তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনে কারখানার উৎপাদিত পণ্য আটকে রইল।—নিজস্ব চিত্র।
ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, নয়া বেতন কাঠামো, বোনাস-সহ শ্রমিকদের নানা দাবি নিয়ে একটি গালা কারখানা থেকে উৎপাদিত মাল বাইরে পাঠানো বন্ধ করে দিল আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত একটি শ্রমিক সংগঠন। কারখানার শ্রমিক সংগঠন এই নিষেধাজ্ঞা জারি করায় পুরুলিয়া পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার টামনাতে অবস্থিত ওই কারখানা থেকে কর্তৃপক্ষ উৎপাদিত পণ্য বের করতে পারছেন না। দেশ সহ বিদেশেও লাক্ষাজাত এই পণ্যের বাজার থাকায় উৎপাদিত পণ্য কারখানা থেকে বের করতে না পারায় সমস্যায় পড়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এই কারখানার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি তথা জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি প্রফুল্ল মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা শ্রমিকদের কয়েকটি দাবি দাওয়ার ভিত্তিতে কারখানা থেকে পণ্য বের করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। তা মালিক পক্ষকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবে কারখানা বন্ধ নেই। শ্রমিকেরা উৎপাদনের কাজ করছে।’’ নিজেদের দাবির সমর্থনে শুক্রবার শ্রমিকেরা কিছুক্ষণ কারখানার গেটে বিক্ষোভ দেখান। এই বিক্ষোভে জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি প্রফুল্লবাবু নেতৃত্ব দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টামনাতে লাক্ষা ও লাক্ষাজাত দ্রব্যের এই কারখানাটি ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কারখানার আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক উত্তম অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই এই কারখানায় শ্রমিকদের স্বল্প বেতনে কাজ করানো হচ্ছে। লাক্ষা থেকে এই কারখানায় গালা ও গালাজাত অন্যান্য দ্রব্য প্রস্তুত হয়, যা প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতেও কাজে লাগে। উন্নত মানের রং তৈরিতেও ব্যবহার হয়। দেশীয় বাজার সহ বিদেশের বাজারেও এই দ্রব্যগুলির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বিষয়ে উদাসীন। তাই বাধ্য হয়েই আমরা এই নিষেধাজ্ঞা জারির পথে গিয়েছি।’’
সংগঠনের সভাপতি প্রফুল্লবাবুর দাবি, শ্রমিকদের কাজ অনুযায়ী তাঁদের বেতন সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারের মধ্যে। উত্তমবাবুর কথায়, ৩৭ বছর ধরে কাজ করছেন এমন শ্রমিকের বেতন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এই বছরেই একজন অবসর নেবেন তিনি বর্তমানে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও কম টাকা পাচ্ছেন। অসুস্থতার জন্য ন্যূনতম ছুটির বিষয়টি কর্তৃপক্ষ মানতে চাইছেন না। মেডিক্যালের জন্য ভাতাও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা ১৪ শতাংশ হারে বোনাস দাবি করেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ৮.৩৩ শতাংশ হারে বোনাস দেবে বলে জানিয়েছেন।
শ্রমিকদের ক্ষোভ, এই কারখানা থেকে যে গালা এবং গালাজাত দ্রব্যের বিদেশের বাজারে প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। ভাল দামে তা বিক্রি হয়। অথচ শোষিত হচ্ছেন শ্রমিকেরা। যেহেতু এই কারখানায় কেমিক্যাল তৈরি হয় তাই শ্রমিকদের শারীরিক ক্ষয়ের কারণে আগে তাঁদের দুধ, কলা ও গুড় দেওয়া হতো। এখন সে সবও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রফুল্লবাবু বলেন, ‘‘গত অগস্ট মাসে আমি শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার কথা জেলা শ্রম মহাধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম। ডেপুটি শ্রম মহাধক্ষ্যকেও চিঠি দিয়েছি। এখনও সরকারি ভাবে কোনও বৈঠক ডাকা হয়নি। সামনে পুজো, তাই আমরা আন্দোলনের রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হয়েছি।’’
কারখানার মালিক প্রদীপ সিংহানিয়া বলেন, ‘‘এ ভাবে উতপাদিত পণ্য আটকে দেওয়া মোটেই ঠিক কাজ নয়। শাসকদলের ছত্রছায়ায় থেকে এ ভাবে পণ্য আটকে দেওয়াটা কি যুক্তিযুক্ত?’’ তাঁর দাবি, ‘‘শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কম বলে তাঁরা যে অভিযোগ করছেন তা ঠিক নয়। তাঁরা যে ভাবে কাজ করছেন তার ভিত্তিতেই তাঁদের মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। গালার বাজারে মন্দা চলছে। তাই উৎপাদনের নিরিখেই বোনাস দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy