Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বালি চুরি রুখলেন বিধায়ক

এ দিন ওই এলাকায় কিছু দুষ্কৃতী লোকজন নামিয়ে ট্রাক্টরে বালি তুলছিল। অথচ কাউকেই ওই এলাকায় বালি তোলার ইজারা দেওয়া হয়নি বলে প্রশাসন জানাচ্ছে।

পাকড়াও: কী ভাবে ট্রাক্টরে বালি তোলা হচ্ছিল, পুলিশকে দেখাচ্ছেন শম্পাদেবী। —নিজস্ব চিত্র ।

পাকড়াও: কী ভাবে ট্রাক্টরে বালি তোলা হচ্ছিল, পুলিশকে দেখাচ্ছেন শম্পাদেবী। —নিজস্ব চিত্র ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ১২:৩৫
Share: Save:

বিধায়ক নদীতে দাঁড়িয়ে থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলা রুখে দিলেন। বুধবার বাঁকুড়া সদর থানার রাঙামেটা গ্রামে দ্বারকেশ্বর নদে ঘটনাটি ঘটে।

এ দিন ওই এলাকায় কিছু দুষ্কৃতী লোকজন নামিয়ে ট্রাক্টরে বালি তুলছিল। অথচ কাউকেই ওই এলাকায় বালি তোলার ইজারা দেওয়া হয়নি বলে প্রশাসন জানাচ্ছে। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি নজরে আসে বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপার। তিনি গাড়ি থেকে নেমে সটান সেখানে চলে যান। ফোনে খবর দেন থানায়। শম্পাদেবী সেখানে গিয়ে বালি তোলার কাগজপত্র রয়েছে কি না জানতে চান। তিনি হম্বিতম্বি শুরু করতেই দুষ্কৃতীরা ট্রাক্টর ও একটি মোটরবাইক ফেলে রেখে চম্পট দেয়। পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চারটি ট্রাক্টর ও মোটরবাইটি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে আসে।

শম্পাদেবী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালি চুরি রুখতে তৎপর। আর দিনেদুপুরে এখানে বালি চুরি চলছে? এ সব বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশকে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ বাঁকুড়া সদর থানা জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে।’’

তবে যাঁরা ইজারা নিয়ে বালি তুলছেন, তাঁরাও যে প্রশাসনের নিয়ম মানছেন, তেমনটা নয়। বালি তোলা নিয়ে বেনিয়ম বন্ধ করতে জয়পুর ব্লক অফিসে মঙ্গলবার প্রশাসনিক সভায় কড়া বার্তা দিয়েছিলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক। তিনি জানিয়েছেন, কোনও ভাবে নদ-নদী থেকে যন্ত্র নামিয়ে যেখান সেখান থেকে বালি তোলা যাবে না। প্রশাসনের নির্দেশ মতো বালি তোলা না হলে, প্রয়‌োজনে কড়া পদক্ষেপ করতে পিছপা হবেন না তাঁরা। কিন্তু বুধবারই বাঁকুড়ার বিভিন্ন নদী ঘাট থেকে যথারীতি যন্ত্র দিয়ে বালি তোলার কাজ চলল।

এ দিন সকাল ১০টায় বিষ্ণুপুর ব্লকের দ্বারিকা গোঁসাইপুর এবং উলিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যবর্তী সুভাষপল্লি ও ডিহর গ্রামের মধ্যে অস্থায়ী সেতুর পাশ থেকে দ্বারকেশ্বর থেকে যন্ত্র দিয়ে বালি তোলা চলতে দেখা যায়।

এ নিয়ে বিষ্ণুপুর বিডিও জয়তি চক্রবর্তী এ দিন সকালে বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’ তবে বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা মহাকুমা স্তরে বালি তোলা নিয়ে মনিটরিং কমিটির সদস্য উজ্জ্বলা কবিরাজ দাবি করেছেন, দ্বারকেশ্বর নদের দুই পাড়ের কোনও পঞ্চায়েত প্রধান অবশ্য বিষয়টি তাঁকে জানাননি। যদিও বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতিরই ভূমি কর্মধ্যক্ষ দুলাল নায়েক বলেন, ‘‘দু’দিন আগেও ওই বালিঘাট থেকে যন্ত্রে বালি তোলা হচ্ছে বলে জানতাম।’’

তবে প্রশাসন স্বীকার করছে, এই ধরনের অভিযোগ তাঁরা পাচ্ছেন। মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিষ্ণুপুর) কিঙ্করনাথ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর মহকুমাজুড়ে মোট ৫৩ জন বালি তোলার ইজারা পেয়েছেন। তার মধ্যে বিষ্ণুপুর ব্লকে পেয়েছেন চার জন। সব থেকে বেশি অভিযোগ আসছে বিষ্ণুপুর থেকেই।’’

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুরের একটি এলাকায় অভিযোগ পেয়ে আধিকারিকেরা অভিযান চালান। তবে যন্ত্র দিয়ে বালি তুলতে কাউকে দেখা যায়নি। তবে অভিযান জেলার সর্বত্রই চলছে।’’ মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিষ্ণুপুর) জানান, এ দিন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিষ্ণুপুর) অভিযানে বেরিয়েছিলেন। রাধানগর এলাকায় অতিরিক্ত বালি পরিবহণের সন্দেহে একটি ট্রাক আটক করা হয়েছে।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘কোথাও হাতেনাতে ধরা পড়লে সাময়িক ভাবে ওই খাদান বন্ধ করে দেওয়া হবে। খাদানের লিজ প্রাপক লিখিত ভাবে মুচলেকা দিয়ে নিয়ম মেনে বালি তোলার কথা জানালে আর একবার মাত্র সুযোগ তাঁকে দেওয়া হবে। তারপরেও নিয়ম ভাঙলে লিজ একেবারে বাতিল করে দেওয়া হবে।’’

তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি ওন্দার দ্বারকেশ্বরে একটি খাদানের লিজ প্রাপকের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে বালি তোলার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বালি তোলা যাতে আইন মেনে হয়, সে জন্য আজ বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর মহকুমাশাসকের দফতরে ওন্দা, কোতুলপুর ও বিষ্ণুপুর ব্লকের ঘাট মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন জেলাশাসক ও প্রশাসনিক কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE