Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিবাদের ফাঁক গলেই গোল বিরোধীদের 

সকদলের গোঁজ প্রার্থীরাও মনোনয়ন দিলেন মন খুলে। খাতড়ার মহকুমা এলাকায় বাঁকুড়া জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ১৫।

বন্ধ: কমিশনের মনোনয়ন বাতিলের নির্দেশ তখনও আসেনি। বিষ্ণুপুরের এসডিও অফিসের দরজায় কারা ঝুলিয়ে দিল তালা। কমিশনের নির্দেশ আসতেই খুলে যায়। ছবি: শুভ্র মিত্র

বন্ধ: কমিশনের মনোনয়ন বাতিলের নির্দেশ তখনও আসেনি। বিষ্ণুপুরের এসডিও অফিসের দরজায় কারা ঝুলিয়ে দিল তালা। কমিশনের নির্দেশ আসতেই খুলে যায়। ছবি: শুভ্র মিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪১
Share: Save:

গোড়ার দিকে মাছি গলারও উপায় ছিল না। অথচ সেই খাতড়ার মহকুমাশাসকের অফিসেই দলে দলে মনোনয়ন জমা পড়ে গেল বিরোধীদের। কারণ হাতড়াতে গিয়ে উঠে এসেছে তৃণমূলের দুই নেতার অনুগামীদের দ্বন্দ্বই মহকুমাশাসকের অফিসের দরজা খুলে দিয়েছিল বিরোধী প্রার্থীদের। শাসকদলের গোঁজ প্রার্থীরাও মনোনয়ন দিলেন মন খুলে।

খাতড়ার মহকুমা এলাকায় বাঁকুড়া জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ১৫। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই ১৫টি আসনে মোট মনোনয়ন জমা করেছেন ৮৭। তার মধ্যে তৃণমূলের হয়েই মনোনয়ন দিয়েছেন ৩১ জন! আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা।

জেলার অন্য দু’টি মহকুমা বাঁকুড়া সদর ও বিষ্ণুপুরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম দিন থেকে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে তৃণমূল আশ্রিত দু্ষ্কৃতীরা জমায়েত করে হামলা চালিয়েছে বলে বারবার অভিযোগ তুলছিলেন বিরোধীরা। সেই প্রতিরোধের মুখে পড়ে শুধু বিরোধীরাই নয়, শাসকদলের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজনও মনোনয়ন দিতে পারেননি বলে অভিযোগ তুলছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাঁকুড়া সদর মহকুমাতে জেলা পরিষদের ১৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের তরফে ১৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বিষ্ণুপুরে ১৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের হয়ে ১৫ জন জমা দিয়েছেন। এখানে শুধু জয়পুর ৩৫ নম্বর আসনে তৃণমূলের তিন জন নাম জমা করেছেন। আর বাঁকুড়া ২ ব্লকের ২৬ নম্বর জেলা পরিষদের আসনে তৃণমূলের তরফে দু’টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। বাকি সর্বত্রই এক জন করেই প্রার্থী রয়েছেন।

অথচ, খাতড়ায় উল্টো ছবি। কেন?

সিপিএম ও বিজেপি-র দাবি, খাতড়ায় মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে মনোনয়ন পর্বের প্রথম দু’দিন শাসকদলের একটি গোষ্ঠীর লোকজন জমায়েত করে বিরোধীদের আটকাচ্ছিল। দল সূত্রে খবর, ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধ দলেরই লোকেরাও আটকে পড়েছিলেন। তাঁরা পাল্টা প্রতিরোধে নামেন। দ্বিতীয় দিনে মারধর করে সরিয়ে দেন জমায়েতকারীদের। তারপর থেকেই খাতড়া মহকুমাশাসকের অফিসের দরজা সবার জন্য খুলে যায়। এরপরেই শাসকদলের সব পক্ষের নেতা-কর্মীরাই মনোনয়ন জমা করেন।

বস্তুত, খাতড়ায় দুই নেতার দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। আর সেই বিবাদই এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাপে বর হয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র বাঁকুড়া জেলা সাংগঠনিক সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, ‘‘যেন তেন প্রকারে বিরোধীদের মনোনয়ন আটকানোর লক্ষ্য নিয়েই পঞ্চায়েত ভোটে নেমেছে তৃণমূল। কিন্তু খাতড়ায় তাদের দুই গোষ্ঠীর মারামারির জেরে সেই রণকৌশল ভেস্তে গিয়েছে। তারই ফায়দা তুলেছি আমরা।’’ এ নিয়ে আলোচনা চলছিল সিপিএমের জেলা অফিসেও। সেখানেই জেলা নেতারা বলছিলেন, ‘‘তৃণমূলের দ্বন্দ্বই এ বার দক্ষিণ বাঁকুড়ায় গণতন্ত্রর মুখ রক্ষা করল।’’

যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সংখ্যা গরিষ্ঠতার বিচারে জেলা পরিষদ দখলে রেখে দিচ্ছে তারা। কারণ জেলা পরিষদের ৪৬টি আসনের মধ্যে ২৬টি আসনেই বিরোধীরা কেউ মনোনয়ন দেননি। জেলার ১২টি পঞ্চায়েত সমিতিও একই ভাবে তৃণমূলের হাতে চলে এসেছে।

সেই তথ্য তুলে ধরে জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খানের দাবি, ‘‘উন্নয়নের জয় হয়েছে। বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাননি।’’ কিন্তু খাতড়ায় আসনের থেকে দলেরই এত বেশি প্রার্থী কেন? অরূপবাবুর দাবি, ‘‘দলের অনুমোদন থাকা প্রার্থীরাই শুধু তৃণমূলের হয়ে লড়বেন। বাকি যদি কেউ দলের হয়ে মনোনয়ন দিয়ে থাকেন, তাঁরা সত্যিই তৃণমূলের কর্মী হলে প্রত্যাহার করবেন। দ্বন্দ্ব নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE