Advertisement
E-Paper

তিন পতাকায় তিন জা, চর্চা আড়শায়

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ০১:৫৫
আত্মীয়া: পতাকা হাতে তিন দলের তিন প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র

আত্মীয়া: পতাকা হাতে তিন দলের তিন প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র

ছেলে মানুষ করা আর হেঁশেল ঠেলার মধ্যেই তাঁদের জীবন যেন আটকে ছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট আড়শার রুগড়ি গ্রামের মণ্ডলবাড়ির তিন বৌকে সেই বৃত্ত থেকে বের করে এনে এ বার রাজনীতির আঙিনায় নামিয়ে দিয়েছে। একটি আসনের জন্য ওই তিন জাকে তিনটি দল প্রার্থী করেছে। তা নিয়েই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে এলাকায়।

এই পরিবারের কেউই এলাকায় সক্রিয় ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু রুগনি গ্রাম সংসদের আসনটি মহিলা তফসিলি জাতি সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় সেই বাড়িতেই ঢুকে পড়েছে রাজনীতি। বাড়ির বড় বৌ মঞ্জুকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে। আর তাঁর খুড়শ্বশুরের দুই বৌমা আশা ও জারুকে যথাক্রমে প্রার্থী করেছে বিজেপি এবং কংগ্রেস।

যদিও ভোটের আঁচ পড়েনি তাঁদের ঘরোয়া জীবনযাত্রায়। পারিবারিক একটি বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে তিন জায়েই ক’টা দিন ব্যস্ত ছিলেন। প্রচারও শুরু হয়নি। মঞ্জুর বাড়ির পাশেই রাস্তা। সেই রাস্তার ওপারেই আশা ও জারুদের বাড়ি।

মঞ্জুর স্বামী চাষাবাদ করেন। বাড়িতে তাঁর দুই হাইস্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সকলে আমাকে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার জন্য ধরায় তা ফেলতে পারিনি। তবে পরিবারের সম্মতি নিয়েই প্রার্থী হয়েছি।’’ জেতার ব্যাপারে অবশ্য মঞ্জুদেবী আত্মবিশ্বাসী।

এক বাড়িতে থাকলেও মেজ জা আশা ও ছোট জা জারুর হেঁশেল আলাদা। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দুই জা সংসারের কাজ সামলাতে ব্যস্ত। দেখে বোঝার উপায় নেই, তাঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন।

আশার স্বামী চাষাবাদের পাশাপাশি ছোট মুদির দোকান চালান। তাঁদেরও দুই ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে। শ্বশুরবাড়িতে না থাকলেও আশার বাপের বাড়িতে অবশ্য রাজনীতির চর্চা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বরাবাজারে আমার বাপের বাড়ি। দাদা আগে কংগ্রেস সমর্থক ছিলেন, এখন বিজেপি করেন। তাই আমাকে যখন বিজেপি থেকে প্রার্থী হতে বলল, ঠিক করলাম দাঁড়িয়েই পড়ি। এটা তো নতুন অভিজ্ঞতা।’’

তাঁর কথাবার্তার মাঝে পাশে এসে দাঁড়ালেন কংগ্রেসের প্রার্থী ছোট জা জারু। তাঁর স্বামীও চাষাবাদ করেন। দু’টি ছোট মেয়ের পরে তাঁর ন’মাসের একটি ছেলে রয়েছে। সেই ছেলেকে খাওয়াচ্ছিলেন তিনি। জারু বলেন, ‘‘আমি কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়েছি। শীঘ্রই প্রচারে নামব।’’

তখন সংসার সামলাবেন কী ভাবে? তিন জা জানান, সংসারের কাজ সামলেই প্রচারে বেরোবেন। আর জারুর ছোট্ট ছেলেকে কে দেখবে? মেজজা আশা বলেন, ‘‘জারু যখন প্রচারে যাবে, তখন ওর ছোট্ট ছেলেটাকে আমিই দেখব। ভোটের লডাইটা বাইরে। বাড়ির মধ্যে তাকে টেনে আনব কেন?’’

আড়শা পঞ্চায়েতে গতবারে প্রথমে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল ও সিপিএম। পরে অনাস্থা আসার পরে শেষ দু’বছরে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম। রুগড়ি আসনে জিতেছিল কংগ্রেসই। এ বার কী আশা করছেন নেতারা?

আড়শার বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি সুষেণচন্দ্র মাঝি বলেন, ‘‘রুগড়ি সংসদের আসনে তিন জায়ের লড়াই নিয়ে এলাকায় জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে ওই আসনে আমরাই জিতব।’’ আড়শা ব্লক কংগ্রেস নেতা সলিলকুমার মাঝিরও দাবি, ‘‘এলাকায় আমাদের সংগঠন এখনও ভাল। জয় নিয়ে তাই চিন্তা নেই।’’

আর বিজেপির আড়শার মণ্ডল সভাপতি সেবাদাস গোপেরও সেই একই দাবি।

ভোট দেবেন কাকে? ভাঙতে নারাজ পরিবারের সদস্যেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘ভোট কাকে দেব, সে কথা কি পাঁচকান করার?’’

West Bengal Pnachayat Elections 2018 Family TMC Congress BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy