সদানন্দ দত্তের ২০২৪টি ডুবের মধ্যে একটির দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র।
একে পৌষের হাড়কাঁপানো শীত, তার উপর দিনভর কনকনে ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়ার দাপাদাপি চলছে বাঁকুড়ায়। স্নান করাই কঠিন কাজ হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিষ্ণুপুরের সদানন্দ দত্ত যেন অন্য ধাতুতে তৈরি। বিষ্ণুপুরের ঐতিহাসিক দিঘিতে বরফের মতো ঠান্ডা জলে পর পর ২০২৪টি ডুব দিলেন তিনি। এ ভাবে নতুন বছরকে স্বাগত জানালেন এই যুবক।
ছোট থেকেই জলের প্রতি অমোঘ টান সদানন্দের। চেয়েছিলেন বড় সাঁতারু হতে। কিন্তু পরিবারিক আর্থিক অবস্থা এবং নানা প্রতিকূলতায় স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গিয়েছে। তবে জলের সঙ্গে সদানন্দের সম্পর্ক বদলায়নি। দিঘিতে সাঁতার কাটা তাঁর প্রতি দিনের রুটিন। বর্ষা হোক বা শীতকাল, প্রতি দিন নিয়ম করে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের খনন করা লালবাঁধের দিঘিতে নামেন সদানন্দ। সুবিশাল লালবাঁধের দিঘির এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত সাঁতার কেটে পারাপার সদানন্দের কাছে নস্যি। বড় সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে জলে নানা কেরামতি দেখিয়ে এক দিন বিশ্বজয় করবেন তিনি, এ নিয়ে সদা আত্মবিশ্বাসী সদানন্দ।
যে কোনও দিন দুপুরের দিকে লালবাঁধে গেলেই দেখা মিলবে সদানন্দের। দেখা যাবে, কেমন টপাটপ ডুব দিচ্ছেন লালবাঁধের জলে। বাংলা হোক বা ইংরেজি বছর, সাল যত, ততগুলো ডুব দিয়ে সেই বছরকে বরণ করাকে রেওয়াজে পরিণত করেছেন সদানন্দ। বাংলা নববর্ষ গ্রীষ্মকালে হওয়ায় সদানন্দের ডুব নিয়ে তেমন সাড়া পড়ে না। তবে ভরা শীতে ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লালবাঁধের কনকনে ঠান্ডা জলে সদানন্দ নামার আগেই দিঘির চারপাশে কৌতূহলী জনতা ভিড় করেন। সদানন্দ ডুব দিতে থাকেন আর দিঘির পাড়ে দাঁড়ানো জনতা তাঁকে চিৎকার করে উৎসাহ দিতে থাকেন। কেউ কেউ এক-দুই-তিন করে জোরে জোরে ডুবের সংখ্যা গোনেন। হাততালি শুনে সদানন্দও আনন্দে ডুব দিয়ে যান লাগাতার। চলতি বছর তেমনই এক টানা ২০২৪টি ডুব দিয়ে লালবাঁধের দিঘির জল থেকে উঠে এসে তিনি বলেন, ‘‘আমার জীবনের লক্ষ্য হল বিশ্বরেকর্ড। সাঁতারে না হোক এ ভাবেই ডুব দিয়ে এক দিন ডুব-সংখ্যায় বিশ্বরেকর্ড করব আমি।’’ সদানন্দের এই কাণ্ড দেখতে বিষ্ণুপুরে বেড়াতে আসা পর্যটকেরাও ভিড় করেছিলেন দিঘির চারপাশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy