Advertisement
E-Paper

নদী থেকে বালি তোলায় ক্ষোভ

নির্মাণকাজের নামে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করে দ্বারকেশ্বর নদের বুক থেকে যন্ত্র ব্যবহার করে বালি তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকে।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৯
মেশিন নামিয়েই চলছে বালি তোলা। ছবি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো

মেশিন নামিয়েই চলছে বালি তোলা। ছবি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো

নির্মাণকাজের নামে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করে দ্বারকেশ্বর নদের বুক থেকে যন্ত্র ব্যবহার করে বালি তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকে।

পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০-এ জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে কিছুদিন আগে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকা সংস্থা কাশীপুরের গামারকুড়ি গ্রামের অদূরে দ্বারকেশ্বর নদ থেকে প্রতিদিন যন্ত্র ব্যবহার করে একাধিক ট্রাক ও লরিতে বালি তুলে নিচ্ছে। কাশীপুর ব্লক কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। দলের ব্লক সভাপতি কার্তিক মালাকার বলেন, ‘‘এই নদীটিই এলাকার একাধিক অঞ্চলের পানীয় জলের উৎস। নদী থেকে এমনিতেই অবৈধ ভাবে প্রচুর বালি তোলা হয়েছে। যে কারণে এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছিল গত গ্রীষ্মে। তাই আমরা অবিলম্বে এখান থেকে বালি তোলা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছি প্রশাসনের কাছে।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী।

দ্বারকেশ্বর নদই কাশীপুর-সহ সংলগ্ন ছয়-সাতটি গ্রামের পানীয় জলের একমাত্র উৎস। পাশাপাশি আদ্রা রেলশহর ও পলাশকোলা, কাঁটারাঙ্গুনি-সহ লাগোয়া এলাকার জল সরবরাহ প্রকল্পও এই নদীর উপরে নির্ভরশীল। গত গ্রীষ্মের মরসুমে জলস্তর একেবারেই নীচে নেমে যাওয়ার কারণে নদী গর্ভের যেখান থেকে জল তুলে এলাকায় সরবরাহ করা হয়, সেই উৎসেই জলের সঙ্কট দেওয়ায় সরব হয় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এই নদী থেকে নির্বিচারে বালি তুলে নেওয়ার কারণেই গত গ্রীষ্মে এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। আমরা আগেই একাধিক বার চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেছিলাম, অবিলম্বে বালি তোলা বন্ধ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কিন্তু চিঠি পাওয়ার পরও প্রশাসনের তরফে কোনও তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।’’ শেষমেশ এ বারও পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেওয়ার পরে বালি তোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গামারকুড়ি গ্রামের অদূরে নদী থেকে বালি তুলে নিয়ে গিয়ে জাতীয় সড়কের পাশে হুড়ার কুলগোড়ায় জমা করা হচ্ছে। কিন্তু এই খবর নেই ব্লক প্রশাসনের কাছে। কাশীপুরের বিডিও মানসী ভদ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে বলে আমার কাছে কোনও খবর নেই। বিষয়টি নিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে অবশ্য এই খবর রয়েছে যে নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে। দফতরের আধিকারিক কৌশিক সামন্ত জানান, বালি তোলা হচ্ছে খবর পেলেই তাঁরা অভিযান চালাচ্ছেন। ধরা হলেই লরি বা ট্রাক প্রতি ৪০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘যে সংস্থার হয়ে লোকজন বালি তুলছে, তাদেরকেও আমরা এ ভাবে বালি না তুলতে নিষেধ করেছি।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য ক্ষোভ, দফতর জরিমানা করলেও প্রতিদিন একাধিক লরি-ট্রাকে বালি উঠছে। বর্ষায় কাঁচা রাস্তা বালি বোঝাই গাড়ির চাপে আরও শোচনীয়। প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন মোটরবাইক ও সাইকেল আরোহীরা। জেলা সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার কৌস্তভজ্যোতি পাল বলেন, ‘‘কাশীপুরে দ্বারকেশ্বর নদ থেকে কাউকে বালি তোলার কোনও অনুমতিই দেওয়া হয়নি। কেননা এখন নদী থেকে বালি তোলার বিষয়ে আদালতের নির্দেশ রয়েছে।’’ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় সিংহের আবার বক্তব্য, ‘‘যে ঠিকা সংস্থা কাজের দায়িত্বে রয়েছে, তারা কোথা থেকে বালি বা পাথর আনবে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা দেখব কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা।’’

হুড়ার কুলগোড়ায় ওই ঠিকা সংস্থার অস্থায়ী শিবির রয়েছে। সেখানে গিয়ে বালি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রথমে কেউই কথা বলতে চাননি। তবে পরে ফোনে ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির দাবি, প্রয়োজনীয় অনুমতি রয়েছে বলেই তাঁরা বালি তুলছেন।

Allegation river sand
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy