সংস্কারের ক’দিনের মধ্যেই রাস্তার এই হাল। ছবি: সমীর দত্ত।
সংস্কারের পরেও রাস্তার বেহাল তকমা ঘোচেনি। এই অভিযোগে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ নির্মাণকারী ঠিকাসংস্থার শেষ কিস্তির টাকা আটকে রাখার নির্দেশ দিল।
মানবাজার বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার একটি রাস্তা নিয়েই এই অভিযোগ উঠেছে। এক কিলোমিটারের সামান্য বেশি এই রাস্তা সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদ ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। অভিযোগ সংস্কারের এক সপ্তাহের মধ্যেই রাস্তার উপর থেকে পিচ উঠে গিয়ে পাথর বেরিয়ে গিয়েছে। কোথাও বা রাস্তার মধ্যে গর্ত হয়ে জল জমেছে। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই রাস্তার কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে। আমরা কাজের মানে সন্তুষ্ট নই। নির্মাণকারী সংস্থাকে ওই রাস্তা ফের সংস্কার করে দিতে হবে।’’
মানবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে মানবাজার-বরাবাজার রাস্তার মোড় (কলেজের রাস্তা) অবধি এক কিলোমিটার রাস্তা ভেঙেচুরে গিয়েছিল। এটি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা থেকে নির্মাণ করা হয়েছিল। দু’সপ্তাহ আগে বেহাল রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ হয়। বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা টুটু সরকার, সনৎ তন্তুবায়, পাহাড়ি ঘটক বলেন, ‘‘আমার দু’বেলা ওই রাস্তা ধরে বাড়ি যাতায়ত করি। রাস্তা সংস্কারের কাজ চলার সময়ে দেখি নিম্নমানের পাথর দেওয়া হচ্ছে। বিটুমিনের মানও ঠিক ছিল না। আমরা সেই সময় ঠিকাসংস্থার কর্মীদের সে কথা বলেছিলাম। কিন্তু ওঁরা আমাদের কথায় কান দেননি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।’’ মধুপুর গ্রামের সুশীল ঘটকের ক্ষোভ, ‘‘পরে বুঝলাম, আমাদের আশঙ্কাই ঠিক ছিল! এক সপ্তাহ পরেই দেখি, রাস্তার পিচ উঠে যাচ্ছে। গুটি পাথর এক জায়গায় জড়ো হয়ে যাচ্ছে। কোথাও তলার পাথর বেরিয়ে গর্ত হয়ে গেছে। ওই গর্তে আবার বৃষ্টির জল জমছে।’’
বাসিন্দারা জানান, রাস্তা সংস্কারের পরে এক সপ্তাহের মধ্যে রাস্তার পিচ ফুঁড়ে ঘাস গজাতে দেখা যায়। ২০১৩ সালেও সংস্কারের পরেই এ রকম রাস্তার পিচ উঠে ঘাস দেখা গিয়েছিল পুঞ্চা থানার গোপালপুর-কানড়া রাস্তায় । পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় ওই রাস্তা সংস্কারের মান নিয়ে বাসিন্দারা সরব হয়েছিলেন। বিস্তর হইচই হয়েছিল। সে বারও নির্মাণকারী সংস্থা অভিযোগ মানেননি। কিন্তু, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার নির্দেশে ওই রাস্তা জরিপ করে ফের সংস্কার করা হয়েছিল।
মানবাজারের ঘটনাতেও যেন পুঞ্চার ছায়া। বাসস্ট্যান্ড থেকে কলেজ মোড় অবধি রাস্তা সংস্কার হলেও এক সপ্তাহের মধ্যে ফের ভেঙে যাওয়ায় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। রাস্তার কাজের মান নিয়ে তারা বিডিও-কে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। বিডিও (মানবাজার ১) সায়ক দেব বলেন, ‘‘আমরা সরাসরি ওই রাস্তা নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারি না। কেননা, এটি জেলা পরিষদের আর্থিক বরাদ্দে নির্মিত হয়েছে।’’ বিডিও-র বক্তব্য, এই টাকায় পঞ্চায়েত সমিতি এর থেকে দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যের রাস্তা মেরামত করতে পারে, তার নজির আছে। এই রাস্তার কাজের মান যে ভাল হয়নি, সে সম্পর্কে জেলা পরিষদে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রাস্তার মান নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মাহাতোও জেলা পরিষদে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এর পরেই জেলা পরিষদ নড়েচড়ে বসে। নির্মাণকারী সংস্থার প্রাপ্য শেষ কিস্তির টাকা স্থগিত রাখার নির্দেশ জারি হয়।
নির্মাণকারী সংস্থার অন্যতম মালিক, পুঞ্চার বাসিন্দা রুনু সাহানার অবশ্য দাবি, ‘‘রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় পাথর বরাদ্দ হয়েছিল। তাই ব্যবহার করেছি। বিটুমিনও ভাল মানের ছিল।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার রাস্তা ১০-১২ টনের বেশি ভার নিতে পারে না। সেখানে বালি বোঝাই গাড়িগুলি অনেক বেশি ওজন নিয়ে যাতায়াত করায় রাস্তা টেকেনি। ‘‘যে টাকা এই রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে, তাতে এর থেকে ভাল মানের আশা করা উচিত নয়! পকোড়ার জন্য টাকা দিলে তো আর রসগোল্লা মিলবে না!’’— জেলা পরিষদের উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন রুনুবাবু। শেষ কিস্তির টাকা স্থগিতের নির্দেশ হয়েছে বলে শুনেছেন তিনিও। তবে প্রাপ্য টাকা কেউ আটকে রাখতে পারবে না বলেও দাবি তাঁর। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘এলাকাবাসীর স্বার্থে যে অংশটুকু খারাপ হয়েছে, ওটা আমি সারাই করে দেব।’’
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলে দিয়েছেন, ‘‘রাস্তা সংস্কারের দ্বিতীয় পর্বের কাজ ভাল হয়েছে কিনা জানার পরেই বরাদ্দ স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রত্যাহার করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy