নামে সুপারফাস্ট, অথচ রোজই ছুটছে ‘লেট’-এ।
হাওড়া থেকে পুরুলিয়া ফেরার সুপারফাস্ট পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে এমনই কটাক্ষ করছেন যাত্রীরা।
দিনের বেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার বাসিন্দারা কলকাতায় এসে কাজ সেরে যাতে রাতেই বাড়ি ফিরতে পারেন, সে জন্য ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী গনিখান চৌধুরী পুরুলিয়া এক্সপ্রেস উপহার দিয়েছিলেন। পরে ট্রেনের নামের সঙ্গে জোড়ে ‘সুপারফাস্ট’। কিন্তু গত মাস ছয়েক ধরে হাওড়া থেকে পুরুলিয়া ফেরার সময় ট্রেনটি অস্বাভাবিক দেরি করছে।
কারণ হাওড়া থেকে ট্রেনটি অধিকাংশ দিনই নির্ধারিত বিকেল ৪:৫০ নাগাদ ছাড়তে পারছে না। ফলে যে ট্রেনের পুরুলিয়ায় পৌঁছনোর কথা রাত ১০:৪০ নাগাদ, সেই ট্রেন আসছে রাত কাবার করে ভোর-রাতেও। বিশেষত মাস তিনেক ধরে ট্রেনটি অত্যন্ত দেরি করায় যাত্রীদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। এ নিয়ে সরগরম সমাজমাধ্যম।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চারণ বলেন, ‘‘সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’’
কেন দেরি? যাত্রীদের দাবি, আগে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের যে রেক বেলায় হাওড়ায় পৌঁছত, সেটিই বিকেলে পুরুলিয়ায় রওনা দিত। কিন্তু এক-দেড় বছর আগে নিয়ম বদলায়।
এখন পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের রেক বেলায় হাওড়ায় পৌঁছনোর পরে রাঁচী-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস
হিসেবে রাঁচীর উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখান থেকে হাওড়া-রাঁচী
ইন্টারসিটি হিসেবে যে রেক হাওড়ায় আসে সেটিই নাম বদলে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস হিসেবে পুরুলিয়ায় রওনা দেয়।
যাত্রীদের অভিযোগ, রাঁচী থেকে ট্রেনটির হাওড়ায় আসার কথা দুপুর প্রায় সাড়ে ৩টে নাগাদ। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ট্রেনটি অস্বাভাবিক দেরিতে আসছে। যার জেরে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসও বেশ কয়েক ঘণ্টা দেরিতে হাওড়া থেকে ছাড়ছে।
কতটা দেরি?
সম্প্রতি তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা সুদিন অধিকারীর। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে ঘোষণা হল পুরুলিয়া এক্সপ্রেস সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ছাড়বে। সময় পিছিয়ে সাড়ে ৮টা হল।
ফের ১০:২০ নাগাদ হল। শেষে ট্রেন ছাড়ল রাত প্রায় ১২টা নাগাদ। অথচ ওই ট্রেনের বিকেল ৪:৫০ নাগাদ হাওড়া থেকে ছেড়ে পুরুলিয়ায় রাত ১০:৪০ নাগাদ পৌঁছনোর কথা ছিল। শেষে ভোর সাড়ে ৪টে
নাগাদ ট্রেন আদ্রা পর্যন্ত এসে আর গেল না! ঠান্ডায় আদ্রা স্টেশনে ভোরটা কাটিয়ে সকালে লোকাল ট্রেনে বাড়ি ফিরি।’’
ওই ট্রেনের আর এখ যাত্রী পুরুলিয়ার সত্যজিৎ দে জানান, আদ্রায় কেন ট্রেন যাত্রা শেষ করল, তার সদুত্তর রেলের কর্মীদের কাছে সে দিন পাওয়া যায়নি।
কিছু দিন আগে ট্রেনটি ছাড়তে অস্বাভাবিক দেরি করায় যাত্রীরা হাওড়া স্টেশনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুরুলিয়ার বাসিন্দা পার্থ মুখোপাধ্যায়, রামপ্রসাদ নন্দীরা জানান, প্রায় প্রতিদিনই হাওড়ায় ট্রেন ছাড়তে খুব দেরি করছে। হাওড়া স্টেশনে বিক্ষোভ দেখিয়েও সুরাহা হচ্ছে কই?
পুরুলিয়ার নীলকুঠিডাঙার বাসিন্দা শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ট্রেন থেকে নামতে রাত দেড়টা-দু’টো বেজে যাচ্ছে। অত রাতে স্টেশন থেকে একা হেঁটে ফিরতে ভয় করে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের অভিজ্ঞতা, ‘‘৬ ফেব্রুয়ারি আদ্রায় সাড়ে রাত ৯টার বদলে ট্রেন দেড়টায় এসেছে। দেখি দুই
কিশোরী ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই সময়ে ট্রেন চালানো-সহ রেলের নানা দাবিতে আমরা পথে নেমেছি।’’
ডিভিশনাল রেলওয়ে ইউজার্স অর্গানাইজেশনের যুগ্ম সম্পাদক দেবু চক্রবর্তীর মতে, ‘‘যে দিন থেকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের রেক হাওড়া-রাঁচী ইন্টারসিটি হিসেবে চালানো শুরু হয়েছে, সে দিন থেকেই ট্রেনটির এই দশা। যাত্রীদের দাবি, রাঁচী-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসকে আলাদা রেক দিয়ে চালানো হোক।’’
পুরুলিয়া নাগরিক মঞ্চের মুখপাত্র ঋতুরাজ দে-র দাবি, ‘‘হয় সময়ে চালানো হোক, না হলে হাওড়া-রাঁচী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের জন্য পৃথক রেক দেওয়া হোক।’’
যাত্রীদের ক্ষোভের কথা মানছেন পুরুলিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ও। তিনিও বলেন, ‘‘হাওড়া-রাঁচী ইন্টারসিটি
আলাদা রেক দিয়ে চালানো হোক। আমরা দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জিএমের কাছে এই দাবি জানাব। দলীয় নেতৃত্বকেও জানাব।’’
তবে ডিআরএম (আদ্রা) সুমিত নারুলা বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছিতে কাজ চলার কারণে অনেক সময় ট্রেন চলাচলের দেরি হচ্ছে। তবে
সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)