দিনের ব্যস্ত সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকসভার পথ অবরোধে নাকাল হলেন যাত্রীরা। বিষ্ণুপুরে আটকে গেল ট্রেনও। শুক্রবার বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় চলল এই দুর্ভোগ।
এ দিন লাভজনক মূল্যে আলু, সহায়ক মূল্যে ধান কেনা-সহ বিভিন্ন দাবিতে জেলা জুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল সিপিএমের কৃষকসভা ও খেতমজুর ইউনিয়ন। বড়জোড়ায় পথ অবরোধে সামিল আলুচাষি বীরু বাউরি ও মনোরঞ্জন দে বলেন, ‘‘এক ক্যুইন্টাল আলু ফালাতে পাঁচশো টাকা খরচ হয়। কিন্তু বেচতে হচ্ছে দু’শো টাকা দরে।’’ জেলা কৃষকসভার সম্পাদক যদুনাথ রায় বলেন, ‘‘সরকার প্রয়োজন মতো চাষিদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। জেলা জুড়ে ষোলোটি ব্লকে প্রায় তিন হাজার চাষিকে নিয়ে পথ অবোরোধ, মিছিল ও ব্লকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।’’
জেলা খাদ্য নিয়ামক শিবনারায়ণ পাণি জেলায় ধান কেনার শিবির বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এ দিন অবরোধে চাষিদের সমস্যার আঁচ পড়েছে সাধারণ যাত্রীদের উপরেও। বড়জোড়ার অবরোধে সামিল হয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন কর্তারা আমাদের কথা শুনতেই চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। তবে সাধারণ মানুষের যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য বেশির ভাগ জায়গাতেই প্রতীকী অবরোধ হয়েছে। অবরোধে আটকে পড়া অনেকেই আমাদের দাবি সমর্থন করেছেন।’’
এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ রাস্তায় আলু ঢেলে অবরোধ শুরু হয় বড়জোড়া চৌমাথা মোড়ে। বাঁকুড়া-দুর্গাপুর ও বড়জোড়া-মালিয়াড়া রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যস্ত সময়ে প্রায় আধ ঘণ্টার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দু’টি রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় প্রচুর যানবাহন দাঁড়িয়ে পড়ে। অফিসযাত্রী, স্কুল পড়ুয়া সহ বিভিন্ন কাজে বেরনো মানুষজন আটকে পড়েন রাস্তায়। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
বিষ্ণুপুরে ছিল সমাবেশ। হয়ে গেল অবরোধ।
এ দিন বিষ্ণুপুর স্টেশনের কাছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের লেভেল ক্রসিং-এর সামনে এই সমস্ত দাবি নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। কৃষকসভা ও খেত মজুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর থানা কমিটির ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। ছিলেন বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন ঘোষ, নেতা মনোরঞ্জন পাত্র প্রমুখ। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই, বেলা ১১টা নাগাদ আচমকা ক্রসিং-এর মুখে প্রচুর আলু ঢেলে দিয়ে শুরু হয় রাস্তা অবরোধ।
অবরোধের জেরে লাইনের উপরে থমকে যায় গাড়ি। আটকে যায় সাঁতরাগাছি থেকে বাঁকুড়ামুখী আরণ্যক এক্সপ্রেস। আটকে যান সিআইএসএফ-এর জওয়ানরা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে ট্রেন থেকে নেমে মিঠু ঘোষ, বাবন সাউ, বিপ্লব হাজরাদের মতো অনেকেই লাইন ধরে হাঁটতে শুরু করেন। লেভেল ক্রসিং-এর সামনে থেকে অনেক দূর পর্যন্ত সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় দূরপাল্লার বাস-সহ অনেক গাড়ি। পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা গিয়েও অবরোধকারীদের গোঁ ভাঙতে পারেননি।
যেমন হঠাৎ শুরু হয়েছিল, তেমনই আচমকা ওঠে অবরোধ। কিন্তু ততক্ষণে প্রায় ঘণ্টা খানেক পেরিয়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির জন্য অবরোধে সামিল নেতারা মাইকে ক্ষমাও চেয়ে নেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর আশা ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছেন অবরোধে আটকে থাকা অনেকেই। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘এত দেরি করে বোধদয় হয়ে আর লাভটা কী হল?’’