Advertisement
E-Paper

প্রার্থী নিয়ে বেনজির বিক্ষোভ বিজেপিতে

পুরভোটের আগে ঘোর সঙ্কটে বীরভূম জেলা বিজেপি! এক দিকে, চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা নিয়ে প্রকাশ্যেই লড়াই বেঁধে গিয়েছে টিকিট প্রত্যাশী ‘পুরনো বিজেপি’র সঙ্গে ‘নব্য বিজেপি’-র। যার জেরে রবিবার সিউড়িতে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালালেন ক্ষুব্ধ দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। অন্য দিকে, এই ডামাডোলের মধ্যেই ইস্তফা দিয়ে বসলেন দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০০:১৯
জেলা পর্যবেক্ষক ঘিরে বিক্ষোভ কর্মীদের। সিউড়িতে বিজেপি কার্যালয়ের সামনে।—নিজস্ব চিত্র।

জেলা পর্যবেক্ষক ঘিরে বিক্ষোভ কর্মীদের। সিউড়িতে বিজেপি কার্যালয়ের সামনে।—নিজস্ব চিত্র।

পুরভোটের আগে ঘোর সঙ্কটে বীরভূম জেলা বিজেপি!

এক দিকে, চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা নিয়ে প্রকাশ্যেই লড়াই বেঁধে গিয়েছে টিকিট প্রত্যাশী ‘পুরনো বিজেপি’র সঙ্গে ‘নব্য বিজেপি’-র। যার জেরে রবিবার সিউড়িতে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালালেন ক্ষুব্ধ দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। অন্য দিকে, এই ডামাডোলের মধ্যেই ইস্তফা দিয়ে বসলেন দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। সব মিলিয়ে জেলার তিনটি পুরসভা সিউড়ি, বোলপুর ও সাঁইথিয়ার (রামপুরহাটের তালিকা শনিবারই প্রকাশিত হয়েছে) প্রার্থীতালিকা প্রকাশের আগেই ল্যাজেগোবরে অবস্থা বিজেপি-র। এই পরিস্থিতিতে সব থেকে সঙ্কটে পড়েছেন দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যে দুধকুমারের হাত ধরে জেলায় বিজেপি-র এই উত্থান, তাঁর এই আকস্মিক প্রস্থানে দল যে ঘোর সঙ্কটে পড়ে গেল তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রাখছেন না কেউ-ই।

ঠিক কী ঘটে ছিল এ দিন?

এ দিন সিউড়ি ১১ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা দলীয় কার্যালয় থেকে বিজেপি-র সিউড়ি ও সাঁইথিয়া পুরসভার প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, কর্মী বিক্ষোভের জেরে তা প্রকাশ করতে পারলেন না বিজেপি-র বীরভূম জেলা পর্যবেক্ষক রামকৃষ্ণ পাল। প্রার্থীতালিকা ঘোষণার আগে দলীয় কার্যালয়ে বসে রামকৃষ্ণবাবু এবং দলের জাতীয় কর্ম সমিতির সদস্য সুকুমার দাস শেষ পর্যায়ের আলোচনা সেরে নিচ্ছিলেন। বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন উত্‌সুক বিজেপি কর্মীরা। যাঁদের অধিকাংশই কিছু দিন আগেও তৃণমূলে ছিলেন। সমস্যা তৈরি হয় দলের বহু দিনের নেতা তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি নির্মল মণ্ডল ওই আলোচনায় যোগ দিতে চাইলে। কে কে প্রার্থী হচ্ছেন, এ সব না সঠিক ভাবে জানা না থাকলেও কে কোন ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন, এটা নিয়ে কৌতুহল ছিলই। দীর্ঘ ক্ষণ বাইরে অপেক্ষমান বর্ষিয়ান ওই নেতার উষ্মা দেখে বাইরে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন বেশ কিছু বিজেপি কর্মী। স্লোগান ওঠে, “ন্যায্য প্রার্থীপদ দিতে হবে!” চেয়ার টেবিল উল্টে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠছে দেখে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা বিরত রেখে বাইরে বেরিয়ে আসেন রামকৃষ্ণবাবু। কেন বিক্ষোভ? রামকৃষ্ণবাবু বলেন, “একই আসনের জন্য একাধিক নাম এসেছে। তাই মতের অমিল থাকতেই পারে। তবে, যিনি যোগ্য তিনি-ই প্রার্থী হবেন। তবে, এখনও তো প্রার্থীতালিকা ঘোষিতই হয়নি। কারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, জানি না।”

এমন যখন ঘটনা চলছে, তখনই খবর আসে দুধকুমার জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। জেলা সভাপতি কেন এখানে নেই, তিনি কি পদত্যাগ করেছেন? প্রশ্ন করা হলে রামকৃষ্ণবাবু বলেন, “উনি হয়তো অন্য কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে, পদত্যাগ করেছেন এমন তথ্য আমার জানা নেই।” এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই রামপুরহাট থেকে আসা জনা কয়েক বিজেপি কর্মী-সমর্থকও পর্যবেক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের ক্ষোভ, শনিবার রামপুরহাটে প্রকাশিত তালিকা মোটেই আশানুরূপ হয়নি। তার জন্য পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে রামপুরহাটের পর্যবেক্ষক সত্যেন দাসের বিরুদ্ধে স্লোগানও উঠতে শুরু করে। ওঠে টাকা নিয়ে টিকিট দেওয়ার অভিযোগও। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সিউড়ির তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া নেতা দীপক দাস এবং কালোসোনা মণ্ডলেরা রামকৃষ্ণবাবুকে গাড়িতে তুলে দেন। তিনি বোলপুরের দিকে চলে যান।

দলীয় সূত্রের খবর, শনিবার রামপুরহাট পুরসভার জন্য প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। তা নিয়ে একেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এ দিন আবার গত শুক্রবার রাজ্য নেতৃত্ব থেকে আসা বাকি পুরসভাগুলির প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। তা প্রকাশের দায়িত্ব ছিল পর্যবেক্ষকের উপরেই। দলের শীর্ষ নেতাদের কয়েক জন বলছেন, “প্রার্থী হওয়া নিয়ে সদ্য বিজেপি-তে আসা তৃণমূল কাউন্সিলর দীপক দাস এবং পুরনো কিছু বিজেপি নেতার অনুগামীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছিলই।” দলের সূত্রটি আরও জানাচ্ছে, প্রার্থীতালিকা প্রকাশ নিয়ে বিস্তর মতান্তর দেখা দিয়েছে দলের মধ্যেই। দলের কিছু নেতা চান, সদ্য যাঁরা তৃণমূল বা অন্য দল ছেড়ে বিজেপি-তে এসেছেন, তাঁদের পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে দলে রয়েছেন, তাঁদেরও সমান গুরুত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু, রাজ্য নেতৃত্ব বাস্তবে সেই দাবি মানেননি বলে জানা যাচ্ছে। সিউড়ির প্রার্থীতালিকার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে আশঙ্কা করেই টিকিট প্রার্থীদের অনুগামীরা কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিকে, দুধকুমারের পদত্যাগের খবরে তাঁর অনুগামীদের অনেকেই বিভিন্ন পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। ইতিমধ্যেই এ দিন বিদ্রোহ ঘোষণা করে বিজেপি-র রামপুরহাট মণ্ডল কমিটির কিছু সদস্য ইস্তফা দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সব থেকে বেশি উদ্বিগ্ন দলের নিচুতলার কর্মীরা। পুরভোটের প্রার্থীতালিকা প্রকাশের আগেই দলের এই বেগতিক অবস্থা দেখে কেউ কেউ বলছেন, “এখনও প্রার্থীদের নামই জানতে পারলাম না। তার আগেই এত গণ্ডগোল। দুধদা না থাকলে সংগঠনের হাল কে ধরবে?” কবে প্রার্থীদের নামে দেওয়াল লিখন শুরু করবেন, প্রচারে পা মেলাবেন, তা নিয়ে বিভ্রান্ত দলেরই কর্মীরা!

suri bjp candidate agitation dudhkumar mondal Rampurhat municipal election tmc trinamool Anubrata Mandal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy