর সেই চিকিৎসকের সৌজন্যেই বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার শ্যামপুর গ্রামে পরিবারের কাছে ফিরলেন নিতাই প্রামাণিক।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্যামপুরে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে পেশায় কৃষক নিতাইয়ের সংসার। আচমকাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন নিতাই। কী কারণে অসুস্থতা জানা যায়নি। এক দিন পরিবারের অজ্ঞাতে বাড়ি ছেড়ে হারিয়ে যান তিনি। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে অকুলপাথারে পড়েন স্ত্রী। আশপাশের গ্রামগঞ্জ ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে সন্ধান করেও কোথাও স্বামীকে খুঁজে পাননি কল্পনা। আশা ছেড়ে এক দিন দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে তিনি চলে যান বাপের বাড়িতে। তার পর থেকে দীর্ঘ সময় কেটেছে। দুই পুত্রের এক জনের বয়স এখন ৩০ বছর। অন্য জনের ২৭।

হঠাৎই গত সপ্তাহে কল্পনাকে শালতোড়া থানার পুলিশ খবর দেয়, নিতাইয়ের খোঁজ মিলেছে। পুলিশ জানায়, নিতাই রয়েছেন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার ভূমায়। ভিডিয়ো কলে নিতাইকে এক ঝলক দেখেই চিনতে পারেন কল্পনা। বুধবার ওড়িশার ভূমা গ্রাম থেকে নিতাইকে সঙ্গে নিয়ে শালতোড়া থানায় আসেন নিতাইয়ের এতদিনের আশ্রয়দাতা হেমন্ত দাস নামের ওই চিকিৎসক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

হেমন্ত বলেন, ‘‘২২ বছর আগে এক দিন সকালে হঠাৎ দেখি গ্রামের কাছে রাস্তার ধারে গাছের তলায় এক যুবক শুয়ে রয়েছে। গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। বাড়িতে এনে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলি ওকে। ওর প্রতি মায়া পড়ে যায়। তার পর থেকে আমাদের বাড়িতেই থাকত সে। নিজের নাম ঠিকানা কোনওভাবেই মনে করতে পারত না।’’ তাঁর সংযোজন ২২ বছর কেটে যাওয়ার পর শুধু নিজের গ্রামের নাম বলতে পারল! আমি ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে শালতোড়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করি। আজ ওকে পরিবারের হাতে তুলে দিলাম।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘গত ২২ বছরে ধীরে ধীরে ওর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আজ পরিবারের কাছে ছাড়তে এসে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবে শেষমেশ যে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারছি, এটাই বড় আনন্দের।’’

নিতাইয়ের স্ত্রী বলছেন, ‘‘স্বামীকে এভাবে ফিরে পাব ভাবিনি। স্বামী বেঁচে রয়েছেন এ বিশ্বাস ছিল। কিন্তু দিন যত যাচ্ছিল ততই ধীরে ধীরে কমছিল আশা। আজ ২২ বছর পর স্বামীকে ফিরে পেলাম এর থেকে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bankura Mental Ill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE