শোক: সিয়ানের বেরুগ্রামে শোকার্ত পরিবার।
‘ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যু হয়েছে এই অভিযোগ করে ক্ষোভে ফেটে পড়ল রোগীর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে বোলপুরের সিয়ান বাসস্টান্ডে। পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাম প্রণব চৌধুরী (৪৮)। বাড়ি বোলপুরের বেরুগ্রামে। প্রণববাবু এ দিন বাসস্ট্যান্ড এলাকা হঠাৎ-ই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ওষুধের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। দোকানটি বাবুডাক্তার হিসাবে পরিচিত অশোক আচার্যের। তিনি চিকিৎসার সঙ্গে শিক্ষকতাও করেন। তিনিই প্রণববাবুকে একটি ইনজেকশন দেন। প্রণববাবুর পরিবারের দাবি, এরপরেই প্রণববাবুর মৃত্যু হয়। জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। শেষ হলে জেলাশাসক ও জেলা পুলিশসুপারকে রিপোর্ট দেবেন।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রণববাবুর গ্রামে একটি মুদিখানা রয়েছে। এ দিন বড়ছেলে সুমনকে নিয়ে সিয়ান বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে সাইকেলে মুদিখানার মালপত্র আনতে যান তিনি। সে সময় তিনি হঠাৎ-ই অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে বাসস্ট্যান্ড এলাকারই একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দোকানটি এলাকায় বাবুডাক্তার হিসাবে পরিচিত অশোক আচার্যের। অশোকবাবু দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার পাশাপাশি স্থানীয় আমডহরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেন। তিনি প্রণববাবুকে একটি ইনজেকশান দেন। তারপরেই প্রণববাবু নেতিয়ে পড়েন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। এরপরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সুমনবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বাবা নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ খেতেন। ওই দোকান থেকেই সেই ওষুধ কেনা হত। সেইজন্য প্রেসার বেড়েছে ভেবে বাবাকে দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অশোকবাবু ইনজেকশান দেওয়ার পরই বাবা কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েন। ওই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।’’
মৃত প্রণব চৌধুরী। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দোকান। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
প্রণববাবুর পরিবারের অভিযোগ, ‘‘এর আগেও ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ উঠেছিল। তা স্বত্ত্বেও প্রশাসনের নাকের ডগায় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।’’ এ দিন ঘটনার খবর হাসপাতালে পৌঁছোন জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিন পুলিশ গিয়ে ওই ওষুধের দোকানটি সিল করে দেয়। বাবুডাক্তার ওরফে আশোক আচার্য পলাতক। তাঁর সাইনবোর্ডে লেখা ‘ডিএমএস (শিক্ষক)’। পুলিশি জানিয়েছে, তাঁর খোঁজ চলছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, ডিএমএস বলে অ্যালোপ্যাথিতে কোনও ডিগ্রি নেই। কিন্তু যেহেতু ডাক্তার ইনজেকশন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু বিষয়টি অ্যালোপ্যাথিরই। সেই কারণে তাঁরাই বিষয়টির তদন্ত করছেন।
মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলা সভাধিপতির ফোন পাওয়ার পরে বিষয়টি জানিতে পারি। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ও অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে তদন্ত করতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তালা বন্ধ বলে পাওয়া যায়নি। আমরা তদন্ত করে জেলাশাসক ও জেলাপুলিশ সুপারকে রিপোর্ট দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy