Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোট ভাগ রুখতে সমঝোতায় সিপিএম-বিজেপি

কোথাও সিপিএমের প্রার্থীকে সুবিধা দিতে নির্বাচনী লড়াই থেকেই সরে এসেছেন বিজেপির মণ্ডল সভাপতি। কোথাও আবার পঞ্চায়েতের অর্ধেক আসনেই বিজেপির সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থীই দেয়নি সিপিএম।

সহাবস্থান : একই দেওয়ালে পাশাপাশি সিপিএমের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ও জেলা পরিষদের বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আবেদন। নিজস্ব চিত্র

সহাবস্থান : একই দেওয়ালে পাশাপাশি সিপিএমের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ও জেলা পরিষদের বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আবেদন। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০১:৩৫
Share: Save:

বিজেপির সঙ্গে আসন সমঝোতা করলে শাস্তি জুটবে। দলের কর্মীদের সিপিএম নেতৃত্ব এমন কড়া বার্তা দিলেও পুরুলিয়া জেলার কিছু এলাকায় ওই দুই দলের স্থানীয় নেতৃত্ব যে আসন সমঝোতা করেই লড়তে নেমেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে প্রার্থীদের প্রচারে ঘুরে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

কোথাও সিপিএমের প্রার্থীকে সুবিধা দিতে নির্বাচনী লড়াই থেকেই সরে এসেছেন বিজেপির মণ্ডল সভাপতি। কোথাও আবার পঞ্চায়েতের অর্ধেক আসনেই বিজেপির সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থীই দেয়নি সিপিএম। যদিও সিপিএম নেতৃত্ব প্রকাশ্যে সমঝোতার কথা মানতে চাইছেন না। বিজেপির নেতারাও বিষয়টিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের জোট বলে দাবি করছেন। আর এই সমীকরণ কী ফল দেয়, অপেক্ষায় পুরুলিয়াবাসী।

বস্তুত, যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারে জেলায় আসা শাসকদলের সমস্ত নেতা মন্ত্রীই দাবি করেছেন, সিপিএমের বহু কর্মী এখন বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। জেলার বহু আসনে তৃণমূল প্রার্থীদের হারাতে সিপিএম-বিজেপি আসন সমঝোতা করেছে বলেও প্রচারে লাগাতার অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। ঘটনা হল নির্বাচনের প্রাক্কালে জেলার বেশ কিছু ব্লকে দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে এলাকায় প্রচারে দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের এক সাথে ঘুরতেও দেখা যাচ্ছে। যা দেখে অনেকেই বলছেন— ‘রাম আর বাম এক হয়ে গিয়েছে’।

রাজনীতিতে দুই বিপরীত মেরুতে থাকা সিপিএম ও বিজেপি কর্মীদের আসন সমঝোতার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে সাঁতুড়ি ব্লকে। সেখানে বেশ কয়েকটি দেওয়াল লিখনেও তা ধরা পড়েছে। গ্রাম সভায় সিপিএম ও বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেওয়াল লেখা হয়েছে। পাশেই পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএমের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই দেওয়ালেই আবার সিপিএমের প্রার্থীর বদলে জেলা পরিষদে বিজেপির প্রার্থীকে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

সাঁতুড়ির তৃণমূল ব্লক সভাপতির রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘সাঁতুড়ি, টাড়াবাড়ি ও গড়শিকা এই তিন পঞ্চায়েতে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে সমঝোতা করছে লড়ছে সিপিএম ও বিজেপি। তবে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না।”

তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগাভাগি রুখতেই যে সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতা করা হয়েছে, তা মানছেন বিজেপির সাঁতুড়ি মণ্ডলের সভাপতি অরূপ আচার্য। পঞ্চায়েত সমিতির ১৩ নম্বর আসনে প্রথমে মনোনয়ন করেও সিপিএমকে সুবিধা দিতে নিজের নাম প্রত্যাহার করেছেন বলে স্বীকার করেন অরূপবাবু। ওই আসনে সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে সরাসরি লড়াই হচ্ছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি বিধুভূষণ শান্তিকারির। এই প্রসঙ্গে অরূপবাবু বলেন, ‘‘বিরোধী ভোট ভাগাভাগি রুখতে ওই আসনে সিপিএমের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া হয়েছে। সিপিএম প্রার্থী কোনও কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে আসনটি বিনা লড়াইয়ে জিতে যেত তৃণমূল। তাই আমি মনোনয়ন করেছিলেন।’’

পাশের ব্লক নিতুড়িয়াতেও সিপিএম আসন সমঝোতা করেছে বলে দাবি করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

দলের ব্লক সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদবের দাবি, শালতোড় ও সড়বড়ি এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২টি আসনে সিপিএম ও বিজেপি আসন সমঝোতা করেছে। সড়বড়ি এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনেও সমঝোতা হয়েছে। ওই সব এলাকায় দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রচারে এক সাথে দুই দলের সমর্থকদের নামতেও দেখেছেন বাসিন্দারা।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাশীপুর ব্লকের বহু পঞ্চায়েতে স্থানীয় ভাবে সমঝোতা হয়েছে দু’দলে। এই ব্লকের সোনাথলি, সোনাইজুড়ি, আগরডি-চিত্রা, সিমলা ধানাড়া ও কাশীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু আসনে সমঝোতা দু’দলের কর্মী-সমর্থকেরা মসঝোতা করেছে বলে জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, মনোনয়ন আটকাতে যে ভাবে তৃণমূল নেমেছিল, তাই বাঁচার তাগিদেই নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।

জেলার অন্যান্য ব্লকেও সমঝোতার ছবি পাওয়া যাচ্ছে। তৃণমূলের অভিযোগ, জঙ্গলমহলের বহু ব্লকে তাদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম ও বিজেপি। তৃণমূলের এক নেতার মতে, ‘‘জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় সিপিএমকে ভেঙেই বিজেপি শক্তি বাড়িয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় দু’দলের নিচুতলার কর্মীরা আসন সমঝোতা করেছেন।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘আমরা যাদের নেতা হিসাবে মনে করি, তেমন পদাধিকারীরা কেউ বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে লড়াই করছেন বলে খবর নেই। এমন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই দলগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আর বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করছেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে কোথাও আমাদের আসন সমঝোতা হয়নি। যদি কিছু হয়ে থাকে, তাহলে সেটা তৃণমূলের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষের জোট।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE