E-Paper

হাতির হানায় প্রিয়জনকে হারানোর ন’বছর পরে কর্মে যোগ 

গত মাসে কাজ পেয়েছেন দুলালের বড় ছেলে ঝুলন বাউড়ি ও বাবুরামের স্ত্রী সুখি বাস্কি। যে বন্যপ্রাণীর আক্রমণে আপনজনকে হারিয়েছেন ওঁরা, এখন তাদের রক্ষার দায়িত্বই তাঁদের হাতে। তবে দু’জনেই বলছেন, “পরিবারটা বেঁচে গেল।”

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১১
(বাঁ দিকে) সিউড়ি রেঞ্জ অফিসে গাছের চারায় জল দিচ্ছেন ঝুলন বাউড়ি । দুবরাজপুর রেঞ্জ অফিসে কাজের উদ্দেশে বের হচ্ছেন সুখি বাস্কি (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সিউড়ি রেঞ্জ অফিসে গাছের চারায় জল দিচ্ছেন ঝুলন বাউড়ি । দুবরাজপুর রেঞ্জ অফিসে কাজের উদ্দেশে বের হচ্ছেন সুখি বাস্কি (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

২০১৫ সালে পাঁচ মাসের ব্যবধানে হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন সিউড়ির বড়গ্রামের বাসিন্দা দুলাল কাহার (বাউড়ি) ও দুবরাজপুরের আসানশুলি গ্রামের বাসিন্দা বাবুরাম বাস্কির। প্রায় ন’বছর পরে দুই মৃতের পরিবারের একজন করে সদস্য বন দফতরের চুক্তিভিত্তিক কর্মী ফরেস্ট ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন।

গত মাসে কাজ পেয়েছেন দুলালের বড় ছেলে ঝুলন বাউড়ি ও বাবুরামের স্ত্রী সুখি বাস্কি। যে বন্যপ্রাণীর আক্রমণে আপনজনকে হারিয়েছেন ওঁরা, এখন তাদের রক্ষার দায়িত্বই তাঁদের হাতে। তবে দু’জনেই বলছেন, “পরিবারটা বেঁচে গেল।”

শুধু ওঁরা দু’জনেই নন, বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ফরেস্ট ভলান্টিয়ার’ হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন জেলার এমন সাতজনের পরিবারের সদস্য। বীরভূমের এডিএফও শ্রীকান্ত ঘোষ বলছেন, “আগে হাতির আক্রমণে কারও মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার এককালীন ক্ষতিপূরণ পেত। কিন্তু পরে সরকারি নির্দেশে তাঁদের পরিবারের একজন করে সদস্যকে চুক্তিভিত্তিক চাকরি দেওয়া শুরু হয়েছে।”

২০১৫ সালের জুন মাসে অজয় পেরিয়ে দু’টি দলছুট দাঁতাল বীরভূমে ঢুকে পড়ে। দিন দুই এদিক ওদিক ঘোরাঘুরির পরে ২৪ তারিখ সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী পঞ্চায়েতের বড়গ্রাম লাগোয়া সোনাঝুরি জঙ্গলে পৌঁছে যায়। সেই খবর পেয়েছিলেন বনরক্ষা কমিটির সদস্য বছর পঞ্চান্নর দুলাল বাউড়ি। এত কাছে বুনোহাতি এসে গাছ নষ্ট করছে শুনে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একটু বেশিই কাছে চলে যাওয়ায় হাতি দৌড়ে এসে আছড়ে দেয় তাঁকে। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। ওই বছরই নভেম্বরের ৮ তারিখ ঘটেছিল দ্বিতীয় ঘটনাটি। গ্রাম ঘেঁষা জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই ধান কাটতে যাচ্ছিলেন দুবরাজপুরের আসানশুলি গ্রামের বাবুরাম বাস্কি (৩০)। তিনটি দলছুট দাঁতালের সামনে পড়ে যান তিনি। আর বেঁচে ফেরা হয়নি তাঁরও।

সুখি বলছেন, “হাতির আক্রমণে যখন আমার স্বামী মারা যান তখন আমার মেয়ের বয়স সাড়ে তিন বছর। ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছিলাম ঠিকই, তবে সংসার স্বচ্ছল ছিল না। বন দফতরে কাজ পাওয়ায় মেয়েটাকে মানুষ করতে পারব। ও এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।” অন্য দিকে, ঝুলনের কথায়, “আসলে এর আগে আমাদের গ্রামের আশেপাশে কখনও হাতি আসেনি। লোকজন খুব বিরক্ত করছিল ওদের। তাই হয় তো ঘটনাটা ঘটেছে। বাবা যখন মারা যান তখন আমার পরিবার হয়েছে। কিন্তু বাবা সংসারের অন্যতম রোজগেরে ছিলেন। বাবার পর মাও মারা গিয়েছেন। কাজটা পেলাম, আমার ছেলে-মেয়েগুলো ভাল ভাবে থাকতে পারবে।”

সুখি দুবরাজপুর রেঞ্জে চারা তৈরির দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁকে হয় তো হাতির মুখোমুখি হতে হবে না। তবে হাতির মুখোমুখি হলে ঝুলন কী করবেন? তিনি বলেন, “সতর্ক থাকব। বনকর্তাদের নির্দেশ মেনে চলব।” এডিএফও বলছেন, “কী ভাবে বন ও বন্যপ্রাণের খেয়াল রাখা হয় এ বিষয়ে প্রত্যেকের প্রশিক্ষণ হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Forest department elephant attack

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy