Advertisement
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

মজুরি নিয়ে ক্ষোভ, বন্ধ চেকড্যাম তৈরি

সরকার নির্ধারিত হারে মজুরি না দেওয়ার অভিযোগ তুলে চেকড্যাম নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিলেন শ্রমিকরা। পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের বহড়া পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়া শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৫
Share: Save:

সরকার নির্ধারিত হারে মজুরি না দেওয়ার অভিযোগ তুলে চেকড্যাম নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিলেন শ্রমিকরা। পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের বহড়া পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। বুধবার থেকে এলাকার কয়েকটি গ্রামের শ্রমিকরা ওই কাজে যোগ দেননি। তাঁদের অভিযোগ, ইতিপূর্বে তাঁরা প্রশাসন ও শ্রম দফতরের দ্বারস্থ হয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কম মজুরি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাড়ার বিডিও সমীরণ বারিক বলেন, ‘‘সেচ দফতর ওই চেকড্যাম তৈরি করছে। শ্রম দফতরকে অভিযোগটি দেখতে বলা হয়েছে। কাজ বন্ধ হয়েছে বলে শুনলাম। সবাইকে ডেকে আলোচনায় বসা হবে।’’

পুরুলিয়া জেলায় খরা মোকাবিলায় প্রতিটি ব্লকেই চেকড্যাম তৈরির কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। চেকড্যাম নির্মাণের অর্থ দিচ্ছে সেচ দফতর। ছোট নদী, জোড়ের উপরেই বাঁধ দিয়ে এই জলাধার তৈরি করা হচ্ছে। পরে এই চেকড্যামের জল সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন চাষিরা।

পাড়া ব্লকের বহড়া পঞ্চায়েতের পড়াশিড়ি গ্রামের অদূরে স্থানীয় শালবাড়ি জোড়ের উপরে চেকড্যামটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় পড়াশিড়ি, হুদুলগোড়া, মণিপুরের মতো গ্রামগুলির বাসিন্দারা সেখানে কাজ করছেন। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সেখানে ঢালাইয়ের কাজ হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে নেপাল গোপ, হরলাল মুদি, নির্মল মুদি, বঙ্কিম রাজোয়াড়দের অভিযোগ, ‘‘দৈনিক ১৬৫ টাকা মজুরি দিচ্ছে ঠিকাদার। অথচ চেকড্যামের মতো নির্মাণ কাজে সরকার নির্ধারিত মজুরির হার হল ২৭৮ টাকা।” প্রসঙ্গত কাজের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় দৈনিক ৫০জন শ্রমিককে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজ দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের কথায়, ‘‘চারটি গ্রামের সমস্ত শ্রমিককে এক সাথে কাজ দেওয়া সম্ভব নয়, এটা বুঝেই আমরা পর্যায়ক্রমে কাজ করতে রাজি হয়েছি। কিন্তু দৈনিক ১১৩ টাকা কম মজুরি দেওয়া মানা সম্ভব নয়।” চেকড্যামের মতো প্রকল্পে নির্মাণ কাজে সরকার নির্ধারিত মজুরি যে ২৭৮ টাকা, তা মেনে নিয়েছেন শ্রম দফতরের এক আধিকারিকও।

এক সপ্তাহ আগে তাঁরা পাড়ার বিডিও এবং রঘুনাথপুরে সহকারী শ্রম মহাধ্যক্ষের কাছে লিখিত ভাবে কম মজুরি দেওয়ার অভিযোগ জানান। কিন্তু এখনও শ্রম দফতর বা প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, এই অভিযোগে তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁরা এ জন্য ‘চেকড্যাম নির্মাণ ঠিকশ্রমিক ইউনিয়ন’ গঠন করেন। ওই কমিটির কর্মকর্তা অনুপ মাহাতো, সুফল মুদি বলেন, ‘‘আমাদের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরিও দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে দরবার করেও লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও রঘুনাথপুরের সহকারী শ্রম মহাধ্যক্ষ সবুজকুমার ঢালি তাঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রশাসন জানাচ্ছে শ্রম দফতর বিষয়টি দেখবে। আর শ্রম দফতর বলছে, সমস্যা দেখার কথা প্রশাসনের। কেউই গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে তাঁদের অভিযোগ। কাজের দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজর বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই মজুরি দেওয়া হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’’ চেষ্টা করেও ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE