তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে জমিদাতাদের সংগঠনের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র
অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে ফের গণ্ডগোল বাধল রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে। স্থানীয় জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের দাবিতে ও তাঁদের কয়েক জন কর্মীকে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে প্রকল্পের সামনে ফের বিক্ষোভ অবস্থান করল জমিদাতাদের একটি সংগঠন।
এসইউসি প্রভাবিত আরটিপিএস ল্যান্ড লুজারস অ্যাসোসিয়শন নামে ওই সংগঠনের সদস্যেরা সোমবার বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঘুটিতোড়া গ্রামের দিকের গেট আটকে বিক্ষোভ দেখায়। তবে, অন্য গেটগুলি খোলা থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনের সমস্যা হয়নি। পরে রঘুনাথপুরের মহকুমা প্রশাসনের এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে ডিভিসি আধিকারিকের উপস্থিতিতে বিক্ষোভকারী সংগঠনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরে বিক্ষোভ ওঠে। যদিও জমিদাতাদের সংগঠনটির অভিযোগ, এ দিন আলোচনায় তাদের ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের কাজে পুনর্বহালের বিষয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কিছুই জানায়নি।
ডিভিসি-র এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের দাবিতে বিক্ষোভ, অবস্থান, ধর্না নতুন ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই জমিদাতাদের বিভিন্ন সংগঠন অভিযোগ তুলছে, প্রকল্পে জমিদাতাদের পরিবর্তে বহিরাগত শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে। এই দাবির সঙ্গে সহমত তৃণমূলের স্থানীয় দুই বিধায়কও। সম্প্রতি রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে এ ব্যাপারে ডিভিসি-র পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন রঘুনাথপুরে বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউরি। সেখানে দুই বিধায়কই ডিভিসি-র কাছে অভিযোগ করেছেন, প্রকল্পে কর্মরত বেসরকারি ঠিকা সংস্থাগুলি বাইরে থেকে শ্রমিক আনছে। অথচ প্রকল্পের জন্য জমি দিয়েও কর্মসংস্থানের প্রশ্নে বঞ্চিত হচ্ছেন জমিদাতারা।
পূর্ণচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘প্রকল্প গড়ার সময়ে জমিদাতাদের একাংশ ঠিকা শ্রমিকের কাজ পেয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়া সম্পূর্ণ হতেই তাঁরা কাজ হারিয়েছেন। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রে অপারেশন ও মেনটেন্যান্সের কাজে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক নেওয়া হচ্ছে। অথচ ওই কাজে বাদ পড়ছেন জমিদাতারা।’’ ঠিকা সংস্থাগুলি জেলার বাইরে থেকে শ্রমিক আনছে, এই মর্মে তাঁদের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে বলেও বিধায়কের দাবি।
এ দিন বিক্ষোভে সামিল জমিদাতারও একই অভিযোগ করেন। বিক্ষোভকারী সংগঠনটির সম্পাদক দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, অপারেশন ও মেনটেন্যান্সের কাজে এখনও পর্যন্ত ৩৭০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মাত্র ৬০ জন এলাকার জমিদাতা। এমনকী, কোল হ্যান্ডলিং প্ল্যান্টে কয়লা বাছাই বা কয়লা ভাঙার মতো অদক্ষ শ্রমিকের কাজেও বাইরের শ্রমিক নেওয়া হয়েছে। ওই প্ল্যান্টে কর্মরত ১৩৩ জনের মধ্যে মাত্র ১১ জন জমিদাতা। রঘুনাথপুরের প্রকল্পের কর্তৃপক্ষকে জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের দাবি আগে জানিয়েও ফল না হাওয়ায় ওই সংগঠনের নেতৃত্ব চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কলকাতায় ডিভিসি-র সদর দফতরে গিয়েছিলেন। কলকাতায় প্রজেক্ট ডিইরেক্টরের (মানবসম্পদ) কাছে নিয়োগ নিয়ে বঞ্চনার অভিয়োগ করা হয়। সংগঠনটির সভাপতি চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডিভিসি-র সদর দফতরে গিয়ে আমরা রঘুনাথপুরে বহিরাগত শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত বিশদ জানিয়েছি। কিন্তু অবস্থার বদল হয়নি।”
কর্মসংস্থানের প্রশ্নে জমিদাতাদের বঞ্চিত করার অভিযোগ নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনও। যেহেতু ডিভিসি-র প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ করেছে রাজ্য সরকারই, ফলে ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসন প্যাকেজ অনুযায়ী জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের উপরেও বর্তায়। বিধায়কের সঙ্গে ডিভিসি-র বৈঠকেও জমিদাতাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার বিষয়ে ডিভিসি-কে বলেছেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কত সংখ্যক জমিদাতা প্রকল্পের কোন ঠিকা সংস্থায় এখন কাজ করছেন, সেই তালিকা দেওয়ার জন্য ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। চলতি মাসের শেষেই ওই তালিকা দেওয়ার কথা ডিভিসি-র। তালিকা হাতে পাওয়ার পরেই আমরা খতিয়ে দেখব, কত জন জমিদাতা এখনও অবধি কাজ পেয়েছেন।” তবে কোনও ক্ষেত্রেই জমিদাতা ও স্থানীয়দের বঞ্চিত করে বহিরাগত শ্রমিকদের কাজে নেওয়া প্রশাসন মেনে নেবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মহকুমাশাসক।
জমিদাতাদের দাবি ও অভিযোগ তারা গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন বলে জানিয়ে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রজেক্ট ডিরেক্টর (মানবসম্পদ) প্রভাত কিরণ বলেছেন, ‘‘যে কোনও প্রকল্পেই দক্ষতা অনুযায়ী কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে জমিদাতাদের অগ্রাধিকার দেওয়াই ডিভিসি-র নীতি। রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রে কেন অভিযোগ উঠছে খতিয়ে দেখা হবে।” রঘুনাথপুরের প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, দক্ষতা অনুযায়ী জমিদাতাদের নিয়োগ করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy