Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Birhor

Purulia: পাশ করেও পড়া নিয়ে ধন্দে বীরহোড় ছাত্রেরা

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে কাঞ্চন শিকারি ও সীতারাম শিকারি, এই দু’জনের সৌজন্যে গ্রামে প্রথম শিক্ষার আলো পৌঁছয়।

মাধ্যমিক উত্তীর্ণ তিন ছাত্র।

মাধ্যমিক উত্তীর্ণ তিন ছাত্র। নিজস্ব চিত্র।

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২২ ০৮:১৫
Share: Save:

শিক্ষার আলো পড়ছে লুপ্তপ্রায় প্রজাতি বীরহোড় সম্পদায়ের গ্রামে। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসারে লড়াই করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল ওই প্রজাতির তিন পড়ুয়া। পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির ভূপতিপল্লির জিহুড় শিকারি, পর্বত শিকারি ও বিদেশি শিকারি স্থানীয় ধসকা পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় বসেছিল এ বার। কিন্তু পাশ করলেও, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে বলে দাবি ওই ছাত্রদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে কাঞ্চন শিকারি ও সীতারাম শিকারি, এই দু’জনের সৌজন্যে গ্রামে প্রথম শিক্ষার আলো পৌঁছয়। চার বছর আগে, ভূপতিপল্লিতে নারীশিক্ষা শুরু হয় রথনি শিকারি ও জানকী শিকারি, দুই বোনের হাত ধরে। তার পরে আরও তিন কিশোর-কিশোরী মাধ্যমিকের গণ্ডি ডিঙিয়েছে। এ বার ভূপতিপল্লির এই তিন জন রঘুনাথ মুর্মু আদর্শ আবাসিক স্কুল থেকে মাধ্যমিকে বসেছিল। স্কুলের ভারপ্তাপ্ত শিক্ষক সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘বীরহোড় সম্প্রদায়ের তিন কিশোর মাধ্যমিক দিয়েছিল। তিন জনই উত্তীর্ণ হয়েছে।’’

তিন ছাত্রের পরিবারেই এই প্রথম কেউ মাধ্যমিক পাশ করল। জিহুড়ের বাবা মঙ্গল শিকারি প্রাথমিকের পরে, আর পড়াশোনা করতে পারেননি। জিহুড়ের কথায়, ‘‘বাবা চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। মা লেখাপড়া করেননি। দাদা-দিদিরা হাইস্কুলে ভর্তি হলেও, কেউ মাধ্যমিক পর্যন্ত এগোতে পারেনি।’’ একই ছবি পর্বত ও বিদেশির পরিবারেও। বিদেশি জানায়, তার দাদু পতু শিকারি লেখাপড়া করেননি। বাবা সমল শিকারি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। সে বলে, ‘‘বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে দিন চলে। আমার দুই বোন অবশ্য স্কুলে পড়ছে।’’ পর্বতের কথায়, ‘‘বাবা প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েছিলেন। আমার ভাই প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। দুই বোনও পড়াশোনা করছে।’’

মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলেও, এর পরে পড়া চালানো সম্ভব হবে কি না, অনিশ্চিত তিন জনই। ধসকার যে স্কুল থেকে তারা এত দিন লেখাপড়া করেছে, সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব থাকায় ভর্তি হওয়া নিয়ে ধন্দে তারা। জিহুড়, বিদেশির কথায়, ‘‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হব কি না, এখনও ঠিক করিনি।’’ ধসকা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘কোথায় ভর্তি হবে, তা জানতে চেয়েছিলাম ওই ছাত্রদের কাছে। কেউই নিশ্চিত কিছু জানায়নি। শুনলাম, দু’জন ইতিমধ্যে দিনমজুরের কাজ করছে।’’ পর্বত ও বিদেশির কথায়, ‘‘ট্রাক্টরে দিনমজুরি করলে দিনে প্রায় আড়াই-তিনশো টাকা রোজগার হয়। পড়া চালাব কি না, ঠিক করতে পারছি না।’’

বীরহোড় সম্প্রদায়ের উপরে দীর্ঘদিন গবেষণা করা বলরামপুর কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক তথা ‘মানভূম কালচারাল অ্যাকাডেমি’র সদস্য শিবশঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় আগে জঙ্গল থেকে বীরহোড় সম্প্রদায়কে তুলে এনে বাঘমুণ্ডির ভূপতিপল্লিতে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। পরবর্তীতে ভূপতিপল্লি ছাড়া, আরও কয়েকটি টোলায় বসতি গড়ে দেওয়া হলেও, এই সম্প্রদায়ের লোকজন জঙ্গলেই স্বচ্ছন্দ। জঙ্গল ঘুরে শিকার ধরা এবং চিহড় লতা সংগ্রহ করে দড়ি তৈরি করে হাটে বিক্রি করেন তাঁরা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের হাত ধরে শিক্ষার আলো পৌঁছচ্ছে বটে, কিন্তু শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তাঁদের অনেকেরই ধারণা, পড়াশোনা করে কোনও লাভ হবে না!’’

বিডিও (বাঘমুণ্ডি) দেবরাজ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই তিন ছাত্রের পাশ করার কথা শুনেছি। শীঘ্রই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে।’’ বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘ওদের পড়াশোনা কী ভাবে চালানো যায়, তা কথা বলে দেখছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Birhor Students Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE