Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দিদির কানে ভাইয়ের কামড়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু

ভাই কামড়ে দিয়েছিল দিদির কান। ক্ষতবিক্ষত করেছিল মুখ। সেই চোটে ঘণ্টাখানেক পরে মৃত্যু হল দিদির। দিদির কামড়ে আহত হয়েছেন ভাইও। শুক্রবার গভীর রাতে বিষ্ণুপুর থানার কাঁকিল্যা গ্রামের এই ঘটনায় তাজ্জব অনেকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৪
Share: Save:

ভাই কামড়ে দিয়েছিল দিদির কান। ক্ষতবিক্ষত করেছিল মুখ। সেই চোটে ঘণ্টাখানেক পরে মৃত্যু হল দিদির। দিদির কামড়ে আহত হয়েছেন ভাইও। শুক্রবার গভীর রাতে বিষ্ণুপুর থানার কাঁকিল্যা গ্রামের এই ঘটনায় তাজ্জব অনেকে। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সকালে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আঙ্গুরি রুইদাস (৪০) নামে ওই মহিলার মৃত্যু হয়। এ দিনই বিষ্ণুপুরে তাঁর দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার। বিষ্ণুপুর থানার আইসি আস্তিক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মৃতের পরিবার খুনের অভিযোগ করলে সেই অনুযায়ী মামলা হবে। তার আগে পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। মৃতের ভাই সাতাশ বছরের মাধব রুইদাসের চিকিৎসা চলছে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে। সেখানে তাঁর উপরে পুলিশ নজর রেখেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকিল্যা গ্রামে আঙ্গুরিদেবী মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। অনেক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বনিবনা না হওয়ায় তিনি বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন। তাঁর কিছুটা মানসিক সমস্যা ছিল। তাঁর ভাই মাধবও মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে স্থানীয় ভাবে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তিনি কিছুটা সুস্থ হওয়ায় স্থানীয় একটি হিমঘরে আলু বাছাইয়ের কাজ করছিলেন। মাসখানেক আগে তাঁর বিয়ে হয়। যদিও তাঁর স্ত্রী কিছুদিন পরেই বাপের বাড়িতে চলে যান। পড়শিরা জানান, দুই ভাই-বোনের মাধে মধ্যেই ঝগড়া হতো। কিন্তু শনিবার রাত প্রায় তিনটে নাগাদ তা মাত্রাছাড়ায়।

কী ঘটেছিল? বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ছেলে ও মেয়েকে ভর্তি করাতে নিয়ে আসা কালী রুইদাস বলেন, ‘‘মাধব আগে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন থাকলেও ইদানীং সে সুস্থ হয়ে উঠেছিল। আমার মেয়েও খিটখিটে ছিল। মাঝে মধ্যে ওদের মধ্যে অশান্তি চলত। কিন্তু শুক্রবার রাতে কী থেকে ওরা একে অন্যকে কামড়া-কামড়ি করতে শুরু করে জানি না।’’

তাজ্জব এলাকার বাসিন্দারাও। পড়শি বিভূতিভূষণ বাউরি, শম্ভু বাউরি জানান, ওদের বাড়িতে হামেশাই গোলমাল হতো। কিন্তু কোনও দিন এমন রক্তারক্তি হয়নি। সেই রাতে হইচই শুনে ছুটে গিয়েছিলেন আদিত্য রুইদাস। তিনি বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে ওদের ঘরে ঢুকে দেখি মেঝেময় রক্ত। দুই ভাই-বোনের মুখ থেকে রক্ত ঝরছে। কী থেকে এমন কাণ্ড ঘটল বুঝতে পারছিলাম না।’’ ততক্ষণে ওই রাতে সেই বাড়িতে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে যান।

বাসিন্দারা এলাকার ভিলেজ পুলিশকে খবর দেন। সেখান থেকে খবর যায় স্থানীয় রাধানগর পুলিশ ফাঁড়িতে। পুলিশ গিয়ে আহত দুই ভাই-বোনকে উদ্ধার করে রাধানগরের বিষ্ণুপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। ব্লক মেডিক্যাল অফিসার হিমাদ্রীকুমার ঘটক বলেন, ‘‘দু’জনকেই গুরুতর আহত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তার মধ্যে মাধবের আচরণ অসংলগ্ন ছিল।’’

অবস্থার অবনতি হওয়ায় দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে এ দিন সকালে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আঙ্গুরিদেবীকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল। বেলা ১১টায় রাস্তায় তাঁর মৃত্যু হয়। দেহ ফিরিয়ে আনা হয় বিষ্ণুপুরে। বিষ্ণুপুর থানা জানিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।

বিকেলে গ্রামে অঙ্গুরির দেহ নিয়ে যাওয়া হলে গ্রামবাসী ভিড় করেন। এলাকার বাসিন্দা রাধানগর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভুবন সমাদ্দার বলেন, ‘‘খুবই দুঃস্থ পরিবার। কালীদেবী লোকের বাড়িতে কাজ করেন। আঙ্গুরি স্বামী-বিচ্ছিন্না। তাঁরও মাথায় সামান্য গোলমাল ছিল। ওদের বাড়িতে মাঝে মধ্যে গোলমাল হতো। কিন্তু এমনটা ঘটবে কেউ ভাবতে পারিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE