দুই-নেতা: ঝালদার তুলিনে তৃণমূলের প্রচারে অভিনেতা সোহম। বাঘমুণ্ডিতে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর জনসভা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
একই আসনে তৃণমূলের হয়ে মনোয়নয়ন জমা করেছিলেন একের বেশি প্রার্থী। দলীয় প্রতীক না পেয়ে নির্দল হিসাবে এখনও কেউ কেউ রয়েছেন লড়াইয়ে। শুক্রবার বাঁকুড়ার সিমলাপালের বিক্রমপুর হাইস্কুলের মাঠে সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘যাঁরা আম, কলা চিহ্নে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের পিছনে কোন দাদার হাত রয়েছে তা জেনেছি। ভোটের পরে এরা যাতে কোনও ভাবেই আর তৃণমূল ফিরতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হবে।”
মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্ব মিটতে বাঁকুড়ায় দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন আসনে নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। যেমন, জেলা পরিষদের ৪৬টি আসনের জন্য তৃণমূলের হয়ে ৭৪ জন মনোনয়ন জমা করেছিলেন। নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরে দেখা যায়, নির্দলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে হয়েছে ১৪। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতেও অবস্থা হয়েছে এমনটাই। জেলা তৃণমূল নেতারা সেই সময়ে মেনে নিয়েছিলেন, গোঁজ প্রার্থীদের অনেকেই সরে দাঁড়াননি। অন্য প্রতীকে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, তাঁদের চাপে ফেলতে বিক্ষুব্ধ নির্দলদের সঙ্গে কোথাও কোথাও অলিখিত জোট করেছে বিজেপি ও সিপিএম। তবে দু’ই দলের জেলা নেতারাই এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আর মনোয়নয় প্রত্যাহার করার উপায় নেই। ফলে শাসকদলের জেলা এবং রাজ্য নেতারা বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে গোঁজ কাঁটা নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছেন। তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা নেতাদের দাবি, বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের অধিকাংশই কথা দিয়েছেন, দলের প্রতীক পাওয়া প্রার্থীর হয়েই প্রচার করবেন।
অন্য দিকে, পুরুলিয়াতেও গোঁজ-কাঁটায় বিদ্ধ শাসকদল। সেখানে তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ শান্তনু সেন দফায় দফায় বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁদের অনেককেই রাজি করিয়েছেন দলের অনুমোদন করা প্রার্থীর হয়ে প্রচার করতে। সেই রকমের একটি বৈঠকের পরেও সাঁতুড়ি জেলা পরিষদের বিদায়ী সদস্য তথা তৃণমূলের আদিবাসী নেতা বড়কারাম টুড়ু জানিয়েছিলেন, দলীয় কর্মী সমর্থকদের প্রত্যাশা মেনে নিয়ে লড়াই থেকে সরার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার নিতুড়িয়ার গোবাগে অভিষেকের মঞ্চে দেখা যায় বড়কারামকে। অভিষেক মঞ্চ থেকে বলেন, ‘‘বড়কারাম টু়ডু আমাদের দলের প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছেন।’’
নেতাদের কথায় অনেকটা চিঁড়ে ভিজেছে। এ দিন অভিষেকের বার্তায় বাকিটাও সহজ হবে বলে আশা করছেন জেলার তৃণমূল নেতারা।
কয়েক সপ্তাহ আগেই তালড্যাংরায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রের বাড়িতে হামলা হয়। ওই ঘটনায় তৃণমূলের লোকজন জড়িত ছিল বলে অভিযোগ জেলা সিপিএম নেতৃত্বের। শাসকদলের বাঁকুড়ার নেতারা গোড়াতেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। এ দিনের সভায় অভিষেক বলেন, “অমিয়বাবু বলছেন, ওঁর বাড়িতে কেউ ঢিল বা পাথর ছুড়েছে। মানুষ যাদের সর্বহারা করেছে তাঁদের তৃণমূল কিছু করে না।” এ দিন অমিয়বাবুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা মিথ্যা কথা বলেই টিঁকে রয়েছেন।’’
অভিষেক আসার আগে এ দিন মঞ্চে বক্তৃতা দেন বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খান। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপিকে হারাতেই হবে। তার জন্য দরকার হলে বুথ জ্যাম করুন, বীরভূমের কায়দায় ভোট করুন।”
পরে অবশ্য সৌমিত্র দাবি করেন, “বিজেপি যাতে ভিন রাজ্য থেকে লোক এনে বুথে গন্ডগোল পাকাতে না পারে তার জন্য দলের কর্মীদের শুধু সতর্ক থাকতে বলেছি।’’
বিরোধীরা অবশ্য এই প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন। বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার বলেন, “তৃণমূল জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। তাই ভোটারদের আটকে বুথ জ্যাম করে ছাপ্পা দেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই বুঝে সাংসদ এমন মন্তব্য করেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy