Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হোমেই মিলেছে ভাইবোন

ওঁদের কারও শরীরে রোগ মুক্তির পরেও রয়ে গিয়েছে কুষ্ঠর ছাপ। কেউ কেউ আবার কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত বাবা-মায়ের সন্তানের পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। সমাজ তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।

নার্সারির কর্মীদের ফোঁটা দিচ্ছেন বিডিও পূর্বিতা চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

নার্সারির কর্মীদের ফোঁটা দিচ্ছেন বিডিও পূর্বিতা চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৮
Share: Save:

ওঁদের কারও শরীরে রোগ মুক্তির পরেও রয়ে গিয়েছে কুষ্ঠর ছাপ। কেউ কেউ আবার কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত বাবা-মায়ের সন্তানের পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। সমাজ তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। পেটে চালাতে তাই অনেকেই ভিক্ষা করতেন। পাশে দাঁড়িয়ে প্রশাসন তাঁদের নার্সারি চালু করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছিল। এ বার সেই সব শ্রমিকের মধ্যে ভাইফোঁটা চালু করে সম্মানিত করতে উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন।

রেল শহর আদ্রার পাশে কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্র মণিপুর গ্রামে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ফল, ফুল-সহ অন্যান্য গাছের চারা তৈরির নার্সারি তৈরি করেছে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন। বস্তুত কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারগুলির আর্থিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা এখনও অবধি খরচ করেছে স্থানীয় আড়রা পঞ্চায়েত। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান মধুসূদন দাস জানান, ইতিমধ্যেই এক হাজার পেঁপে ও আতার চারা তৈরি করা হয়েছে। বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি সম্প্রতি ওই চারা নিয়েছে। বর্তমানে পেয়ারা ও গামার গাছের এক হাজার চারা তৈরির কাজ চলছে।

এই শ্রমিকদের মধ্যে বাঁধন আরও দৃঢ় করতেই ভাইফোঁটার দিনটিকে বেছে নিয়েছিল রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন। এ দিন নার্সারিতে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় পাল ও মৃদুল শ্রীমানি। ছিলেন রঘুনাথপুর ১ বিডিও পূর্বিতা চট্টোপাধ্যায়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে শ্রমিকদের শপথ বাক্য পাঠ করান মৃদুলবাবু। পরে শুরু হয় গণভাইফোঁটা। বিডিও পূর্বিতাদেবী নার্সারিতে কর্মরত স্বনির্ভর দলের মহিলা সদস্যদের নিয়ে ফোঁটা দেন পুরুষ শ্রমিকদের। ভাই ও বোন সকলের জন্যই মিষ্টির প্যাকেটের ব্যাবস্থা করেছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান।

মহিলা শ্রমিকদের মধ্যে রাখি সোরেন, উপাসী রাজোয়াড়, মন্দিরা সিংহেরা বলেন, ‘‘সবাই এক সাথে কাজ করি ঠিকই। কিন্তু নার্সারির ছেলেদের ফোঁটা দেওয়ার পরে মনে হচ্ছে একটা আত্মিক বন্ধন তৈরি হল!” আর ফোঁটা নেওয়া নিতাই মাহাতো, ভরত বাউরি, মোহন মাহাতোরা বলেন, ‘‘ভাইফোঁটা নেওয়ার পরে মনে হচ্ছে আমরা সকলেই একটা পরিবারের সদস্য। একটা পরিবারের উন্নয়নে যেমন সকলে মিলে কাজ করে, এ বার থেকে তেমনি ভাবে কাজ করার জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা পেলাম।” তাঁদের কথা শুনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় পাল বলেন, ‘‘মহিলা শ্রমিকেরা ফোঁটা দিয়েছেন ভাইদের। ফোঁটা নেওয়ার প্রতিদানে নার্সারির গাছ বাঁচিয়ে রেখে সকলের জীবন জীবিকার সুরাহা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভায়েরা। এটাই আমরা চেয়েছি।”

এ বারও ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান হয়েছে মণিপুর গ্রামেরই কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারগুলির ছেলেমেয়ে ও অনাথ শিশুদের হোম ‘অরুণোদয় শিশু নিকেতনে’। এখানকার আবাসিক ছোট মেয়েদের কাছে ফোঁটা নিয়েছেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয়বাবু, মৃদুলবাবু, পঞ্চায়েত প্রধান মধুসূদনবাবুরাও। হোমের কর্মকর্তা নবকুমার দাস জানান, তাদের হোমে প্রায় ১৭৫ জন আবাসিক আছে। ছেলের সংখ্যা ১২৫ ও মেয়ে রয়েছে জনা পঞ্চাশেক। আবাসিক প্রিয়াঙ্কা সোরেন, প্রীতি সাউ, প্রিন্স কুমার, অর্জুন বান্দ্রা বলে, ‘‘হোমে আসার পরে ভাইফোঁটার দিনে বাড়ির কথা খুব মনে পড়ত। এখন হোমেই ভাইবোন পেয়েছি। ভাইফোঁটার জন্য এখন মুখিয়ে থাকি সকলেই।” সেখানে এ দিন দু’বেলা ভরপেট ভালমন্দ খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE