Advertisement
২৬ মে ২০২৪

লুকনো পাঁচশো, হাজারে উবেছে ঘুম

নাহ্, ওদের কালো টাকা নেই। রয়েছে তিল তিল করে গড়া লুকনো সঞ্চয়। বিপদের দিনে ভরসা যোগাতে পারত যে গুপ্তধন, তাই-ই আজ ঠেলে দিয়েছে আনকোরা বিপদের মুখে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

নাহ্, ওদের কালো টাকা নেই। রয়েছে তিল তিল করে গড়া লুকনো সঞ্চয়। বিপদের দিনে ভরসা যোগাতে পারত যে গুপ্তধন, তাই-ই আজ ঠেলে দিয়েছে আনকোরা বিপদের মুখে!

এই টাকা কেউ বাঁচিয়েছেন সংসার খরচ থেকে, কেউ একশো দিনের কাজের টাকা থেকে। কেউ লুকিয়ে রেখেছিলেন বিছানার তলায়, কেউবা কাঁপড়ের পুঁটুলিতে মুড়ে কুলুঙ্গিতে! কখনও স্ত্রী লুকিয়েছেন স্বামীকে, আবার কখনও হয়েছে উল্টোটা। লুকনো সেই খাজানার সবটাই তো পাঁচশো, কিংবা হাজার টাকার! মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন ফতোয়া এঁদের মাথায় হাত! এখন গুপ্তধন প্রকাশ্যে না এনে উপায় কই? আর যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, তাঁরা তো আরও বেকায়দায়।

স্বামীকে লুকিয়ে অসুখ-বিসুখের জন্যে হাজার টাকার ছ’টি নোট সরিয়ে রেখেছিলেন গৃহবধূ তৃপ্তি মালাকার (নাম পরিবর্তিত)। মঙ্গলবার রাতেই প্রতিবেশীর কাছে নোট বাতিলের খবর পেয়েছেন তিনি। তারপরে গোটা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি বোলপুর পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই গৃহবধূ। সকাল হতেই প্রতিবেশীর কাছে ওই টাকা দিয়ে এসেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘খুব কষ্ট করে ওই টাকাটা জমাতে পেরেছি। সবটাই প্রতিবেশীর কাছে দিয়ে পরে ভাঙিয়ে দিতে বলেছি।’’ কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই তাঁর। প্রতিবেশীর আশ্বাসেই ভরসা রাখছেন তিনি।

শ্যামবাটীর বাসিন্দা, পেশায় পরিচারিকা বিভাবতী ঘোষ (নাম পরিবর্তিত)। তিনি সদ্য বেতন নিয়েছেন। পেয়েছেন চারটি পাঁচশো টাকার নোট। আতান্তরে পড়েছেন তিনিও। হাতে-পায়ের ব্যাথার জন্যে তাঁর ডাক্তার দেখানোর কথা আজ, বৃহস্পতিবার। সে সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বুধবারই পাঁচশো টাকার নোটগুলো বাবুর বাড়িতে দিয়ে এসেছি। কী করব, আমরা তো কিছু করার নেই। ওঁরা অবশ্য কাজ চালানোর জন্যে দু’শো টাকা দিয়েছেন। আপাতত তা দিয়েই চালাচ্ছি। আর বাকিটা ধার-বাকি করেই চলছে।’’

পাঁচশো আর হাজার টাকার নোটে মোট পনেরো হাজার টাকা জমিয়েছিলেন ফুলডাঙার বাসিন্দা চুনি হেমব্রম (নাম পরিবর্তিত)। আদিবাসী ওই মহল্লায় পরিবারের অনেক পুরুষই নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন। নেশার হাত থেকে টাকা বাঁচাতে অনেককেই এমনটা করতে হয়। নতুন নিয়ম কার্যকর হতেই কার্যত দিশেহারা তিনি। একশো দিনের কাজের শ্রমিক চুনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলেও পুরুষেরা সঞ্চয়ের কথা জেনে যাবেন ভেবে নিজের কাছে টাকা রেখেছিলাম। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’’

নোট-সমস্যায় জেরবার আরও অনেকেই। কেউ একান্তে মানছেন, ‘‘একটু এ দিক ও দিক করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। এখন তো সবটাই সামনে এসে যাবে। লুকবো কী করে? এ তো উভয়-সঙ্কট!’’

তা শুনে লাভপুরের এক শিক্ষকের রসিকতা, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন অর্থ-নীতিতে কালো কিংবা জাল টাকা কতটা উদ্ধার হবে জানি না, তবে আমাদের পকেট থেকে কি পরিমাণ টাকা এত দিন বেরিয়েছে, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। সেটা কম কী!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Money Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE