লোকসভা নির্বাচনে জেলার ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূলকে সব থেকে বেশি ‘লিড’ দিয়েছিল মুরারই। এখান থেকে ৬৯ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ের ব্যবধান বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়কে গোটা লোকসভা আসনে তাঁর জয়ের ব্যবধান বাড়াতে সাহায্য করেছিল। সেই ব্যবধান ১০০ শতাংশ ধরে রাখার বার্তা দিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সেই সঙ্গে এলাকার যে কয়েকটি বুথে দল পিছিয়ে ছিল, সেই সমস্ত বুথের সভাপতি এবং পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিলেন অনুব্রত।
কিন্তু, এই নির্দেশ দিতে গিয়েই অনুব্রত নতুন বিতর্ক বাধালেন। শুক্রবার মুরারই থানার পলসা অঞ্চলের পলসা ফুটবল গ্রাউন্ডে মুরারই বিধানসভা ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনের প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেই অনুব্রতের ফরমান, মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের গ্রামের বাড়ির এলাকায় একটি বুথে হারের জন্য সেই বুথে পঞ্চায়েতের তরফ থেকে কোনও কাজ হবে না। বিরোধীদের বক্তব্য, শাসকদলের সভাপতি কী ভাবে প্রকাশ্য মঞ্চে এমন নির্দেশ দিতে পারেন? পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজ কি তাহলে কারও দল বা রাজনৈতিক মতাদর্শ দেখে হবে?
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে শতাব্দী রায় মহম্মদবাজারের এক জনসভায় বলেছিলেন, যে এলাকায় তৃণমূল ভোট কম পাবে, সেখানে উন্নয়নও কম হবে। ওই মন্তব্য নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। অনুব্রতের সুরেও সেই ছায়া। এ দিনের সভায় আমডোলের অঞ্চল সভাপতি তথা মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নজরুল ইসলাম এবং আমডোল পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুল ওদুদের উদ্দেশে অনুব্রত বলেন, ‘‘আমডোল অঞ্চলের কলহপুরে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের বাড়ি। ওখানে অনেক কাজ হয়েছে। মন্ত্রী আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। তা সত্ত্বেও ওই গ্রামের একটি বুথে আমাদের হার হয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত ওই বুথে কাজ হবে না। ২০২১ সালের পরে বুঝে নেব!’’
কলহপুর গ্রামে চারটি বুথ। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তিনটি বুথে জয়ী হয় তৃণমূল। একটি বুথে এগিয়েছিল বিজেপি। সেই ১৯৫ নম্বর বুথে বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল ৩৩৬ ভোট পান। শতাব্দী পান ১৬৭ ভোট। বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘লোকসভা ভোটে কেন বিজেপি ওই বুথে জয়ী হয়েছে, সেই অপরাধে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন এলাকার সমস্ত মানুষ। এটাই তৃণমূলের স্বৈরাচারী রাজনীতি!’’
কর্মী সম্মেলন শেষ হওয়ার পরে অবশ্য নিজের মন্তব্যের একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। তাঁর দাবি, ‘‘বলতে হয় বলেছি। এটাও বলেছি মন্ত্রী আমার বন্ধু।’’
এ দিন মুরারই বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন মুরারই ১ ও ২ পঞ্চায়েত সমিতির মোট ১৩টি অঞ্চলের বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে অনুব্রত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, মুরারইয়ের বিধায়ক আবদুর রহমান। কর্মী সম্মেলন শুরুর আগেই
অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে কয়েকটি আসন পেয়ে রাজ্য দখল করার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু রাজ্যের মানুষ যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজের পক্ষে, সেটা আবার প্রমাণ হল।’’
এ দিন বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগদানকারীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন অনুব্রত। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, মুরারই ১ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বিজেপি কর্মী দলে এসেছেন। এর ফলে মুরারই বিধানসভা এলাকায় বিজেপির অস্তিত্ব প্রায় শেষ। শ্যামাপদবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল ভোটের সময় গাজোয়ারিপনা বন্ধ করুক। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানুষকে রায় দিতে দিক। তা হলেই বিজেপির অস্তিত্ব কতটা আছে বুঝতে পারবে।’’