Advertisement
E-Paper

বাঁকুড়া মেডিক্যালে দালাল রোধে বদল হচ্ছে কালির রং

বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় একই রয়েছে। অথচ, কাগজে-কলমে দেখা যাচ্ছে পুরনো রোগীদের সংখ্যা কমে গিয়েছে। এক দিন-দু’দিন নয়, গত কয়েক মাস ধরে বাঁকুড়া মেডিক্যালের বহির্বিভাগে এই কাণ্ড চলছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩০
বহির্বিভাগে অভিযানে হাসপাতালের কর্মকর্তারা। নিজস্ব চিত্র

বহির্বিভাগে অভিযানে হাসপাতালের কর্মকর্তারা। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে প্রথম বার দু’টাকা দিয়ে টিকিট করাতে হয়। বহির্বিভাগে ‘ফলো-আপ’ চিকিৎসায় পরবর্তী কালে টাকা না লাগলেও, লাইন দিয়ে প্রেসক্রিপশনে ‘রি-এন্ট্রি’-র স্ট্যাম্প লাগাতে হয়। ওই স্ট্যাম্পে কেবল তারিখের উল্লেখ থাকে। সেই ‘রি-এন্ট্রি’র লাইনে ভিড় হয়। তাই লাইনে না দাঁড়িয়ে বাইরে থেকে স্ট্যাম্প মেরে কাজ হাসিল করে দেওয়ার ব্যবসা খুলে বসেছে দালালেরা। তদন্তে তা জানতে পেরে এ বার বহির্বিভাগে রাবার স্ট্যাম্পের কালির রং ঘনঘন বদল করার সিদ্ধান্ত নিল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় একই রয়েছে। অথচ, কাগজে-কলমে দেখা যাচ্ছে পুরনো রোগীদের সংখ্যা কমে গিয়েছে। এক দিন-দু’দিন নয়, গত কয়েক মাস ধরে বাঁকুড়া মেডিক্যালের বহির্বিভাগে এই কাণ্ড চলছিল। তদন্তে নেমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছেন, এর পিছনে রয়েছে দালাল চক্র। হাসপাতালের ‘আউটডোর’ টিকিট কাউন্টারে গিয়ে অনেকে ‘রি-এন্ট্রি’র স্ট্যাম্প না করালেও তাঁদের প্রেসক্রিপশনে দিব্যি ছাপ পড়ে যাচ্ছিল। তা আটকাতে মঙ্গলবার থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালের বহির্বিভাগের স্ট্যাম্পের কালির রং বদলে দেওয়া হল। দালাল ধরতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশের দ্বারস্থ হবেন বলেও ঠিক করেছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বাইরে থেকে স্ট্যাম্প দেওয়া পুরনো রোগীরা হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ পেয়েছেন। অথচ, হাসপাতালের খাতায় তাঁদের নাম নথিভুক্ত হয়নি। ফলে, ওষুধ বিলির হিসেবে বড়সড় গরমিল উঠে আসার আশঙ্কা রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

বাঁকুড়া মেডিক্যালে বহির্বিভাগে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখানো, বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা, অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি করা থেকে রক্ত সংগ্রহ— বিভিন্ন ক্ষেত্রে বারবার দালাল চক্রের অভিযোগ সামনে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপও করেছেন। কিন্তু বহির্বিভাগে ‘রি-এন্ট্রি’র স্ট্যাম্প মারার ক্ষেত্রে দালাল চক্রের ছায়া আগে দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছেন হাসপাতালের কর্মীরা।

সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে পুরনো রোগীর টিকিট ‘রি-এন্ট্রি’ করানোর সংখ্যা বেশ কমে গিয়েছে। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে প্রায় দেড় হাজার নতুন রোগীর টিকিট কাটা হয়। টিকিট ‘রি-এন্ট্রি’ করানো হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পুরনো রোগীর। তাঁর কথায়, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে নতুন টিকিট কাটার সংখ্যায় তেমন হেরফের না হলেও টিকিট ‘রি-এন্ট্রি’র সংখ্যা কমে তিন-সাড়ে তিন হাজার হয়ে গিয়েছে। অথচ, ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা, রোগীর সংখ্যা কমেনি। খোঁজ করতে গিয়ে দালাল চক্রের অস্তিত্ব সামনে আসে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ঘনঘন স্ট্যাম্পের রং বদল করা হবে।’’

এত দিন স্ট্যাম্পের কালির রং ছিল নীল। এ দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খয়েরি রঙের কালি ব্যবহার করেন। তারপরেই বহির্বিভাগে অভিযান চালান অধ্যক্ষ, হাসপাতালের সুপার গৌতমনারায়ণ সরকার-সহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘দেখি, প্রতি পনেরো-কুড়ি জন রোগীর মধ্যে এক জন রোগী দালালদের থেকে নীল রঙের স্ট্যাম্প নিয়ে এসেছেন। তাঁদের নতুন করে এন্ট্রি করাতে বলা হয়।’’

কোথা থেকে দেওয়া হচ্ছে এই স্ট্যাম্প? ছাতনা থেকে আসা গৌতম বাউরি বলেন, “রি-এন্ট্রি করানোর কাউন্টারে লম্বা লাইন ছিল। সেই সময় এক ব্যক্তি এসে জানান, পঞ্চাশ টাকা দিলেই স্ট্যাম্প দিয়ে দেবেন। হাতে সময় কম। তাই তাঁর কথা মেনে নিলাম।” কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, বাসস্ট্যান্ড, বাঁকুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকাতেও অনেকে টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্প দিয়ে দিচ্ছেন।

অধ্যক্ষ বলেন, “দালাল চক্র রুখতে আমরা ঘন ঘন স্ট্যাম্পের কালির রং পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই দালালচক্রে জড়িতদের ধরতে পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় বসব।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “স্ট্যাম্প নিয়ে চলা দালালচক্রের বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।”

Bankura Medical College Middleman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy