Advertisement
E-Paper

গুজবে ব্রাত্য দশ টাকার কয়েন-ও

সকাল থেকে ঘণ্টা চারেক ব্যাঙ্কের লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে হাজার টাকার একটি নোট ভাঙানোর সুযোগ পেয়েছিলেন বাঁকুড়া সদর থানার আঁচুড়ির বাসিন্দা পেশায় গাড়ি চালক বাপি বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৫
ব্যাঙ্কে মিলছে এই প্যাকটে। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কে মিলছে এই প্যাকটে। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল থেকে ঘণ্টা চারেক ব্যাঙ্কের লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে হাজার টাকার একটি নোট ভাঙানোর সুযোগ পেয়েছিলেন বাঁকুড়া সদর থানার আঁচুড়ির বাসিন্দা পেশায় গাড়ি চালক বাপি বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতে এসেছিল এক প্যাকেট খুচরো টাকা। ঝকঝকে একশোটি দশ টাকার মুদ্রা। মনের আনন্দে একটি মিষ্টির দোকানে ঢুকে জমিয়ে জলখাবার খেয়েছিলেন বাপি। পকেট ভর্তি ঝমঝমে খুচরো। তাঁর আর চিন্তা কী!

চিন্তা শুরু হল তার পরে। দাম মেটানোর সময় দোকানদার গোঁ ধরল, দশ টাকার কয়েন নেবেন না। তার পরে যে ক’টি দোকানে গিয়েছেন, অধিকাংশ জায়গাতেই নতুন পাওয়া কয়েনে দাম মেটাতে পারেননি। বাপির এখন আক্ষেপ, ‘‘ছিল একটা অচল টাকা, সেটা ভাঙাতে গিয়ে একশোটা অচল টাকা হয়ে গেল।’’

জেলার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার জানান, দশ টাকার মুদ্রা মোটেও অচল নয়। বেশ কিছু দিন আগে থেকেই কিছু অসাধু লোক এই গুজব বিভিন্ন এলাকায় রটিয়েছেন। এই নিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যা তলায় তলায় ছিলই। তারই মধ্যে সত্যি সত্যি পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিল হয়ে রাখালের পালে বাঘ পড়ে। আর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দশ টাকার কয়েনের গুজব মানুষের বিপত্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। বাঁকুড়ার বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক দশ টাকার কয়েনে ভাঙানি দেওয়ায় সেই সমস্যা একেবারে সামনে চলে এসেছে। ওই ব্যাঙ্ক থেকে যাঁরা কয়েনের প্যাকেট নিয়েছিলেন তাঁদের একাংশের অভিযোগ, অনেক দোকানদারই সেগুলি নিচ্ছেন না। বিষ্ণুপুরের দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা দীপক দাস জানান, সম্প্রতি তিনি তিনটি বাতিল পাঁচশো টাকার নোট ভাঙাতে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। সেখানে পুরো ভাঙানিটাই তাঁকে দশ টাকার কয়েনে দিতে চাওয়া হয়েছিল। টাকা না ভাঙিয়েই ফিরে এসেছিলেন দীপকবাবু। তাঁর দাবি, “বাজারে যদি সেই চালাতেই না পারলাম তাহলে টাকা বদলে লাভটা কী হবে!’’

জেলার বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা অবশ্য এই পরিস্থিতিতে গ্রাহকদেরেই গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আবেদন জানাচ্ছেন। তাঁরা জানান, প্রধানমন্ত্রী পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে বাকি সমস্ত নোট এবং মুদ্রা চালু থাকছে বলে ঘোষণা করেছিলেন। দশ টাকার মুদ্রাও পুরোদস্তুর চালু রয়েছে। আধিকারিকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন ব্যাঙ্ক থেকে নির্ভয়ে দশ টাকার কয়েন নিয়ে সেগুলি হাটে বাজারে এবং যাবতীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে। জেলার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলেন, ‘‘কেউ যদি দশ টাকার কয়েন নিতে না চান তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সেই মর্মে মুচলেকা লিখে দিতে বলতে হবে। আর সেটা নিয়ে সটান পুলিশের কাছে গেলেই হল।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, সচল মুদ্রা নিতে কেউ অস্বীকার করলে তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হতে পারে। অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরাও। তিনি বলেন, “দশ টাকার কয়েন নিতে না চাওয়াটা বেআইনি। সাধারণ মানুষ যদি সমস্যায় পড়ে থানায় এসে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানান তাহলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব”।

তবে চাইলেই যে এক কথায় দোকানদার বা বাসের কন্ডাকটর কাগজ কলম নিয়ে মুচলেকা লিখতে বসে যাবেন এমনটা মোটেও ভাবতে পারছেন না জেলার বাসিন্দারা।দীর্ঘ দিন ধরে দশ টাকার কয়েন নিয়ে একটু একটু করে গুজব ডালপালা মেললেও সরকারি কোনও পক্ষই কেন সময় মতো প্রচারে মন দেয়নি তা নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন।

এই পরিস্থিতিতে গুজব থামাতে সরকারি পদক্ষেপ দাবি করেছেন জেলার বাসিন্দারা।

rumour 10 rs coin vanished
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy